প্রতীকী ছবি।
নদীমাতৃক বাংলায় জলের হাহাকার এখনও নেই ঠিকই। কিন্তু যা আছে, সেই জল কি সত্যিই জীবনের সমার্থক? নাকি মানুষের অপব্যবহারে জীবনস্বরূপ জল হয়ে উঠছে মরণের হাতিয়ার বা সাক্ষাৎ মরণ?
পশ্চিমবঙ্গের জলচিত্র দেখে এই প্রশ্নই তুলছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, পশ্চিমবঙ্গে নদনদীর জল ক্রমশ দূষণে জর্জরিত হচ্ছে। ভূগর্ভের জলেও বিষাক্ত রাসায়নিক বা়ড়ছে। সেই জল শরীরে তো ঢুকছেই, চাষে ব্যবহারের ফলে ঢুকছে খাদ্যশৃঙ্খলেও। ফলে যে-এলাকার জল বিষাক্ত, তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে এই বিষ।
‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ হিসেব প্রকাশ করে সম্প্রতি জানিয়েছে, গোটা বিশ্বের নিরিখে পরিস্রুত জল থেকে বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ভারতেই সব চেয়ে বেশি। জলের জোগানে ইথিয়োপিয়া, নাইজিরিয়ার মতো দেশেরও পিছনে রয়েছে ভারত! পরিবেশবিদদের একাংশের মতে, এ রাজ্যেও বহু মানুষ পরিস্রুত জল থেকে বঞ্চিত। যে-হারে নদী-দূষণ, ভূগর্ভের জলের অপব্যবহার বাড়ছে, তাতে সমস্যা ঘোরালো হবে বলেই আশঙ্কা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের প্রধান তড়িৎ রায়চৌধুরী বলছেন, রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলে মূলত আর্সেনিক এবং ফ্লুয়োরাইডের বা়ড়বাড়ন্ত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যে ১১৭টি ব্লকের ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার একাংশেও আর্সেনিকের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের জলে ফ্লুয়োরাইড রয়েছে। নির্বিচারে জল তোলার ফলে সব জেলাতেই জলস্তর নেমে যাচ্ছে দ্রুত হারে।
জল-আতঙ্ক • আর্সেনিকে আক্রান্ত∗ ১১৭টি ব্লক • ফ্লুয়োরাইডে আক্রান্ত∗ বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ • গঙ্গার জল ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ায় ভরা • রোগের আশঙ্কা আর্সেনিকোসিস, ফ্লুরোসিস, আন্ত্রিক, টাইফ়য়েড সূত্র: ∗যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
কেন্দ্রীয় ভূ-জল পর্ষদের তথ্য বলছে, কিছু কিছু এলাকায় ভূগর্ভের জলে ক্যাডমিয়াম, সিসা, ক্রোমিয়াম পাওয়া গিয়েছে। ‘‘রাজ্যের সুন্দরবন-সহ উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততাও পানীয় জলের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা,’’ বলছেন পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য শ্যামাপ্রসাদ সিংহরায়।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য দেখাচ্ছে, গঙ্গায় ফিক্যাল কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি। এই ব্যাক্টিরিয়া মূলত মানুষ ও পশুর মল থেকে আসে। এই ব্যাক্টিরিয়া থাকার অর্থ, জলবাহিত রোগের ব্যাক্টিরিয়ার সংখ্যাও বেশি। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এ রাজ্যে পরিস্রুত জল ক’জন পান?
শহুরে এলাকায় সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে পরিস্রুত জল দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ গ্রামীণ এলাকায় ভূগর্ভের জলই এখনও বাসিন্দাদের ভরসা বলে জানান পরিবেশকর্মীরা। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, গ্রামীণ এলাকার ৫৮ শতাংশের বেশি মানুষকে মাথাপিছু প্রতিদিন ৭০ লিটার পরিস্রুত জল দেওয়া হচ্ছে। ফলে পরিস্রুত জলের সঙ্কটের অভিযোগ ঠিক নয়।
পরিবেশকর্মীদের প্রশ্ন, নির্বিচারে পাম্প বসিয়ে সেচে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভের জল। তাতে জলস্তরের ক্ষতি হচ্ছে, নতুন নতুন জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে আর্সেনিক। তা খাদ্যশৃঙ্খলে ছড়াচ্ছে। খড়, ধানের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ছে বৃহত্তর এলাকায়। ‘‘পাম্পের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা চলছে। চাষের জলে যাতে ঘাটতি না-হয়, তার জন্য গ্রামাঞ্চলের মাঠে প্রচুর সেচখাল কাটা হয়েছে,’’ বলেন জলসম্পদ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy