অনশন হটানোর পরে মেয়ো রোডের ফুটপাত। —নিজস্ব চিত্র।
ভোর সাড়ে ৫টা। অনশন-মঞ্চে তখন শুয়ে ছিলেন অনেকেই। কয়েক জন নমাজ পড়ছিলেন। হঠাৎই হানা দেয় পুলিশ। অভিযোগ, হুমকি দিয়ে, লাথি মেরে, লাঠি চালিয়ে চলে যেতে বলা হয় অনশনকারীদের। কিন্তু অনড় থাকেন আন্দোলনকারীরা। গ্রেফতার হন পাঁচ জন। পরে তাঁরা জামিন পান।
শুক্রবার প্রেস ক্লাবের কাছে মেয়ো রোডে মাদ্রাসায় শিক্ষকপদ প্রার্থীদের অনশন-মঞ্চে পুলিশি হামলার অভিযোগে বুধবার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদ থেকে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন। ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামারুজ্জামান বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু সংগঠন ছাড়াও মানবাধিকার সংগঠন যোগ দেবে ওই জমায়েতে। পুলিশের অনুমতি মিললে সেখান থেকে নবান্ন অভিযান করব। না-হলে পুলিশের এই মারধরের প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনের দফতরে যাব। কোথায় যাব, সেটা বুধবারেই ঠিক করা হবে।’’
ঠিক কী ঘটেছে এ দিন? নিলুফা হক নামে এক অনশনকারী চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ, ভোরে সাধারণ পোশাকে আসেন ৬০-৭০ জন পুলিশকর্মী। তাঁদের পিছনে ছিল বড় পুলিশবাহিনী। সাধারণ পোশাকের পুলিশ এসেই শুয়ে থাকা কর্মপ্রার্থীদের হুমকি দিয়ে উঠে যেতে বলে। উঠতে না-চাওয়ায় লাথি মেরে তুলতে শুরু করে পুলিশ। পরে লাঠি চালিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। কয়েক জন আহত হন। অনেকেই ভয় পেয়ে ধর্মতলায় এসে টিপু সুলতান মসজিদে আশ্রয় নেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, মেয়ো রোডের অনশন-মঞ্চে হামলার পরে বেলা ৩টে নাগাদ টিপু সুলতান মসজিদেও আসে পুলিশ। যে-সব চাকরিপ্রার্থী পুলিশের ভয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের চলে যেতে বলে তারা। এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মাদ্রাসামন্ত্রী। তবু পুলিশ দিয়ে এ ভাবে আমাদের পেটানো হল! কার নির্দেশে এমন মারধর? আমরা তো কেউ গুন্ডা নই।’’
যদিও পুলিশের দাবি, কাউকেই মারধর করা হয়নি। ওই এলাকায় ২৭ মার্চ থেকে ১৪৪ ধারা জারি আছে। তাই অনশন-মঞ্চ থেকে কর্মপ্রার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র।
মেয়ো রোডের ওই জায়গাতেই প্রায় চার সপ্তাহ ধরে অনশন করেছেন এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরে বৃহস্পতিবার তাঁরা অনশন তুলে নেন। তার আগে, বুধবার ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বিকেলে মাসিক ক্রাইম বৈঠকে মেয়ো রোডে একই জায়গায় দু’বার ধর্না নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেখানে আর যাতে কেউ বিক্ষোভ-ধর্নায় বসতে না-পারেন, সেই বিষয়ে স্থানীয় থানাকে সতর্ক করে দিয়েছেন সিপি।
মাদ্রাসার চাকরিপ্রার্থীদের অনশন-মঞ্চে পুলিশি হানার নিন্দা করেছে বামফ্রন্ট। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব বলেন, ‘‘নির্বাচনের কারণ দেখিয়ে মাদ্রাসা, উচ্চ প্রাথমিক বা এসএসসি-র চাকরিপ্রার্থীদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে সরকার। তার উপরে গুন্ডা ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে ওদের উপরে অত্যাচার চালাচ্ছে।’’ হবু শিক্ষকদের আন্দোলন মারধর করে ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে আজ, শনিবার কলেজ স্কোয়ারের সামনে প্রতিবাদসভা করবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের জন্য গড়ে ওঠা মঞ্চ ‘আওয়াজ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy