(বাঁ দিকে উপরে) মানিকচকে গুলিবিদ্ধ মন্টু ঘোষ। (বাঁ দিকে নীচে) ইংরেজবাজারে গুলিতে আহত মলয় সরকার ভর্তি হাসপাতালে। (ডান দিকে) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানিকচকে গুলিকাণ্ডে আহত বিশ্বজিৎ মালাকার। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
ভোটের আগে পরপর নানা গোলমালে উত্তপ্ত ছিল মালদহ। ভোট মেটার পরে আবার শুরু হয়েছে সেই গণ্ডগোল। গুলিও চলেছে।
তবে এ বার ঘটনাস্থল মানিকচক এবং ইংরেজবাজার। শনিবার রাতে জেলার দুই প্রান্তে পৃথক দুটি ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মোট তিন জন। আহত হয়েছেন আরও এক যুবক। সকলেই চিকিৎসাধীন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। জেলাতে গত দুদিনে লাগাতার গুলি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য জেলাতে একের পর এক গুলি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটছে। রাতে পুলিশের পর্যাপ্ত টহলদারির অভাবে বাড়ছে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য।
যদিও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মানিকচকের ডোমহাটে পুরোনো বিবাদকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মন্টু ঘোষ এবং বিশ্বজিৎ মালাকার। তাঁদের বাড়ি ওই ডোমহাট এলাকাতেই। গ্রামে মন্টুর দর্জি এবং বিশ্বজিতের পানের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া ইংরেজবাজারের সাট্টারির ঘটনায় গুলিতে আহত হয়েছেন মলয় সরকার। আহত হয়েছেন তাঁর ভাগ্নে মিঠু সরকারও। মিঠুকে হাঁসুয়া দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। তাঁদের মে়ডিক্যালে চিকিৎসা চলছে।
মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রতিটি ঘটনায় অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইংরেজবাজারের সাট্টারি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রবিবার তাকে পেশ করা হয়েছে মালদহ জেলা আদলতে। সব ক’টি ঘটনারই অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গত শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ কালিয়াচকের পুরাতন ১৬ মাইলে খাস জমি দখলকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতীদের গুলিতে জখম হয় দশম শ্রেণির পড়ুয়া সিরাজউদ্দৌল্লা শেখ। গ্রামে বোমাবাজিও হয় বলে অভিযোগ। তাঁর বাবা ইব্রাহিম শেখের সঙ্গে জমি নিয়ে বিবাদ ছিল স্থানীয় একবার শেখদের। এর জেরেই সিরাজউদ্দৌল্লার উপরে হামলা বলে দাবি ইব্রাহিমবাবুর। সিরাজউদ্দৌল্লা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এই ঘটনায় এখনও গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত একবার শেখ। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ওই দিনই রাতে জেলার মানিকচকের ডোমহাট এবং ইংরেজবাজারে সাট্টারিতে চলছে গুলি, বোমা।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ মানিকচকের জোমহাটে বাড়ি বাইরে ভুটভুটিতে বসে ছিলেন দুই বন্ধু মন্টুবাবু এবং বিশ্বজিৎবাবু। সেই সময় মিঠুন মন্ডলের নেতৃত্বে চার জনের একটি দল তাঁদের উপরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। বিশ্বজিৎ ও মন্টুকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হলে দুই জনেরই বুকের মাঝে গুলি করা হয়। গুলির শব্দে স্থানীয়েরা ছুটে গেলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায়। তারপরে আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে মালদহে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকেরা। বছর খানেক আগে মিঠুনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এর জন্য বিশ্বজিৎকে দায়ী করে একাধিক বার তাঁদের মধ্যে বচসা হয়েছে। তার জেরেই এদিন এই হামলা বলে দাবি বিশ্বজিৎ মালাকারের। তাঁদের পরিবারের তরফে মানিকচক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অপর দিকে, ওই দিনই রাত দশটা নাগাদ ইংরেজবাজারের সাট্টারি ব্রিজের কাছে গরমের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন মলয়বাবু এবং তাঁর ভাগ্নে মিঠুবাবু। তাঁদের বাড়ি সাট্টারির হেলু পাড়া গ্রামে। মামা ভাগ্নে দুজনই শ্রমিকের কাজ করেন। এদিন রাতে বাড়ি থেকে ৫০ মিটার দূরে ব্রিজের উপরে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই সময় তিনটি মোটর বাইকে করে সাত দুষ্কৃতী গিয়ে মলয়বাবুকে মারধর শুরু করে। প্রতিবাদ করতে গেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয় মিঠুকেও। চিৎকার করলে পড়শিরা ছুটে আসে। সেই সময় মলয়বাবুর উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হলে, গুলি ছুঁয়ে বেড়িয়ে যায়। পরে এলাকায় দুটি বোমা ফাটিয়ে মোটরবাইকে করে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এখন তাঁরা মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন।
একই দিনে জেলার তিনটি ব্লকে গুলি, বোমাবাজির ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচ জন। গুলি, বোমার ব্যবহার জেলাতে ঘটে চলায় উদ্বিগ্ন জেলার মানুষ। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলার কোনও পরির্বতন হল না, জেলাতে গুলি, বোমাবাজির ঘটনায় সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হলেও নির্বিকার পুলিশ প্রশাসন। তাঁর দাবি, ‘‘রাতে নিয়মিত টহলদারিও হয় না। এমনকী, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতেও ব্যর্থ পুলিশ। জেলায় শান্তি শৃঙ্খলার দাবিতে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হব আমরা।’’
যদিও পুলিশের পাশেই দাঁড়িয়েছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইংরেজবাজারের সাট্টারি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র সমেত দীপক বসাক নামে এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার প্রসূনবাবু বলেন, ‘‘রাতে আমাদের টহলদারি চলেই। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy