Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ফের গণপিটুনি, ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত পুলিশ

গত এক মাসে আলিপুরদুয়ারে এই নিয়ে চতুর্থ গণপিটুনির ঘটনা। জুন মাসের মাঝামাঝি পাটকাপাড়া চা বাগানে ছেলেধরা সন্দেহে এক বৃদ্ধকে পেটায় জনতা।

পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র

পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

ছেলেধরা সন্দেহে ফের গণপিটুনি আলিপুরদুয়ারে। শনিবার ভোরে এই নিয়ে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল শহর সংলগ্ন মাঝেরডাবরি চা বাগান এলাকা। গণপিটুনিতে জখম যুবককে উদ্ধারে গিয়ে আক্রান্ত হয় পুলিশ। তাদের পাথর ও বাঁশ দিয়ে মারধর করে জনতা। এর ফলে এক আধিকারিক-সহ পাঁচ পুলিশ জখম হয়েছেন। পুলিশের পাল্টা লাঠিচার্জে জখম হন কয়েক জন বাসিন্দাও। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয় পুলিশকে। গণপিটুনিতে গুরুতর জখম যুবককে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত এক মাসে আলিপুরদুয়ারে এই নিয়ে চতুর্থ গণপিটুনির ঘটনা। জুন মাসের মাঝামাঝি পাটকাপাড়া চা বাগানে ছেলেধরা সন্দেহে এক বৃদ্ধকে পেটায় জনতা। এর কিছু দিন পরে ছেলেধরা সন্দেহেই কালচিনির রায়মাটাং চা বাগানে এক ব্যক্তিকে মারধর করা হয়। একই কারণে দিন কয়েক আগে কালচিনির দলসিংহপাড়া চা বাগানে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনি দেওয়া হয়। একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা রুখতে পুলিশের তরফে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে পরিস্থিতি একই রয়েছে, তা শনিবার ভোরে মাঝেরডাবরি চা বাগানের ঘটনাই প্রমাণ করল।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এ দিন যে যুবক মার খেয়েছে, তার নাম সনুজ ঋষি। ৩৫ বছরের ওই যুবকের বাড়ি বিহারের কাটিহারে। খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবক কোনও ট্রেনে চেপে আলিপুরদুয়ার জংশনে চলে আসেন। সেখান থেকে এ দিন ভোরে মাঝেরডাবরি চা বাগানের দমনপুর ডিভিশনে ঢুকে পড়েন। তখন তাঁর পরনে ছিল শাড়ি ও ওড়না। স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন থেকেই ছেলেধরা গুজব ছড়াচ্ছিল বাগানটিতে। যার জন্য রাত জেগে এলাকায় পাহারাও দিচ্ছিলেন বাগানের শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা।

বাগানের চৌকিদারদের ইনচার্জ ভীম বাগুয়ার জানান, শনিবার ভোরে ওই যুবককে চা বাগানে ঘুরতে দেখে চৌকিদাররা তাঁকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। বিষয়টি চা বাগান কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, এরই মধ্যে শ্রমিক মহল্লায় সেই খবর পৌঁছে যায়। এর পরই সেখানে ভিড় জমতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে যুবককে ধরে পেটাতে শুরু করে জনতা। খবর পেয়ে প্রথমে জংশন ফাঁড়ি ও তার পর আলিপুরদুয়ার থানার বিশাল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

মারধরে আহত ব্যক্তি। —নিজস্ব চিত্র

সূত্রের খবর, পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করলে উত্তেজিত জনতা বারবার তাঁকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তখন যুবকটিকে বাগানের একটি অফিসে নিয়ে যায়। জনতা সেখানেও চড়াও হয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, এর পরই পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। কয়েক জন পুলিশকে বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ তখন লাঠিচার্জ শুরু করলে জনতা পাথর ছুড়তে থাকে। পুলিশের লাঠির আঘাতে এক কিশোর-সহ আট জন জখম হন বলে অভিযোগ। পাল্টা অভিযোগ, পাথর ও বাঁশের আঘাতে জংশন ফাঁড়ির ওসি সৌভিক মজুমদার-সহ পাঁচ পুলিশ আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি সামলাতে এর পর বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।

আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী জানান, পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছে। গণপিটুনির শিকার হওয়া ব্যক্তিকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় সাত জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, পরে ওই সাত জনের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Lynching Alipurduar Police Mob
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy