ফাইল চিত্র।
দিল্লি, মুম্বই, চণ্ডীগড় পারলেও কলকাতা পারল না।
প্রক্রিয়াগত জটিলতার জেরে রাজ্যের পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তর আবেদন শেষমেশ জমা পড়ল না সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালত এ বার দেওয়ালির দিল্লিতে সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করেছে বায়ুদূষণ ঠেকাতে। সেই নির্দেশ পশ্চিমবঙ্গ-সহ বাকি দেশেও যাতে কার্যকর হয়, সুভাষবাবু সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদন করবেন বলে জানান। আবেদনটি বুধবার জমা পড়ার কথা ছিল। কিন্তু তা জমা পড়েনি। পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আগেই জানিয়ে দিয়েছে, রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ, কিন্তু অন্য বাজিতে নিষেধাজ্ঞা নেই। এমনকী, নিয়ন্ত্রণ জারির ক্ষমতাও তাদের নেই। পর্ষদ আশা রাখছে সাধারণ মানুষের সদিচ্ছার উপরে।
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গকে ধরা দিতে নির্দেশ
গোড়ায় ক’দিন বাজি বিক্রি কম হলেও, বুধবার বাজির বাজার মেতে উঠেছিল চেনা ছন্দেই। সব রকম বাজির ব্যবহার থেকে বিরত থাকা তো দূরস্থান, এ দিন সন্ধ্যায় নিষিদ্ধ শব্দবাজির গর্জনও ইতিউতি শোনা গিয়েছে। চকলেট, দোদোমার মতো মামুলি শব্দবাজি থেকে শুরু করে সেল, শটসের মতো আলোর আড়ালে থাকা শব্দদানব— শহর কাঁপিয়েছে সবই।
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র অবশ্য হাল ছাড়তে রাজি নন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বহু মানুষই এই প্রথম বার কোনও ধরনের বাজি পোড়াবেন না। তাঁরা বাজি পোড়ানোর কুফল সম্পর্কে আমাদের প্রচারে সচেতন হয়েছেন।’’ প্রসঙ্গত, রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সোমবার জানান, দীপাবলিতে বাজি পোড়ানো একটা পরম্পরা, তাই সব বাজি তাঁরা নিষিদ্ধ করছেন না। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার জন্য অবশ্য সল্টলেক স্টেডিয়াম ও তার পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকায় যে কোনও বাজি পোড়ানোর উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে পর্ষদ।
কিন্তু যে বাজি নিষিদ্ধ, গত কয়েক বছরে সেই শব্দবাজি তেমন দমন করা যায়নি। পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘বরাবর বলছি, দীপাবলির চার মাস আগে শব্দবাজির আঁতুড়ে হানা দিতে হবে। তা করা গেল না কেন?’’ এ বার পর্ষদের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের একাধিক কর্তা জানান, ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা’ থাকলে শব্দবাজি দমন করতে তাঁদের ২৪ ঘণ্টা লাগবে।
তবে ভঙ্গুর উইকেটে রাজনীতির ঘূর্ণিবলের প্রবল চাপ সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে পুলিশের একাংশ এখনও পর্যন্ত ক্রিজ আঁকড়ে থাকার সাহস দেখাচ্ছেন। এ দিন দক্ষিণ কলকাতার দু’জায়গায় বিপুল শব্দবাজি আটক করে পুলিশ। ‘প্রভাবশালী’ মহল থেকে একাধিক বার ফোন গেলেও বাজেয়াপ্ত জিনিস ছাড়া তো দূরের কথা, পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করেছে।
বাজি ব্যবসায়ীদের একটা অংশ কিন্তু নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে জোর প্রচারে নেমেছেন। টালা বাজি বাজারের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বলেন, ‘‘পাড়ায় পাড়ায় অটোয় চড়ে মাইকে প্রচার করা হচ্ছে শব্দবাজির বিরুদ্ধে। কলকাতা পুলিশের লিফলেটে নিষিদ্ধ বাজির তালিকা আছে। সেই লিফলেট আমরা বিলি করছি।’’
শব্দবাজি ঠেকাতে
সবুজ মঞ্চ-র কন্ট্রোল রুম
বৃহস্পতি ও শুক্রবার
বিকেল ৫টা থেকে সারা রাত
৯৮৩১৩-১৮২৬৫
৯২৩০৫-৬৮৯০২
এ বার দীপাবলিতে নিষিদ্ধ বাজির বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ ৭ অক্টোবর অভিযান শুরু করেছে। লালবাজারের দাবি, এ পর্যন্ত নিষিদ্ধ বাজি আটক হয়েছে আট টনেরও বেশি। তবে সবই শব্দবাজি নয়। বিনা লাইসেন্সে যে সব বাজি বিক্রি হচ্ছিল, তা-ও আছে। অর্থাৎ, নিষিদ্ধ হয়েছে আলোর বাজিও।
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রর কথায়, ‘‘যে বাজিতে যত রং, তাতে তত বিষ। বাজি পোড়ানোর সময়ে এটা মাথায় রাখুন।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘বাজির আলো দৃষ্টিনন্দন। কিন্তু বাতাস বিষিয়ে গিয়ে তা-ই আমাদের নিরানন্দের কারণ হচ্ছে।’’ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বাজি মাত্রেই ক্ষতিকর। বায়ুদূষণ ছাড়াও বাজির রাসায়নিক ত্বক ও পাকস্থলীর ক্ষতি করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy