—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল বলছে, মুখ্যসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজিকে ডেকে পাঠানো অসাংবিধানিক। অমিত শাহ-এর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রশ্নে কেন্দ্র চাইলে রাজ্যের আমলাদের ডেকে পাঠাতে পারে।
এই সংঘাতের মধ্যে সংবিধান বিশেষজ্ঞ থেকে প্রবীণ আইনজীবীরা বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্র অবশ্য রাজ্যের আমলাদের ডেকে আলোচনায় বসতে পারে। প্রয়োজনে রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশও জারি করতে পারে। কিন্তু সংবিধানের গণ্ডি কোথায় শেষ, আর রাজনীতির কোথায় শুরু, সেটাই আসল প্রশ্ন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ বলেন, “সংবিধানের ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যকে বাইরের আগ্রাসন ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ থেকে রক্ষা করা কেন্দ্রের দায়িত্ব। রাজ্য সরকার যাতে সংবিধান অনুযায়ী চলে, তা নিশ্চিত করাও কেন্দ্রের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। কেন্দ্র বলতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ তৈরি হয়েছে। তা থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে কেন্দ্র চাইলে রাজ্যের আমলাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেই পারে।”
আরও পড়ুন: ভারত মহাসাগরে মোতায়েন ১২০ যুদ্ধজাহাজ, জানালেন জেনারেল রাওয়ত
শুধুই কি আলোচনা? না কি নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে কেন্দ্রের? কাশ্যপের ব্যাখ্যা, “সংবিধানে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে ২৫৬ ও ২৫৭ অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে, দেশের আইন কার্যকর করতে কেন্দ্র রাজ্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিতেই পারে।” আইনজীবীদের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার ঘটনায় কেন্দ্র বলতেই পারে, ভারতীয় দণ্ডবিধি বা ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। বা যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়নি। আইনানুগ কাজ করার জন্য কেন্দ্র নির্দেশ দিতে পারে রাজ্য প্রশাসনকে।
আরও পড়ুন: ৬ সপ্তাহের জন্য লালুর জামিনের শুনানি স্থগিত ঝাড়খণ্ড আদালতে
সেই নির্দেশ মানা না হলে? কাশ্যপ বলেন, “সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র বলবে, রাজ্যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তখনই ৩৫৫ ও ৩৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদের মতো জরুরি বিধান আসবে।” ৩৫৬ নম্বর অনুচ্ছেদে রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির ক্ষমতা রয়েছে কেন্দ্রের। তার আগে ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ কাজে লাগিয়ে রাজ্যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ চলছে বলে হস্তক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্র।
কাশ্যপ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সংবিধানের ব্যবস্থা ও রাজনীতি আলাদা। কেন্দ্র রাজ্যকে কী ভাবে সাহায্য করবে, সংবিধানে তার কথা বলা হয়েছে। প্রবীণ আইনজীবী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র বিশ্বজিৎ দেবের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ তৈরি হয়েছে তা কোনও ভাবেই বলা যায় না। মণিপুর বা উত্তর-পূর্বের রাজ্যে অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সমস্যার সমাধানে কেন্দ্রকে সেনার জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইন বা আফস্পা তৈরি করতে হয়েছিল।
আইনজীবীরা বলছেন, সাম্প্রতিক অতীতে ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাজ্যের থেকে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কী হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেন্দ্রের প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, “সংবিধানে ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদে ক্ষমতা রয়েছে ঠিকই। কিন্তু আমার মতে, আরও ভাল হত যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতেন। এ ভাবে মুখ্যসচিব বা ডিজি-কে ডেকে পাঠানো ভাল প্রবণতা নয়। এটা দিল্লি বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নয় যে অনেক ক্ষমতাই কেন্দ্রের হাতে। কেন্দ্র এখানে পূর্ণ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাজ্যের সঙ্গে কাজ করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy