Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Babri Masjid

‘সত্তার বহু স্বরেই ঐক্যের হারমোনিয়াম’

বাবরি ভাঙার সময়ে এক নেতা সবাইকে ‘হারমোনিয়ামে’ থাকতে বলেছিলেন। সবারই মত, ভারত নামের সাতরঙা দেশের স্বরে কোনও একটা স্বরকে মূল সুরে বলে বেছে নেওয়া তাই কখনওই চলতে পারে না।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০৪
Share: Save:

ভারতীয় কারে কয়? কাকেই বা হিন্দু কিংবা মুসলিম বলা হবে?

প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিল রবিবাসরীয় হাওয়ায়। সোনিপতের আইন কলেজের অধ্যাপিকা সামিনা দালওয়াই, কলকাতার ইহুদি মহিলা ইয়ায়েল সিলিম্যান, বাঙালি মুসলিম রেডিওজকি আলতামাস ওরফে অল্টো কিংবা এই শহরের পঞ্জাবি বৃদ্ধা শশী কপূররা মিলে ছকে-বাঁধা ধারণাগুলো নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন।

ছাঁচে ঢালা ধ্যানধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বহুত্বের উদযাপনে গত তিন দশকে এ দেশের রাজনীতিতে বহুচর্চিত ৬ ডিসেম্বর তারিখটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল। উদ্যোক্তা, কলকাতার সম্প্রীতি মঞ্চ ‘নো ইয়োর নেবার’ এবং নারী অধিকার রক্ষা সংগঠন ‘স্বয়ম’।

আরও পড়ুন: ‘ভারত বন্‌ধ’এর দিন ছেড়ে বুধবার রাজ্যে আসছেন বিজেপি সভাপতি নড্ডা

আরও পড়ুন: নীলবাড়ির লক্ষ্যে মমতা-মোকাবিলা, বঙ্গ বিজেপির বাছাই একাদশ

সামিনার মা সারস্বত ব্রাহ্মণ, বাবা মুসলিম। দুজনের কেউই প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাননি। কিছু দিন আগে একটি গয়নার বিজ্ঞাপনে ‘লাভ জেহাদের’ গন্ধ পেয়ে নেট-হিংস্রতার সময়ে এই মায়ের কথাই তাঁর মনে পড়ছিল। সামিনার সঙ্গী তেলঙ্গানার রেড্ডি, ভাইয়ের স্ত্রী চিনা। তাঁর দত্তক নেওয়া একটি সন্তান আবার নাগা বংশোদ্ভুত। “আমাদের পরিবারটিকে তা হলে ভারতীয়ত্বের কোন গোত্রে ফেলা হবে?”, ওয়েব-আড্ডায় হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন তিনি।

কলকাতার ইহুদি কন্যা ইয়ায়েলের জীবনেও নানা পর্ব। আমেরিকায় থাকাকালীন একবার কলকাতার ইস্কুলে শেখা জাপানি গান শুনিয়ে তিনি তাক লাগিয়ে দেন। ‘‘এ দেশই তো বরাবর একসঙ্গে সবাই মিলে থাকতে শিখিয়েছে।’’ তবু উত্তর কলকাতার বাঙালি আলতামাস ওরফ অল্টোর পরিচিতি নিয়েও ইদানীং কম ধন্দে পড়তে হয় না! তিনি বাঙালি না মুসলমান, কিংবা মুসলিম হয়েও কেন বিরিয়ানির থেকে বেশি পিৎজ়াভক্ত, এ সব প্রশ্নও সামলাতে হয়। “এক সঙ্গে সবাইকে নিয়ে চলার দায়টা, সবারই মনে রাখার,” বললেন প্রাক্তন স্কুলশিক্ষিকা আনিস ওয়াহাব। সত্তার ঘোরপ্যাঁচে তাঁকেও আকছার সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অথচ, বিগত দিনে বড়বাজারের বাসিন্দা শশী কপূরদের পরিবারের জমিতেই মন্দির ও মসজিদের সহাবস্থানে কখনও সমস্যা হয়নি।

সমাজকর্মী সাবির আহমেদের আক্ষেপ, অথচ আজ পড়শিকে জানার অজ্ঞতায় মাদ্রাসা শব্দটাই বিপজ্জনক বা ‘অপশব্দ’ হয়ে উঠছে। আলোচনার অন্যতম সঞ্চালক অমৃতা দাশগুপ্ত ব্যথিত, এ কোন ভারতে থাকছি, যেখানে কে কী খাব, কে কাকে বিয়ে করব, নিয়েও খবরদারি চলছে। কবি কমলা ভাসির মতে, রাজনীতির নানা মতলবে ধর্মকে ঘুঁটি করা হচ্ছে।

আজকের তথাকথিতে মূল স্রোতের থেকে আলাদা ভারতের গল্প শোনালেন কলকাতার বিশপ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ফিলিপ পিকক এবং কলকাতার পার্সি কর্পোরেটকর্ত্রী মেহের নওরোজিও। মেহের হাসতে হাসতে মনে করালেন, বাবরি ভাঙার সময়ে এক নেতা সবাইকে ‘হারমোনিয়ামে’ থাকতে বলেছিলেন। সবারই মত, ভারত নামের সাতরঙা দেশের স্বরে কোনও একটা স্বরকে মূল সুরে বলে বেছে নেওয়া তাই কখনওই চলতে পারে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Babri Masjid Pluralism India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy