Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM

CPM: ফের উত্তপ্ত বাম বিক্ষোভ, ইট-লাঠি-গ্যাসে রণক্ষেত্র

আমতা থানার সামনে শুক্রবার বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বেধেছিল।

বাম যুব সংগঠনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শনিবার।

বাম যুব সংগঠনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁচলা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১১
Share: Save:

ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর প্রতিবাদে বাম বিক্ষোভকে ঘিরে ফের ধুন্ধুমার বাধল। আমতা থানার সামনে শুক্রবার বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে তুলকালাম বেধেছিল। আর শনিবার তাদেরই হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপারের দফতর ঘেরাও কর্মসূচিকে ঘিরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পাঁচলার পানিয়াড়া। ঘণ্টাদেড়েক স্তব্ধ হয়ে রইল ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৮ জন পুলিশকর্মী। জখম হয়েছেন আন্দোলনকারীদেরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনকে পাঁচলার গাববেড়িয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য অভিযোগ, ‘ধ্বংসাত্মক রাজনীতি’ করে বামেরা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে চাইছে। পার্থবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সরকারের প্রধান পূর্ণাঙ্গ তদন্তের ঘোষণা করেছেন। পুলিশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করছে। তার পরেও বামেদের এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি শুধু অর্থহীনই নয়। রাজ্যের জন্য ক্ষতিকারকও। ভাঙচুর, হামলা করে ওরা ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না! এটা এখনও আলিমুদ্দিনের নেতারা বুঝে উঠতে পারছেন না!’’

কলকাতায় এ দিনই আনিস-কাণ্ডে বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিল বামফ্রন্ট। জওহরলাল নেহরু রোডের হো চি মিন মূর্তি থেকে ধর্মতলার লেনিন মূর্তি পর্যন্ত মিছিলে ছিলেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তী, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মনোজ ভট্টাচার্য, নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমানবাবু সেখানে বলেন, ‘‘আমাদের ছাত্র-যুবদের উপরে প্রতিদিন হামলা হচ্ছে। কিন্তু এই হামলা করে আমাদের আটকানো যাবে না! বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলবেই।’’ ছাত্র-যুবদের কর্মসূচিতে পুলিশের ‘হামলা’র প্রতিবাদে সন্ধ্যায় শহরে পথ অবরোধও করেন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই কর্মী-সমর্থকেরা।

হাওড়া জেলা পুলিশের বক্তব্য, আন্দোলনকারীরা এ দিন পুলিশের ৯টি গাড়ি এবং একটি ট্রাফিক কিয়স্ক ভাঙচুর করে। পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়। তার পরে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, জলভর্তি প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোলা নিক্ষেপ করা হয়। পুলিশও অবশ্য পাল্টা ইট ছোড়ে, লাঠি চালায় এবং বিক্ষোভকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশের তরফে শূন্যে দু’এক রাউন্ড গুলিও ছোড়া হয়। পুলিশ অবশ্য গুলি চালানোর কথা মানেনি। খণ্ডযুদ্ধে পুলিশের যাঁরা ইটের ঘায়ে জখম হন, তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে ১৭ জনকে।

ঘটনাস্থলে ধৃতদের মধ্যে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সৃজন ভট্টাচার্যেরা আছেন। এক সময়ে মীনাক্ষীকে ৭ জন পুলিশকর্মী মিলে ঘিরে ফেলে টানাহ্যাঁচড়া করতে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সেই ছবি দেখিয়েই সিপিএম নেতা সুজনবাবুর অভিযোগ, ‘‘মীনাক্ষীর একার উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ল রাষ্ট্রীয় একগাদা পুরুষ গুন্ডা! নির্লজ্জতা সীমা ছাড়াচ্ছে। তাতেও পার পাবে না, ইনসাফ পেতেই হবে!’’ পাঁচলার তৃণমূল বিধায়ক গুলশন মল্লিকের পাল্টা দাবি, ‘সিপিএমের লোকেরা পরিকল্পিত ভাবে ইট, লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করছিল। পুলিশকে তারাই মারাধর করে।’’

আনিস-কাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিদিনই বাম ছাত্র-যুবরা রাস্তায় নামছেন। চার বাম দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ দিনের কর্মসূচিও আগাম ঘোষিত ছিল। সেইমতো তারা ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের রানিহাটি-আমতা মোড় থেকে মিছিল শুরু করে। মিছিলকারীর সংখ্যা ছিল কয়েকশো। শুরুতেই পুলিশ আপত্তি জানায়। কিন্তু পুলিশের আপত্তি না শুনে মিছিল এগোতে থাকে জাতীয় সড়ক ধরে। এক কিলেোমিটার দূরে পানিয়াড়ায় জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপারের দফতর। তার কিছুটা আগে পুলিশের ব্যারিকেড ফেলে দিয়ে আন্দোলনকারীদের এগোতে দেখে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে। এর পরেই পরিস্থিতি তেতে ওঠে। শুরু হয়ে যায় দু’পক্ষের খণ্ডযুদ্ধ। জাতীয় সড়কের দু’দিকের লেনেই যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হামলায় পুলিশ সুপারের দফতরের গেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক সময়ে পুলিশ সুপার সৌম্য রায় বিক্ষোভকারীদের হটাতে নিজে নেতৃত্ব দেন। ঘটনাস্থলে আসেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত-সহ পুলিশ-কর্তারা। জেলা সিপিএম সম্পাদক দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল এবং পুলিশ যৌথ ভাবে আমাদের মিছিলকে ভণ্ডুল করার জন্য হামলা করে।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন সিপিএমের দিকেই।

আনিসের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত ও পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে এ দিন কলেজ স্ট্রিটে চার মাথার মোড় অবরোধ হয় কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদের ডাকে। বিক্ষোভে ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ, কলকাতা ও হাওড়া জেলার সভাপতি দেবজ্যোতি দাস, শাহিদ কুরেশিরা। আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্তের দাবিতে মেট্রো চ্যানেলে যুব কংগ্রেস অনশন কর্মসূচি শুরু করলে পুলিশ এসে তুলে দিতে চেষ্টা করে। যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি শাদাব খান-সহ সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে চলে যায় পুলিশ। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে এ দিনই ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি জানান ছাত্র ব্লকের রাজ্য সম্পাদক শ্রীরূপ চক্রবর্তী, রাজ্য সভাপতি সাফিফল হাসান প্রমুখ।

এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যও এ দিন বলেছেন, ‘‘আনিসের হত্যাকারীদের শনাক্তকরণের জন্য তাঁর বাবার সামনে টিআই প্যারেড যে ভাবে করানো হয়েছে, তাতে সরকার আদৌ দোষীদের ধরতে চাইছে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। এর মাধ্যমে তদন্তে অযথা দেরি করা হচ্ছে এবং খুনের তথ্য-প্রমাণাদি লোপ করতে সাহায্য করা হচ্ছে। আমরা সরকারের এই হীন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা করছি এবং অবিলম্বে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Anish Khan murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy