Advertisement
E-Paper

পাঁচ মাস, চার সমন, জোড়া হাজিরা, জোড়া প্রত্যাখ্যান, দাঁড়িপাল্লায় ভারসাম্য রেখে দিল্লির লড়াইয়ে অভিষেক

গত ১৩ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে না গিয়ে জেরার মুখোমুখি হয়েছিলেন অভিষেক। যার ফলে ‘ইন্ডিয়া’র বাকি দলগুলিকে পাশে পেয়েছিলেন তিনি। এ বার দিল্লিতে থেকেই হাজিরা প্রত্যাখ্যান করলেন অভিষেক।

Abhishek Banerjee

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৫৮
Share
Save

মে থেকে সেপ্টেম্বর— গত পাঁচ মাসে চার বার কেন্দ্রীয় এজেন্সি সমন পাঠিয়েছে তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দু’বার তিনি হাজিরা দিয়েছেন। দু’বার দেননি (তার মধ্যে মঙ্গলবারের প্রত্যাখ্যানও ধরে নিতে হবে। যা নিয়ে মঙ্গলবারেই তিনি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছেন)। হাজিরা দেওয়া-না দেওয়ার দাঁড়িপাল্লার কাঁটা সমান রেখেই মঙ্গলবারের বারবেলায় দিল্লিতে তিনি। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার সমনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে।

অনেকেই বলছেন, এই যাওয়া-না যাওয়ার মধ্যে সুচিন্তিত রাজনৈতিক নকশা রয়েছে। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে থেকেই তৃণমূলের সংগঠন যে ভাবে চলছিল, ভোটের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিষেককে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে নিয়ে আসার পর সেই নকশা ক্রমশ সুস্পষ্ট হয়েছে। এই মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাকে অভিষেকের যাওয়া এবং না যাওয়ার মধ্যে দু’টি ‘বার্তা’ রয়েছে। এক, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে তিনি তদন্তে সহযোগিতা করছেন। দুই, তিনি রাজনৈতিক নেতা। ‘জেনেবুঝে’ তদন্তকারী সংস্থা যদি বার বার কর্মসূচির দিনই ডাকাডাকি করে, তা হলে তিনি তাঁদের কথায় বারংবার উঠবেন-বসবেন না।

নবজোয়ার যাত্রায় বাঁকুড়ায় থাকাকালীন ১৯ মে অভিষেককে সমন পাঠায় সিবিআই। তাতে বলা হয়, ২০ মে নিজাম প্যালেসে হাজিরা দিতে হবে। কর্মসূচি থামিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন অভিষেক। পর দিন নিজাম প্যালেসে তাঁকে ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে অভিষেকের যে কর্মসূচিতে বক্তৃতা করার কথা ছিল, সেখানে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন মমতা। শাসক শিবিরের মতে, সে দিন তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে দু’টি বিষয় তুলে ধরতে পেরেছিল। প্রথমত, অভিষেক জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে ভয় পান না। দ্বিতীয়ত, তাঁকে নিজাম প্যালেসে জেরা করে তৃণমূলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করা গেল না। অভিষেক না থাকলেও মমতা সেই ভার নিলেন।

সেই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের নির্যাস শূন্য। ওদেরও সময় নষ্ট। আমারও তাই।’’

জুন মাসের ৮ তারিখ যখন অভিষেকের ‘নবজোয়ার’ নদিয়ায়, তখন ফের তাঁকে সমন পাঠায় ইডি। কিন্তু মে মাসের মতো জুনে কর্মসূচি থামিয়ে কলকাতায় ফেরেননি তিনি। নদিয়া থেকেই অভিষেক জানিয়ে দেন, ১৩ জুন তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে যাবেন না। তাঁর স্পষ্ট কথা ছিল, ‘‘নষ্ট করার মতো সময় আমার হাতে নেই। আমি কি চাকর নাকি যে, ডাকলেই যেতে হবে?’’ তার আগেই পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করে দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। অভিষেক জানিয়ে দিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোট মেটার পর তাঁকে যদি ডাকা হয়, তিনি যাবেন। তার আগে নয়।

তার পর জুলাই, অগস্টে কোনও সমন পাননি তৃণমূলের ‘সেনাপতি’। সেপ্টেম্বরে ফের তাঁকে তলব করে ইডি। যে দিন দিল্লিতে শরদ পওয়ারের বাড়িতে ছিল বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠক। যে কমিটির অন্যতম সদস্য অভিষেক। দিল্লির সেই বৈঠকে না-গিয়ে অভিষেক সিজিও কমপ্লেক্সে জেরার মুখোমুখি হন। ‘ইন্ডিয়া’র বাকি দলগুলি বিবৃতি দিয়ে বলে, অভিষেককে বৈঠকের দিনেই তলব আসলে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘নিকৃষ্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’। ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকে অভিষেকের জন্য একটি চেয়ার খালি রেখে দেন অন্য নেতারা।

২০ মে সিবিআইয়ের জেরার মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, নির্যাস শূন্য। ১৩ সেপ্টেম্বর ইডির জেরার পরে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদের বক্তব্য ছিল, ‘‘আগের দিন বলেছিলাম শূন্য। আজ বলছি মাইনাস টু।’’ ফের তাঁকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তলব করে ৩ অক্টোবর। যে দিন বাংলার বকেয়া আদায়ে দিল্লিতে তৃণমূলের ঘোষিত কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন। এ বার অভিষেক যাননি। উল্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন, কেউ তাঁর দিল্লিযাত্রা আটকে দেখাক! তার পরেও কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেছেন তিনি। অর্থাৎ, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাকে দু’বার হাজিরা দিয়েছেন আর দু’বার প্রত্যাখ্যান করেছেন অভিষেক।

বিজেপি অবশ্য এই বিষয়টিকে ‘পরিণত রাজনীতি’ হিসাবে দেখতে নারাজ। রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা এ সব নিয়ে ভাবছি না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এমন কেউ নন, যাঁর জন্য এত ভেবে সময় নষ্ট করতে হবে। আমাদের ভাবনার একটাই জায়গা, আবার উনি যে দিন যাবেন সে দিন অনেক রাত পর্যন্ত সাংবাদিকদের অপেক্ষা করতে হবে!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শমীক লাহিড়ী বলেন, ‘‘অভিষেককে তলব, তাঁর হাজিরা দেওয়া বা না দেওয়া— এই সবই আসলে সাজানো চিত্রনাট্য। বিজেপির বড় নেতারা কখনওই চাইবেন না, তৃণমূলের বড় নেতাকে ধরা হোক।’’

তৃণমূল নেতা তথা বিধানসভার উপমুখ্যসচেতক তাপস রায় বলেন, ‘‘তদন্তে সহযোগিতা করছেন বলেই তো অভিষেক এক বার নবজোয়ার থামিয়ে, এক বার ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে যোগ না দিয়ে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কিন্তু যদি বার বার ঘোষিত কর্মসূচির দিনই তাঁকে ডাকা হয় তা হলে বুঝতে হবে, গোটাটাই পরিকল্পিত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’’

তৃণমূলের অনেকের মতে, গত পাঁচ মাসে চারটি সমনের জবাবে দাঁড়িপাল্লার কাঁটা সমান-সমান রেখে অভিষেক অনেকাংশে নিজের ‘রাজনৈতিক নির্মাণ’ করতে সফল হয়েছেন। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও তাঁর প্রভাব বেড়েছে। যেমন তিনি আস্থা অর্জন করেছেন দলের প্রবীণ নেতাদের একটি অংশের। যাঁদের অনেকেরই অভিষেক সম্পর্কে ‘ভিন্ন’ বক্তব্য ছিল। ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরাও স্বীকার করে নিচ্ছেন, অভিষেকের প্রতিটি পদক্ষেপে ‘পরিণতি’র ছাপ স্পষ্ট। ‘হিসাব কষে’ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাকে সাড়া দেওয়া এবং না-দেওয়াও সেই ‘পরিণত’ পরিকল্পনার কারণে।

Abhishek Banerjee ED TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।