Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bengal Primary Recruitment Case

এক রোল নম্বরে একাধিক ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন, বদলে ফেলা হয় টেট পোর্টালের অ্যালগরিদমও: সিবিআই

প্রাথমিক নিয়োগ মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা টেট পাশ করেছিলেন তাঁদের জন্য একটি বিশেষ পোর্টাল তৈরি করা হয়। অযোগ্য প্রার্থীদের আড়াল করার জন্যই এমনটা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

—প্রতীকী ছবি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:৪৮
Share: Save:

শুধুমাত্র ওএমআর শিটের নকশাতেই ষড়যন্ত্রের জাল ছড়িয়ে নেই, তা বিস্তৃত রয়েছে বহু দূর পর্যন্ত। দুর্নীতি চলেছিল ওএমআরের ডেটাবেস নিয়েও। ওয়েবসাইটের পোর্টালের অ্যালগরিদমে কারচুপি করে রীতিমতো খিড়কিদরজা দিয়ে চাকরি পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল অযোগ্য প্রার্থীদের। প্রাথমিকে নিয়োগ মামলার চার্জশিটে এমনই অভিযোগ তুলল সিবিআই। চক্রান্ত করে অযোগ্য প্রার্থীদের আড়াল করার চেষ্টা করার জন্যই এমনটা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার।

প্রাথমিক নিয়োগ মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের পর্যবেক্ষণ, যাঁরা টেট পাশ করেছিলেন তাঁদের জন্য একটি বিশেষ পোর্টাল তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী ধাপে পৌঁছনোর জন্য যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের সেই পোর্টালে নাম নথিভুক্তিকরণ (রেজিস্ট্রেশন)-এর নির্দেশ দেওয়া হয়। রেজিস্ট্রেশনের পরেই ইন্টারভিউয়ের ডাক পেতেন চাকরিপ্রার্থীরা।

চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, কোনও রকম বৈধ চুক্তিপত্র ছাড়াই মুম্বই এবং কলকাতা-ভিত্তিক সংস্থা রানটাইম প্রাইভেট সলিউশনকে ওই পোর্টাল বানানোর দায়িত্ব দেয় ওএমআর শিট প্রস্তুতকারী সংস্থা এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি।

প্রাথমিকের মামলায় এর আগে এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির কর্তা কৌশিক মাজিকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ওএমআর স্ক্যানিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। চার্জশিটে সিবিআইয়ের দাবি, অন্য সংস্থাকে পোর্টাল বানানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও, সেই পোর্টালে চাকরিপ্রার্থীদের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি দেখার সুযোগ পেতেন কৌশিক। যা নিয়ম-বহির্ভূত। সিবিআইয়ের অভিযোগ, কৌশিক শুধু সেই নথি দেখতেন না, নথিতে বদলও ঘটাতেন। অভিযোগ, কৌশিক পোর্টালে থাকা যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের রোল নম্বরের ভিত্তিতে একাধিক রেজিস্ট্রেশন করানোর ব্যবস্থা করতেন। ফলে যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের রোল নম্বরের সাহায্যে অনেক অযোগ্য প্রার্থীও ওই পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন করতে পারতেন। কেউ টেট পাশ করা সত্ত্বেও যদি ওই পোর্টালে নথিভুক্তিকরণ না করতেন, তা হলে তাঁর রোল নম্বরও ভুয়ো রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যবহার করা হত। এই একই রোল নম্বরে একাধিক রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য পোর্টালের অ্যালগরিদম কোডে বদল ঘটানো হয়েছিল বলেও দাবি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার। অর্থাৎ, প্রযুক্তিগত দিক থেকেও রীতিমতো আটঘাট বেঁধে দুর্নীতি করা হয়েছিল বলে চার্জশিটে অভিযোগ করেছে সিবিআই। তবে কেন এই ভাবে এক রোল নম্বরে একাধিক রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। খতিয়ে দেখা হচ্ছে পর্ষদের আধিকারিকদের ভূমিকাও।

চার্জশিটে সিবিআই এ-ও দাবি করেছে যে, প্রাথমিকে নিয়োগের যে ওএমআর শিট তৈরি করা হয়েছিল তাতে চাকরিপ্রার্থীর রোল নম্বর, জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, বুকলেট কোড, নির্দেশের মাধ্যম এবং ওএমআর শিটের নম্বর রয়েছে। কিন্তু আসল তথ্যই নেই! সিবিআই জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীর নাম, বাবা অথবা অভিভাবকের নাম, জন্ম তারিখের মতো কিছু তথ্য, যা পরীক্ষার্থীকে চিহ্নিত করার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়, সেগুলি ইচ্ছা করেই ওএমআর শিটে রাখা হয়নি। আসলে অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের আড়াল করতেই ওই কৌশল অবলম্বন করা হয়েছিল, দাবি কেন্দ্রীয় সংস্থার।

২০১২ সালের টেটে যাঁরা অকৃতকার্য হয়েছিলেন, ২০১৪ সালের টেটে তাঁরাও বসেছিলেন। এই প্রার্থীদের যাবতীয় তথ্য-সহ প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ন্যাশানাল ইনফরমেটিক সেন্টার (এনআইসি)-এর মাধ্যমে। সেই তথ্য পর্ষদকে পাঠানো হয়েছিল। পর্ষদ তা তুলে দেয় এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানির হাতে। ওই সংস্থাকেই টেট আয়োজন এবং ফলাফল প্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের অভিযোগ, বর্তমানে পর্ষদ বা ওই সংস্থা— কারও কাছেই প্রার্থীদের তথ্য নেই। ফলে প্রার্থীদের শনাক্ত করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে চার্জশিটে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানিকে টেটের মতো পরীক্ষা আয়োজনের জন্য অযোগ্য বলে দাবি করেছে সিবিআই। অভিযোগ, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সস্তায় এই সংস্থাকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিজ্ঞ সংস্থাগুলিকে দায়িত্ব দেয়নি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy