এক দল যাবে পোলো ময়দানে, এক দল কাল্লায়।
কিন্তু ওঁরা কী করেন? ওঁরা যে বিয়েতেও আছেন, বৌভাতেও! ওঁদের যে ছুটতেই হবে দু’জায়গায়।
আসানসোলে এসে নরেন্দ্র মোদী সভা করবেন, তাই পোলো ময়দান ভরাতে মরিয়া বিজেপি। মওকা বুঝে তৃণমূল গা-ছাড়া দিয়ে বসে আছে। তাদের অন্য ‘কর্মসূচি’— তা হল, ওই সভার ঘণ্টা দেড়েক বাদে খানিক দূরে কাল্লায় মুখ্যমন্ত্র্রীর একার অনুষ্ঠানে ভিড় জমানো।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যদি পোলো ময়দানে গিয়ে হাজির হন? গৃহকর্ত্রীর মতো আগলাতে থাকেন অতিথিকে? সাধারণ তৃণমূল কর্মীরা না হয় কাল্লায় গিয়ে হল্লা করতে লাগলেন, জেলা নেতারা কী করবেন? প্রথমে তো তাঁদের নেত্রীর পিছু-পিছু গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর হাসি-হাসি মুখ দেখতেই হবে। রাজ্যে বিজেপির একক শক্তিতে জেতা এক মাত্র লোকসভা আসন আসানসোলে বসে মোদী-বচন শোনা তাঁদের পক্ষে যতই কুইনাইন গেলার মতো হোক, উপায় নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় কাল্লার দিকে রওনা দিলে আবার পড়িমড়ি করে সেই দিকে ছুট।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারাই বা করেন কী? মুখ্যমন্ত্রীর দিকে নজর দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর দিকেও নজর দেওয়া চাই। তাঁদের তো ইস্কো টু পোলো টু কাল্লা টু অন্ডাল ছুটোছুটি করতেই হবে। তা সে চল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসই হোক বা ধুলো ওড়ানো রাস্তা। এই তাঁদের চাকরি। উপায় কী?
সরকারি সফরসূচি অনুযায়ী, রবিবার কলকাতা থেকে কপ্টারে উড়ে এসে বেলা ১১টা নাগাদ পোলো মাঠে নামবেন মোদী ও মমতা। সেখান থেকে গাড়িতে বার্নপুর রোড ধরে তাঁরা ইস্কো কারখানায় আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাবেন। সেখান থেকে মোদী ফিরবেন পোলো মাঠের সভায়। মমতা কোথায় যাবেন তা প্রশাসনের তরফে এখনও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। ঘণ্টা দেড়েক বাদে আসানসোলেরই কাল্লায় কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করার কথা তাঁর। পোলো ময়দানের সভায় হাজিরা দিয়েও সেখানে পৌঁছনোর সময় তাঁর হাতে যথেষ্টই থাকবে। অর্থাৎ, মমতা যদি মোদীর সভা এড়িয়ে যেতে না চান, তবে তাঁর পোলো ময়দানের মঞ্চে ওঠার সম্ভাবনা থাকছেই।
অতএব তৃণমূল এবং প্রশাসনের কর্তাদের ঘোড়দৌড় প্রায় অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে।
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন সোজাসুজিই বলে দেন, ‘‘দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। তাই দু’জায়গাতেই আমরা থাকব। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান শেষেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছুটতে হবে।’’ একই কথা আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাসেরও। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দু’টি অনুষ্ঠান। একটি ইস্কো কারখানায়, অন্যটি পোলো মাঠে। নিরাপত্তার পুরো দায়িত্ব আমাদের উপরে। তার পরে কাল্লায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান। সেখানেও নিরাপত্তার দায়িত্ব। একই শহরে এমন দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও দু’টি পৃথক সভা সাম্প্রতিক অতীতে কোথাও হয়েছে বলে মনে পড়ছে না।’’
তৃণমূল নেতারা আবার পড়েছেন শাঁখের করাতে। শুধু বিজেপির লোক নয়, দল নির্বিশেষে বহু সাধারণ মানুষ যে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে পোলো মাঠে ভিড় জমাবেন, তা তাঁরা আন্দাজ করতে পারছেন। কিন্তু নেত্রীর মনের কথাটি কী, তা আন্দাজ করতে পারছেন না। কাল্লা-কাল্লা-কাল্লা জপে গেলে বিপদ নেই, সকলেই জানেন। কিন্তু পোলোর কথা তোলা ঠিক হবে কি না, আবার না তুললেও সব গড়বড় হয়ে যাবে কি না, অনেকেই তা বুঝে উঠতে পারছেন না। সকলেই তাই দিদির নামে দোহাই দিয়ে তাঁরা দুই জরজাই খোলা রাখছেন।
তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন যেমন বলেন, ‘‘কাল্লায় মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে দলীয় সদস্য-সমর্থকের সঙ্গে থাকব।’’ পোলো মাঠে যাবেন না? শুনেই নেতা ঈষৎ সাবধানী— ‘‘এ ব্যাপারে নেত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি।’’ আসানসোল দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইস্কোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়েছি। যাব-ও। কাল্লা মাঠেও অবশ্যই যাব।’’ আর পোলো মাঠে? ‘‘মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকলে প্রোটকল মেনে যাব, না হলে যাব না।’’— হাসি মুখে যাওয়া-আসার অঙ্ক মিলিয়ে দেন বিধায়ক।
কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় অবশ্য স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, মোদীর সভায় যাওয়ার কোনও ইচ্ছে তাঁর নেই। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্কোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাইনি। পেলেও যেতাম না। প্রকাশ্য সভায় যাওয়ারও প্রশ্ন নেই। কাল্লা মাঠে অবশ্যই যাব।’’ রানিগঞ্জের বিধায়ক সোহরাব আলি বলেন, ‘‘কাল্লা মাঠে অবশ্যই যাব। পোলো মাঠের সভায় মুখ্যমন্ত্রী গেলে যাব, নইলে নয়।’’ বারাবানির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের একই সুর— ‘‘কাল্লা মাঠে তো যাবই। পোলো মাঠের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় আছি।’’
মুশকিল হল, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত সেই ‘নির্দেশ’ এসে পৌঁছয়নি। কবে আসবে, তা-ও কেউ জানে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy