মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি।
রাজ্যপাল ও বিজেপি যখন কার্যত এক সুরে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তখন পাল্টা আক্রমণের পথ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়। বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশের তুলনা টেনে তাঁর মন্তব্য, সেখানে গুলিতে ১৬ জন মারা গিয়েছেন। বাংলায় ক’টা গুলি চলেছে?
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) বাতিলের দাবিতে মঙ্গলবার সিমলায় স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি থেকে বেলেঘাটার গাঁধী আশ্রম পর্যন্ত বড় মিছিল করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর সেখানে সভা করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে শুরু করে মতুয়া সম্প্রদায়-সহ উদ্বাস্তুদের জন্য তিনি কী উন্নয়ন করেছেন, তাও ব্যাখ্যা করেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই মিছিলে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টদের পাশাপাশি ছিলেন আদিবাসী ও বাউল সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের হাতেই মিছিলের পথে বেজেছে ঢোল, ধামসা-মাদল, ঢাক, কাঁসর, ঘন্টা, শঙ্খ। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে নিজেও কাঁসর বাজিয়ে সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে স্লোগানে তাল দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দেশজুড়ে সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী আন্দোলনে বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশে বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালনার প্রসঙ্গ টেনে মিছিল শেষে মমতা বলেন, ‘‘নিজেদের রাজ্যে একটা আন্দোলন সামলাতে পারে না! ১৬ জন গুলিতে মারা গেল। হাজার হাজার মানুষ জখম। দিল্লিতে গুলি চলেছে। কোথায় করেননি আপনারা? আর বাংলায় আইনের শাসন নেই বলে যে খুব চিৎকার করছেন, তা বাংলায় ক’টা গুলি চলেছে? বিজেপির পুরোটাই ফোর টোয়েন্টি। মানে পুরোটাই মিথ্যা।’’
আরও পড়ুন:বিতর্ক উস্কে এনপিআর খাতে টাকা, এনআরসি-র শুরু, বলছেন বিরোধীরা
সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি জে পি নড্ডা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মতুয়াদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে চাইছেন বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন। তারই জবাবে এ দিন মমতা পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘এখানে আইনশৃঙ্খলা খারাপ হলে বিজেপির নেতারা বাইরে থেকে এসে মিছিল মিটিং করছেন কীভাবে? গাড়ি চেপে মিছিল করে চলে যাচ্ছেন কী ভাবে! লখনউয়ে আমাদের সাংসদদের পাঠিয়েছিলাম। বিমানবন্দরে নামতেই দিল না! তা হলে বলুন, কোথায় আইনের শাসন আছে, আর কোথায় নেই!’’
সরাসরি রাজ্যপালের নাম না করেই মমতার কটাক্ষ, ‘‘এখানে এমন একজন মানুষ এখন আছেন, যিনি সারা দিন এ রাজ্যের নিন্দা করছেন। রোজ বলে বেড়াচ্ছেন, এ রাজ্যের অবস্থা খারাপ। তাঁদের জন্য বলি, আগে দিল্লি সামলা, পরে সামলাবি বাংলা।’’
নাগরিকত্বের প্রশ্নে উদ্বাস্তু, বিশেষ করে মতুয়াদের পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। এবং এই আইনের বিরোধিতা করায় মমতাকে উদ্বাস্তু-বিরোধী হিসেবেও চিহ্নিত করতে চেয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিন সেই প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসা করি, মতুয়াদের বড়মা (প্রয়াত বীণাপানি দেবী)-কে চেনেন আপনারা? বছরের বছরের পর তাঁকে কে দেখাশোনা করেছে? গত ৩০ বছর ধরে বড় মা-কে এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দেখেছে। অসুস্থ হলে চিকিৎসাও করিয়েছি আমিই।’’
মতুয়াদের দাবি নিয়ে বিজেপি নেতাদের অভিযোগ নস্যাৎ করে তিনি এ দিন আরও বলেন, ‘‘মতুয়াদের জন্য কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় আমিই করেছি। উন্নয়ন বোর্ড করেছি। এখন কারা মতুয়াদের হয়ে দালালি করতে আসছে!’’ উদ্বাস্তুদের জমির ‘লিজ’ দলিল দেওয়ার প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘এই দাবিতে আন্দোলন করেছি আমি। ১৯৮৫ সালে তাঁদের দলিল বিলি হয়েছে। সরকারে আসার পরেও উদ্বাস্তুদের জমির পাট্টা আমরাই বিলি করেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, ২৮ ডিসেম্বর রাজ্যের সব ব্লকে ব্লকে সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী ধর্না কর্মসূচি করবে তৃণমূল। ৩০ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে হাঁটবেন তিনি নিজে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy