পাশে আছি। বার্তা জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বাড়ির পাশে বোমার দাগ এখন মোছেনি। স্মৃতিতে এখনও বারুদের গন্ধ। তাতেই আতঙ্কে কাঁটা কেউ কেউ। কেউ আবার আতঙ্কিত ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কায়। রাজনৈতিক সংঘর্ষে জেরবার এই মাখড়ার বিশ্বাসই নড়ে গিয়েছে পুলিশের উপর!
এবার তাই, পুলিশের উপর আস্থা ফেরাতে এলাকার উত্তীর্ণ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দিল মাখড়ার পুলিশ ক্যাম্প। জেলা পুলিশ পক্ষ থেকে শনিবার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার এই সংবর্ধনা দেন। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের হাতে ফুল ও উপহার তুলে দেন তিনি।
গত কয়েকমাসে মিথ্যা মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়া, পুলিশ ধর-পাকড় নিয়ে পাড়ুই থানার এ গ্রাম আর পুলিশের উপর ভরসা রাখে না। বিশ্বাস ভেঙে গিয়েছে বহু আগেই। অন্তত, তেমনই বলছিলেন এ দিনও গ্রামের বাসিন্দারা। এ দিন যেমন পুলিশ গাড়ি গ্রামে ঢুকতেই, গ্রামের পুরুষ মহিলা এবং পড়ুয়া নির্বিশেষে সকলে দৌড় লাগালেন গ্রামের বাইরে। পরে অবশ্য স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের আশ্বাসে ভুল ভাঙে তাঁদের। ক্যাম্পের পুলিশ তাঁদের জানায়, জেলা পুলিশ সুপার পড়ুয়াদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য সদলবলে গ্রামে এসেছেন। এরপর একে একে সকলে ফিরে আসেন।
স্থানীয় হাঁসড়া উচ্চবিদ্যালয়ে এ বার মাখড়ার মোট ১৬ জন পরীক্ষা দিয়েছিল মাধ্যমিকে। তাদের মধ্যে ৮ জন উত্তীর্ণ। সকলেই ছাত্রী। উচ্চমাধ্যমিকে মাখড়া থেকে ৯ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৩ ছাত্র ও ৬ ছাত্রী। এছাড়া ইলামবাজার ও কলকাতা থেকে দুই পড়ুয়া উত্তীর্ণ হয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক নিয়ে মোট ১৯ জনকে সংবর্ধনা দিল জেলা পুলিশ। সংবর্ধনা পেয়েও অবশ্য পড়ুয়াদের প্রশ্ন, গ্রাম না শান্ত হলে তাঁরা পড়াশোনা চালিয়ে যাবেন কীভাবে? কেন না, পাড়ুই থানার একাধিক বিদ্যালয় রাজনৈতিক গণ্ডগোল এবং অশান্তির কম বেশী সাক্ষী থাকলেও, মাখড়া এলাকার পড়ুয়ারাই তুলনামূলক ভাবে সন্ত্রাসের বেশি শিকার হয়েছে।
এ দিন তাই গ্রামের পুলিশ ক্যাম্পে মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের হাতে যখন ফুল ও উপহার তুলে দিচ্ছিল জেলা পুলিশ, তখন রীতিমতো অবাকই হন স্থানীয়রা। সংবর্ধনা পেয়েও উচ্ছ্বসিত নন পড়ুয়ারা এবং তাদের পরিবার। মাখড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা, মাধ্যমিকে ৪৯১ নম্বার পেয়েছে আঞ্জু মানোয়ারা খাতুন। ক্যানলেপাড়ের বাসিন্দা আবিদা সুলতানা উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৩৮৩। তারা বলে, ‘‘আরও ভাল ফল করতে পারতাম, যদি পরিস্তিতি ভাল থাকত। খুব কষ্ট হয়, ওই পরিস্থিতির কথা ভাবলে।’’
একই কথা জানাচ্ছেন উচ্চ মাধ্যমিকের শেখ জুলকর নইম, শেখ জীবন, শেখ মুস্তাকরা। আঞ্জু মানোয়ারা খাতুনের মা সাহানা বিবি বলেন, “আমার দুই ছেলে, দুই মেয়ে। পড়াশোনায় সকলে ভাল। কিন্তু মেয়ের ফল এই বার পরিস্থিতির জন্য খারাপ হয়েছে। তবে মেয়েকে এই স্কুলে আর দিচ্ছি না। এলাকায় অশান্তি পরিবেশের কথা মাথায় রেখে পাথরচাপড়ি আল আমিন মিশনে ভর্তি করছি। আমরা সকলে চাইছি, শান্তি ফিরুক।’’
বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল শেখ জুলকর নইম, সেখ মুস্তাকদের। এ দিনের সংবর্ধনার পর তাঁদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিস্থিতির কারণে নম্বর কম। তাই কীভাবে হবে জানি না। এলাকায় শান্তি ফিরুক। স্বাভাবিক হোক মাখড়া।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy