রণক্ষেত্র ধর্মতলা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শনিবার বিকেলে ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধল ধর্মতলায়। ভাঙড়ের রেশ এসে পৌঁছল শহরের প্রাণকেন্দ্রে। যার জেরে স্তব্ধ হয়ে গেল মধ্য কলকাতার যান চলাচল। ভাঙড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন আইএসএফের কর্মীরা। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী, শনিবার কলকাতায় সভা ছিল আইএসএফের। দলের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখানোর পর তাঁদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। কার্যত টেনেহিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয় ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। পরে তাঁকে গ্রেফতার করার কথা জানায় পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে নওশাদের দলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। উন্মত্ত জনতাকে থামাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। পাল্টা বাঁশ, লাঠি নিয়ে পুলিশকে তাড়া করেন আইএসএফের কর্মীরা।
রাস্তায় অবস্থানে বসে পড়া আইএসএফ কর্মী-সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে হঠাৎই মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে চটি, পাথর ছোড়া হয়। আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে দু’পক্ষেরই একাধিক জন আহত হয়েছেন। আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও।
শনিবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল ভাঙড়। সেখানে তৃণমূল এবং আইএসএফ, একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ তোলে। আইএসএফ এবং তৃণমূলের সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় হাতিশালা এলাকা। দুই দলের সংঘর্ষে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন কর্মী আহত হন। হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় এক জনকে। প্রতিবাদে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। গোটা এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ। ঘটনায় আইএসএফেরও কয়েক জন কর্মী আহত হন।
শনিবার কলকাতায় দলীয় সভা ছিল আইএসএফের। তাদের অভিযোগ, সেখানে যাওয়ার পথে শনিবার সকালে আইএসএফ কর্মীদের মারধর করেন তৃণমূল কর্মীরা। তৃণমূল নেতাদের উপস্থিতিতেই এ সব ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। তৃণমূল সেই অভিযোগ যদিও মানেনি। লেদার কমপ্লেক্স থানা থেকে পুলিশবাহিনী পৌঁছেছে ঘটনাস্থলে।
নওশাদ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ সক্রিয় হলে এ রকম ঘটত না। আইএসএফ কর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে।’’ নওশাদ জানিয়েছেন, গোটা ঘটনায় আইএসএফের কোনও ভূমিকা ছিল না। বরং তৃণমূল তাঁদের উপর হামলা চালিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সুন্দর ভাবে কর্মীদের কলকাতায় নিয়ে যেতে এসেছিলাম। তৃণমূল নেতা জুলদার নেতৃত্বে এ সব হয়েছে। আমরা মারামারি করি না। এটা আমাদের সংস্কৃতি নয়। সবাইকে নিয়ে কলকাতার পথে যাচ্ছি।’’ দুই দলের সংঘর্ষের জেরে চায়ের দোকানে ভাঙচুর হয়েছে। নওশাদ জানিয়েছেন, তিনি নিজে মেরামতের টাকা দেবেন।
আর এক তৃণমূল কর্মী কৌশিক মণ্ডল অভিযোগ করেন যে, আগে আইএসএফই হামলা চালায়। তিনি বলেন, ‘‘আরাবুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল হয়েছিল। মিছিল শেষ করে বাড়ি ফিরছিলাম। ওঁরা গাড়ি নিয়ে জনসভায় যাচ্ছিলেন। গাড়ি থেকে ইটবৃষ্টি শুরু করেন। অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ভাঙড়ের নেতৃত্বকে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার রাতে। পতাকা লাগানো নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে তৃণমূল এবং আইএসএফ কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। আইএসএফ নেতা আবু হোসেন মোল্লার অভিযোগ, ‘‘২১ জানুয়ারি দলের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে আমরা দলীয় পতাকা লাগাচ্ছিলাম। সেই সময় আরাবুল ইসলাম এবং তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম বাইরে থেকে লোকজন এনে আমাদের মারধর করে। অথচ পুলিশ এসে আমাদেরই দু’জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। ওরা লাঠি দিয়ে মেরেছে। আমরা আত্মরক্ষা করতে ওদের মেরেছি।’’ সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে যায় কাশীপুর থানার পুলিশ।
তৃণমূল পাল্টা আইএসএফের দিকেই আঙুল তুলেছে। তৃণমূল নেতা হাকিমুল বলেন, ‘‘গতকাল আইএসএফের কিছু নেতা পতাকা টাঙাচ্ছিল। সেই সময় তারা আমাদের এক সমর্থকের বাড়িতে তাদের দলীয় পতাকা টাঙায় এবং আরাবুল ইসলামের নামে গালাগালি দেয়। তার প্রতিবাদ করলে ওরা অতর্কিতে আমাদের উপর হামলা চালায়। ইটবৃষ্টি করে। আমাদের কর্মীদের বন্দুকের বাঁট, ইট, রড দিয়েও মারধর করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy