Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Bengali New Year

Poila Baisakh Special: একলা নয়, ১ বৈশাখ হোক সব বাঙালির উৎসব

তবে প্রবীণ নাট্যকর্মী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মতে, ‘‘আসল গোলমাল অর্থনীতিতে। সেটির পুনরুজ্জীবন না-হলে এই বাংলার হালখাতা, সংস্কৃতি, নববর্ষ কিছুরই হাল ফিরবে না।’’

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে আলপনা। বৃহস্পতিবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনের রাস্তায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নববর্ষকে স্বাগত জানাতে আলপনা। বৃহস্পতিবার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনের রাস্তায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ ০৬:৫২
Share: Save:

নিছকই বাংলা মাধ্যমের দিন না সব বাঙালির দিন?

নতুন বঙ্গাব্দকে আবাহনের মুহূর্তেও প্রশ্নটা এড়ানো যাচ্ছে কই! অতিমারির দম বন্ধ করা ফাঁস আলগা হয়ে এখন একটু স্বস্তির আবহ। তবু কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের ধাক্কাতেও ধারে-ভারে এগিয়ে ছিল ইংরেজি বছর বরণের উন্মাদনা! তা হোক, তবু নানা ভাঙনে দিশাহারা সঙ্কটময় বঙ্গজীবনে বঙ্গাব্দ বরণের মুহূর্তেও অনেকেই নানা ধাঁচের নতুন শুরুরও সম্ভাবনা দেখছেন।

বৃহস্পতিবার, চৈত্র শেষের সকালে শিকাগোয় বসে প্রবীণ ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তী বলছিলেন, “বছরভর পার্বণের অভাব না-থাকলেও সব বাঙালিকে একসঙ্গে নিয়ে চলার মতো উৎসবের আমাদের অভাব রয়েছে।” দীপেশের কথায়, “দুর্গাপুজোয় অনেকে আনন্দ করেন, বড়দিনেও মাতামাতি ভালই হয়, রমজানে ইফতার নিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও আগের থেকে সচেতনতা বেড়েছে, এ সবই ভাল দিক! কিন্তু সব বাঙালির সমান ভাবে মেতে ওঠার উৎসব কই! রবীন্দ্রজয়ন্তীও সবার চোখে সমান নয়। কিছুটা এই নববর্ষেরই সম্ভাবনা আছে।”

আকবরের আমলের কর আদায়ের একটি ক্যালেন্ডারেই রমরমা শুরু পয়লা বৈশাখের। বাঙালির নতুন বছর সেই তারিখপঞ্জিরই উদযাপন। ইতিহাসবিদেরা বেশির ভাগই এক মত, বাঙালি যতই দুই দেশে ভেঙে আলাদা হোক, পয়লা বৈশাখের আবেদনে অন্তত হিন্দু, মুসলিমে ভেদ নেই।

বাঙালির জাতিসত্তার নিরিখে কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা নয়, বিশ্লেষণে ঢুকতে চান না কবি জয় গোস্বামী। তবে ১৪২৯কে স্বাগত জানানোর পর্বে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতেই হাত পাতছেন। জয় বলছেন, “আমার ছোটবেলার মফস্সল শহরটিতে সব পালা-পার্বণেই হিন্দু, মুসলিম ও খ্রিস্টানেরা মিশেই থাকত। মনে পড়ছে পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যায় আমাদের স্কুল শিক্ষিকা মায়ের সঙ্গে রানাঘাটের বিভিন্ন মনিহারি দোকান, জামাকাপড় বা বইয়ের দোকানে আমরা যেতাম হালখাতা খোলার নিমন্ত্রণ খেতে। ওই সব দোকান মালিকদের অনেকেই মুসলিম ছিলেন! কিন্তু কই হিন্দু হালখাতা আর মুসলিম হালখাতার কখনও ফারাক দেখিনি।”

হালখাতা শব্দটির গায়ে ফার্সি গন্ধ। ফার্সিতে হাল মানে নতুন। বাঙালির সামাজিক ইতিহাস নিয়ে চর্চারত ইতিহাসবিদ উর্বী মুখোপাধ্যায় বলছেন, “পশ্চিম বা উত্তর ভারতে হিন্দু ব্যবসায়ীরা দেওয়ালিতে হালখাতা পুজো করলেও পূর্ব ভারত তথা বাংলায় পয়লা বৈশাখই ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে সব ব্যবসায়ীর নতুন হালখাতা খোলার সময়।” এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কর আদায়ের জন্য আকবরের অর্থমন্ত্রী তোডর মল জোর দিয়েছিলেন আঞ্চলিক সুবিধার উপরেই। রবি শস্যের ফসল ওঠার পরে লোকের হাতে অর্থ, সম্পদ থাকত। তাই পয়লা বৈশাখের মধ্যে কর জমা দিতে হত। উর্বী বলছেন, “আকবরের আমল থেকেই পয়লা বৈশাখের গুরুত্ব। যার মধ্যে ধর্ম নয়, বঙ্গজীবনে আর্থিক বছরের যোগ। সেই হিসেবে সমৃদ্ধি, নতুন শুরু, নতুন প্রত্যাশাও মিশে যেতে থাকে। ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন এমন একটি দিন অবশ্যই সব বাঙালির উৎসব।”

কালবৈশাখীর শুচিস্নান ইত্যাদির প্রতীকে নববর্ষের নতুন শুরুর মধ্যে এক ধরনের মহাজীবনে উত্তরণের মহিমা খোঁজেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে সাহিত্যিক বাণী বসু দেখেছেন, “হালখাতা পুজো হলেও পয়লা বৈশাখ কখনওই দোল, দুর্গোৎসবের মর্যাদা পায়নি। তবে বাঙালির কাছে উৎসবে ধর্ম ছাপিয়ে সামাজিক দিকটা বড় হয়ে উঠেছে।”

বাংলাদেশে কিন্তু ‘পহেলা বৈশাখ’ মানে জাতীয় উৎসব। কলকাতায় বাংলাদেশের নতুন ডেপুটি হাই কমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলছেন, “গুটিকয়েক মৌলবাদী হিন্দুয়ানি খুঁজে পেলেও আমাদের দেশে দিনটি খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব। একুশে ফেব্রুয়ারি এবং পহেলা বৈশাখ দু’টোই বাঙালির জাতিসত্তার নির্মাণে মিশে। একুশে ফেব্রুয়ারি শোকেরও। পহেলা বৈশাখে শুধুই আনন্দ।” কলকাতার এক দিন আগে বৃহস্পতিবার রমজান মাসেও বিরাট ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বেরিয়েছে ঢাকায়। দীপেশ আফশোস করছিলেন, দু’টি দেশে ক্যালেন্ডার একটু আলাদা। না হলে দুই বাংলা একযোগে উৎসব করতে পারে। বিভাজনের দিনে তা মন্দ হয় না!’’ আজ, শুক্রবার নববর্ষে আবার ‘গুড ফ্রাইডে’।

তবে প্রবীণ নাট্যকর্মী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মতে, ‘‘আসল গোলমাল অর্থনীতিতে। সেটির পুনরুজ্জীবন না-হলে এই বাংলার হালখাতা, সংস্কৃতি, নববর্ষ কিছুরই হাল ফিরবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bengali New Year Nababarsha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE