—ফাইল চিত্র।
‘দৃষ্টান্তমূলক’ রায় নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিটাই আসল! সোমবার দুপুরে পুজো মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পরেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ভাইরাল স্বাগত-বার্তা। সেই দলে রয়েছেন চিকিৎসক-জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তবে সঙ্গে বিধিসম্মত সতর্কীকরণও রয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, আদালতের রায় মানার প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসন, পুজো উদ্যোক্তা এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষ কী ভাবছেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
পুজো ঘিরে উচ্ছ্বাস যত দ্রুত উন্মাদনার রূপ নিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে আক্রান্তের সংখ্যার বৃদ্ধিও ঘটেছে সেই হারে। তৃতীয়ায় স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৯২ জনের দেহে ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। মৃত্যু হয়েছে ৬৩ জনের। কলকাতায় এ দিন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০৯। জেলাগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা (৮৫৮)। তার পর দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২৩৪) এবং হাওড়া (২২৯)।
গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণের এই রেখচিত্রের কারণেই আইএমএ, ডব্লিউবিডিএফ, অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্সের মতো চিকিৎসক সংগঠনগুলি সংক্রমণের পায়ে বেড়ি পরানোর জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছে। এরই মধ্যে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার পুজো প্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলে ‘অন্য পুজো’র আবহ তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: পুজো প্যান্ডেলে দর্শক নয়, স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট
কিন্তু তাতে পুজো কমিটিগুলির একটি বড় অংশকে পাশে না-পাওয়ায় হাইকোর্ট কী বলে সেই দিকে তাকিয়ে ছিলেন রাজ্যের চিকিৎসক-সহ নাগরিকদের একাংশ। অবশ্য কলকাতা হাইকোর্টের দৃষ্টান্তমূলক রায়ের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রিট পিটিশন ফাইল করতে চলেছে বলে জানিয়েছে দুর্গাপূজা সংগঠকদের একটি ‘ফোরাম’।
আরও পড়ুন: ত্রাতা আদালত, অতিমারির মহাবিপর্যয় থেকে রেহাই কলকাতা ও বাংলার
আদালতের পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়ে প্রবীণ চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া এই নির্দেশ কার্যকর করা সম্ভব নয়। পুজো নিয়ে এ যাবৎ প্রশাসনের যা ভূমিকা, তাতে রায় কার্যকর হবে, এমন আশা কম।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক রাজীব পান্ডে বলেন, ‘‘রায় কতখানি কার্যকর হবে তা পুলিশ-প্রশাসনের উপরে নির্ভর করছে।’’
দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গ টেনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, কোভিড আবহে হুল্লোড়ে বিপদ যে নিশ্চিত, তা কারও অজানা নয়! তা হলে পুজো মণ্ডপের ভিড় নিয়ন্ত্রণে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে কেন? চিকিৎসকদের আর এক অংশের বক্তব্য, বড় পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে কোনও না কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছেন। সংক্রমণ রোধে সচেতন হওয়ার দায় কি শুধু জনতার! তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘রায়ের ফাঁকফোকর খুঁজে ঘুরপথে প্রতিমা দর্শন বা ব্যারিকেডের বাইরে জমায়েতে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না তো?’’ একটি চিকিৎসক মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি হাসপাতালের অঙ্কো-সার্জনের অভিমত, আদালতের রায় মেনে নিলে রাজ্য প্রশাসনের হারানোর কিছু নেই। উল্টে বলা যাবে, হাইকোর্টের রায়কে সম্মান জানাতেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা হল।
কিন্তু তা কি হবে? কার্ডিয়াক সার্জন কুণাল সরকার বলেন, ‘‘যে কোনও নির্দেশ কতখানি কার্যকর হল সেটাই আসল। ছটপুজো নিয়ে রবীন্দ্র সরোবরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। রায় কার্যকর না-হলে আদালত কতটা ক্ষুব্ধ হবে, সেটা পরের বিষয়। নির্দেশ না-মানার অর্থ চিকিৎসকদের আশঙ্কা সত্যি হবে।’’ পুরীর রথযাত্রার প্রসঙ্গ টেনেছেন পিপলস অ্যাসোসিয়েশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সম্পাদক তথা ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। তাঁর বক্তব্য, রথযাত্রার সঙ্গেও ওড়িশার মানুষের আবেগ জড়িত। সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি আটকাতে আদালতের নির্দেশ মেনে সেখানে উৎসব পালন করা হয়েছে। কলিঙ্গে যা সম্ভব বঙ্গে কেন নয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy