সীতারাম ইয়েচুরি এবং প্রকাশ কারাট।
তাঁর রাজনৈতিক লাইনে দল সায় দেয়নি। এমন বিপর্যয়ের মুখে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক পদে আর থাকতে চাননি সীতারাম ইয়েচুরি। পলিটব্যুরোর হস্তক্ষেপে আগামী পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত আরও আড়াই মাস তাঁকে পদে থাকতে হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন অঙ্ক কষা!
বিশাখাপত্তনমে মাত্র গত পার্টি কংগ্রেসেই দলের শীর্ষ পদে এসেছিলেন ইয়েচুরি। কিন্তু দলের নিয়ন্ত্রণ যে রয়ে গিয়েছে তাঁর পূর্বসূরি প্রকাশ কারাটের হাতেই, কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটাভুটিতে ফের তা স্পষ্ট। যুদ্ধজয়ের আনন্দ সঙ্গে নিয়েই এ বার ইয়েচুরির বিকল্প প্রতিষ্ঠার ঘুঁটি সাজাতে শুরু করে দিয়েছে কারাট শিবির। সিপিএম সূত্রের খবর, ইয়েচুরিকে সংসদীয় দলের নেতৃত্বে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে দলে কর্তৃত্ব আরও শক্ত করতে চাইছে তারা।
সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের হাতে মর্যাদা বন্ধক রেখে ইয়েচুরি যে শীর্ষ পদে থাকতে চাইছেন না, এই অসহায়তা বুঝে ফেলেই কারাট শিবির সম্ভাব্য সূত্র বার করেছে। ত্রিপুরা সিপিএমকে বলা হয়েছে, সে রাজ্য থেকে বিধানসভা ভোটে রাজ্যসভার সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্যকে প্রার্থী করার ভাবনা বিবেচনা করতে। জিতে এলে ঝর্ণাকে মন্ত্রীও করা যেতে পারে। তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসনে রাজ্যসভায় ফিরে যেতে পারবেন ইয়েচুরি। তখন আর কংগ্রেসের সমর্থন নেওয়ার বিভ্রাট থাকবে না! রাজ্যসভায় ফিরে ইয়েচুরি আবার সংসদীয় দলের হাল ধরবেন। আর হায়দরাবাদ পার্টি কংগ্রেস থেকে দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন কারাটের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ দিল্লি ও হায়দরাবাদের বাসিন্দা দুই পলিটব্যুরো সদস্যের মধ্যে কেউ।
আবার ইয়েচুরি যদি রাজ্যসভায় ফিরে যাওয়ার প্রস্তাবে রাজি না হন, তা হলে ওই দু’জনের কাউকে সংসদে পাঠানোর রাস্তা খোলা! অর্থাৎ দু’দিক থেকেই বাজি জিততে পারবেন কারাট। ঝর্ণাকে শেষ পর্যন্ত বিধানসভায় প্রার্থী করার ব্যাপারে আজ, মঙ্গলবারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির। প্রসঙ্গত, কলকাতার বৈঠক শেষেই আগরতলায় গিয়েছেন বৃন্দা কারাট।
এখন প্রশ্ন হল, ইয়েচুরি কি এই রফা-সূত্রে রাজি হবেন? তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, পার্টি কংগ্রেসে তিনি এক বার শেষ চেষ্টা চালাতে চান তাঁর বৃহত্তর জোটের লাইনে সওয়াল করার জন্য। ঝর্ণা বিধানসভায় গিয়ে সাংসদ-পদ ছে়ড়ে দিলেও রাজ্যসভার উপনির্বাচনের জন্য ৬ মাস সময় থাকবে। তত দিনে পার্টি কংগ্রেসের ছবি স্পষ্ট হয়ে যাবে। বাংলা থেকে তাঁকে রাজ্যসভায় তৃতীয় বার প্রার্থী করার প্রস্তাব কারাটেরা খারিজ করার সময়েই মানিক সরকার ইয়েচুরিকে ত্রিপুরা থেকে সাংসদ হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তখন ইয়েচুরি বলেছিলেন, তাঁর জন্য অন্য কোনও নির্বাচিত সাংসদ কেন মাঝপথে ইস্তফা দেবেন? কিন্তু ভিন্ন পরিস্থিতিতে সাংসদ থেকে মন্ত্রিসভায় পুনর্বাসনের সুযোগ থাকলে বিষয়টি অন্য মাত্রা পাচ্ছে।
দলের বিদায়ী কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘সিপিএম তো শুধু সাধারণ সম্পাদককে অপদস্থ করছে না! সাধারণ মানুষকেও বিভ্রান্ত করছে। এর পরে তো তা হলে বলতে হবে, কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ-১ সরকারকে সমর্থন দেওয়াও ভুল হয়েছিল! এই অবস্থায় ইয়েচুরি কী-ই বা করবেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy