গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আনিসুরকে। নিজস্ব চিত্র।
বারবার দলবদল, খুনের মতো মামলায় কারাবাসও বারবার।
পাঁশকুড়া পুর-শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, দাপুটে নেতা আনিসুর রহমানের সঙ্গে সব সময়ই জুড়ে রয়েছে বিতর্ক। ধর্ষণ, খুন-সহ একাধিক মামলায় কয়েক বছর ধরে তাঁর ঠিকানা জেল। তবে বন্দিদশাতেও দাপট যে কমেনি, মঙ্গলবার তার সাক্ষী হল তমলুক।
পাঁশকুড়ার বালিডাংরির বছর তেতাল্লিশের যুবক আনিসুর একটা সময় সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফে’র পাঁশকুড়া জ়োনাল সম্পাদক ছিলেন। বাম আমলে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পান। তবে স্কুলে না-গিয়েই বেতন নেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০০৬-এ বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে দল থেকে বহিষ্কৃত হন। যোগ দেন তৃণমূলে। ২০০৭-এ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় পুলিশের চোখ এড়িয়ে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোটরবাইকে তমলুক পৌঁছে দেওয়ার পরেই রাজনীতিতে উত্থান আনিসুরের। ক্রমে হয়ে ওঠেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ।
২০১১-তে রাজ্যে পালাবদলের পরে তৃণমূলের তদানীন্তন ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ মুকুল রায়েরও ঘনিষ্ঠ হন আনিসুর। পান পূর্ব মেদিনীপুর জেলা যুব তৃণমূল সভাপতির পদ। ২০১৩ সালে পাঁশকুড়ার কাউন্সিলরও হন। কিন্তু ২০১৪ সালে আনিসুরের বিকল্প হিসাবে পাঁশকুড়ার রাজনীতিতে উঠে আসেন মাইশোরার বাসিন্দা কুরবান শা। কুরবানই হয়ে ওঠেন ‘অধিকারী পরিবারে’র আস্থাভাজন। এর পরেই কোন্দলের সূত্রপাত। ২০১৬ সালে কুরবানকে মারধরের অভিযোগ ওঠে আনিসুরের বিরুদ্ধে। দল বিরোধী কাজের জন্য জেলার যুব তৃণমূলের পদ খোয়ান আনিসুর। ২০১৭ সালে পাঁশকুড়া পুরসভার নির্বাচনে দলীয় ‘হুইপ’ না-মেনে নিজেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় তাঁকে ছ’বছরের জন্য সাসপেন্ড করে তৃণমূল। ২০১৭-তে যোগ দেন বিজেপিতে।
বিজেপিতে যাওয়ার পরে দফায় দফায় জেলেই থেকেছেন আনিসুর। ২০১৮-র জানুয়ারিতে এক যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হন। ২০১৮-তে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুরবানকে মারধরের অভিযোগে ফের গ্রেফতার হন। কাঁথিতে অমিত শাহের সভায় গোলমালের ঘটনায় ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ফের আনিসুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছর মে মাসে ছাড়া পেলেও ৭ অক্টোবর মাইশোরায় তৃণমূল নেতা কুরবানকে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ফের ধরা পড়েন আনিসুর। তার পর থেকে তিনি জেলবন্দি। তবে এই পর্বে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে থাকাকালীন আনিসুরের বিরুদ্ধে এক কারারক্ষীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এর পরে মেদিনীপুর থেকে তমলুক সংশোধনাগারে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয় তমলুক আদালত। তমলুকের জেলে আসার কয়েক দিনের মধ্যে অসুস্থতার কারণে পাঠানো হয় তমলুক হাসপাতালে। মঙ্গলবার সেখান থেকে ‘পলায়ন’ এবং পরে ফের ‘শ্রীঘর যাত্রা’।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, আনিসুর এবং তাঁর বাহিনীকে বরাবরই ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। ক্ষমতার ভরকেন্দ্র বদলের সঙ্গে সঙ্গে আনিসুরও রাজনৈতিক ‘ছত্রচ্ছায়া’ বদলে গিয়েছেন। আগামী ভোটে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আনিসুরকে তৃণমূল ব্যবহার করতে চাইছে বলে রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন। আনিসুরের ফেসবুক প্রোফাইলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি থেকে শুরু করে গত কয়েক মাসের নানা বার্তায় ইঙ্গিতও মিলেছে যে তিনি তৃণমূলে ফিরতে চান বা চলেছেন। যদিও তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলছেন, ‘‘আনিসুর ছাড়া পাওয়ার পরে কোন দল করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার।’’ বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সাদ্দাম হোসেন বলছেন, ‘‘আনিসুর বিজেপিতে এসে ভেবেছিলেন, উনিই দলটা চালাবেন। কিন্তু বিজেপিতে এটা হয় না। খুনের মামলা থেকে রেহাই পেতে তৃণমূলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। মন থেকে উনি তৃণমূলেই ছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy