বাঘদর্শন: নেওড়া ভ্যালিতে আবার দেখা গেল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
সামনের ডান পা ঢালু জমিতে রাখা। হাঁ করা মুখ। তীক্ষ্ণ দাঁত, সরু গোঁফও বোঝা যাচ্ছে। রাজকীয় এই গমনের ছবি ফের ধরা পড়ল উত্তরবঙ্গের গভীরে বসানো ক্যামেরায়। ১৮ ডিসেম্বর নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের ট্র্যাপ ক্যামেরায় উঠেছে এই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। বন দফতর জানিয়েছে, সকাল ৬টা বেজের ৭ মিনিটে তোলা ছবি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গলে তখনও রোদ ঢোকেনি। তবে গাছের ফাঁকে হাল্কা দিনের আলো।
এমনিতেই নেওড়ার গভীর জঙ্গলে সূর্যের আলো কম ঢোকে। তার উপরে এ বারের ডিসেম্বরে ছিল কুয়াশা এবং কনকনে ঠান্ডা। ছবি দেখে প্রাথমিক ভাবে বন দফতর মনে করছে, এটি পুরুষ বাঘ। আগে যে বাঘটিকে দেখা গিয়েছিল নেওড়ায়, এটি সেটিই কি না, তা খতিয়ে দেখছে বন দফতর। তবে প্রায় এক বছর পরে নেওড়ায় ফের বাঘের দেখা মেলায় খুশি বন দফতর।
জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, “বাঘের গায়ের ডোরাকাটা মিলিয়ে দেখতে হবে যে, এটি আগের বাঘটি কি না। তবে এক বছর ধরে নেওড়ায় বাঘের দেখা মিলছিল না। বাঘের দেখা পাওয়া তাই নতুন বছরের শুরুতে ভাল খবর।”
বন দফতর সূত্রে খবর, নেওড়া ভ্যালি জাতীয় উদ্যানের লাভা লাগোয়া দিকটিতে বসানো ট্র্যাপ ক্যামেরায় এই বাঘের ছবি ধরা পড়েছে। সেটি কোর এলাকা বা জঙ্গলের গভীর এলাকা। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিন বছর আগে বাঘের দেখা মিলেছিল আলগাড়ার কাছে। সেটিও লাভা লাগোয়া এলাকা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নেওড়ায় প্রথম দেখতে পাওয়া সেই বাঘের ছবি মোবাইলে তুলেছিলেন এক গাড়ি চালক। তার পরে ২০১৮ সালে শীতের শুরুতেও দেখা মিলেছিল রয়্যাল বেঙ্গলের। এই মরসুমে ফের শীতের গোড়ায় দেখা মিলল রয়্যাল বেঙ্গলের।
নেওড়ার জঙ্গলের সঙ্গে সিকিমের জঙ্গলের যোগাযোগ রয়েছে। আগের বাঘটি সিকিম থেকে নেমে এসেছিল বলে দাবি করেছিল বন দফতর। বন আধিকারিকদের দাবি, প্রবল ঠান্ডা সইতে পারে না রয়্যাল বেঙ্গল। তাই ডিসেম্বরে সিকিমে তুষারপাত শুরু হলে কনকনে ঠান্ডার জঙ্গল ছেড়ে তুলনামূলক কম ঠান্ডা নেওড়ায় নেমে আসে রয়্যাল বেঙ্গল। তাঁদের বক্তব্য, গত কয়েক বছরের হিসেব যদি মিলিয়ে দেখা যায়, তা হলে এই প্রবণতাই ধরা পড়ে। বন আধিকারিকরা বলছেন, এ বারে দেখতে হবে নেওড়াই কি বাঘের স্বাভাবিক বিচরণভূমি হয়ে উঠছে কিনা। বন দফতর সূত্রে খবর, বর্ষার সময় ট্র্যাপ ক্যামেরা খুলে নেওয়া হয় এই জঙ্গলের। তাই সে সময়কার সরাসরি তথ্য বন দফতরের কাছে নেই।
তবে দশ হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত নেওড়া ভ্যালির জঙ্গলে যে বাঘে বিচরণ করে, তা নিয়ে বনকর্মী বা আধিকারিকদের আর কোনও সংশয় নেই। জলপাইগুড়ির ডিএফও-র কথায়, “আলবাত নেওড়াভ্যালি বাঘ থাকার উপযুক্ত। না হলে ক্যামেরায় ধরা পড়া বাঘটি থাকছে কী করে?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy