শুভেন্দুর সভার আগে হলদিয়ায় পোস্টার-পাল্টা পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র।
আগে বলতেন, ‘ভাইপো চোর’। ইদানীং তাঁর মুখে শোনা যাচ্ছে, ‘মমতা চোর’। শুক্রবার হলদিয়ার সভা থেকেও মুখ্যমন্ত্রীকে সেই সুরেই আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে স্লোগান তুললেন, ‘হীরকরানি খানখান’। ঘটনাচক্রে, এ দিন হলদিয়াতেই দেখা গেল পাল্টা পোস্টার, যেখানে বলা হয়েছে, ‘শুভেন্দু ডাকাত’। সম্প্রতি ‘চোর চোর’ বলে আওয়াজ, পাল্টা আওয়াজে সরগরম হয়েছে বিধানসভা চত্বর। এ বারে সেই তরজা পূর্ব মেদিনীপুরেও পৌঁছে গেল ‘চোর-ডাকাত’ হয়ে।
তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সর্বাধিনায়ক সতীশ সামন্তের জন্মদিনে আয়োজিত সভার মধ্যেও কেন এমন কুকথার বাণ আর ব্যক্তি আক্রমণ, প্রশ্ন উঠেছে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীর জেলায়।
হলদিয়ায় এ দিন শুভেন্দুর সভা হবে, আগে থেকেই ঠিক ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে, শুভেন্দুর সভাস্থলের অদূরে ‘শুভেন্দু ডাকাত’ লেখা পোস্টার পড়ে। শুক্রবার সকালে তার একটু দূরে ‘মমতা চোর’ লেখা পাল্টা পোস্টারও দেখা যায়। পরে সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘‘বালু (জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক) চুরি করেছে কি না, তিনি জানেন না। ভাইপো কয়লা, বালি চুরি করেছে কি না, তা-ও জানেন না। কেষ্ট চুরি করেছে, পরে জেনেছেন। পার্থ চাকরিগুলো সব বেচে দিয়েছে, সেটাও পরে জেনেছেন।আসল চোর মমতা।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সতীশ সামন্তের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে অঙ্গীকার করতে হবে, চোরমুক্ত বাংলা গড়ব।’’
মঞ্চটি এমন তরজার জন্য সঠিক কি না, সেই প্রশ্ন তো উঠেইছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্প্রতি চোর স্লোগান যেন বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে তৃণমূল নেতানেত্রীদের নাম করে চোর স্লোগান দিয়েছেন বিজেপি নেতারা। যাঁদের লক্ষ্য করে এই স্লোগান দেওয়া হয়েছে, তাঁদের কেউ কেউ আবার এখন গেরুয়া দলেই। সম্প্রতি বিধানসভায় শুভেন্দু-সহ বিজেপি বিধায়কেরা ‘চোর মমতা’ লেখা টি-শার্ট পরে তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
রাজ্যে কু-কথার স্রোত আগেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে দুই যুযুধান দল চোর ও ডাকাত বিশেষণ ব্যবহার করছেন— এমন ঘটনা বিরল বলেই মনে করছেন রাজনীতির পুরনো লোকজনেরা।
সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির দাবি, ‘‘এটা তৃণমূল আর বিজেপির বোঝাপড়া। সাধারণ মানুষ যাতে ওদের আঁতাঁত বুঝতে না পারে, তাই ওরা পরস্পরকে গালিগালাজ করে।’’ তবে কাঁথির প্রাক্তন বিধায়ক, কংগ্রেসের প্রবীণ সদস্য শৈলজা দাসের মতে, ‘‘এখন রাজনীতির ভাষা যেখানে, পৌঁছেছে তা মানুষকে পীড়া দেয়।’’
সম্প্রতি রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর প্রতি কু-কথা বলার। অখিল অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘রাজনীতিতে সমালোচনা হবেই। তবে সকলেরই উচিত অন্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভাষা প্রয়োগ করা।’’ একই সুরে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষও বলেন, ‘‘এ সব একেবারেই কাম্য নয়।’’
প্রবীণ সাংসদ তথা শুভেন্দুর বাবা শিশির অধিকারী দীর্ঘদিনের রাজনীতিক। তিনি বলেন, ‘‘আমরা যে সময় রাজনীতি শুরু করি, তখন এ ধরনের কদর্য ভাষা ছিল না। আসলে দিন দিন রাজনীতিতে তাঁরাই আসছেন, যাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা কম।’’ তবে চোর-ডাকাত তরজায় তিনি ছেলের পক্ষই নিয়েছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেউ যদি চুরি করে থাকে, তাকে লোকে চোর বলবে। কিন্তু তার পাল্টা কাউকে অকারণ ডাকাত সাজিয়ে দেওয়াটা নিম্নরুচির।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy