ছবি পিটিআই।
গত কয়েক দিন যাবৎ যে আশঙ্কার প্রহর গুনছিল কলকাতা, তা সত্যি হল আজ। পেট্রলের দাম ‘সেঞ্চুরি’ করল এই শহরেও, যে নজিরবিহীন দৌড় গত শুক্রবার থেকেই দেখতে শুরু করেছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা।
আজ কলকাতায় ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে (আইওসি) পেট্রল লিটার পিছু ৩৯ পয়সা বেড়ে ছুঁয়ে ফেলল ১০০.২৩ টাকা। ২৩ পয়সা বাড়ল ডিজেলের দরও। এক লিটারের দাম হল ৯২.৫০ টাকা। করোনা সঙ্কটের মধ্যে আর্থিক দশা এমনিতেই বেহাল আমজনতার। এমন অবস্থায় তেলের ‘শতদামের’ এই রেকর্ডে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সকলেরই প্রশ্ন, করোনাকালে যেখানে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা, সেখানে সরকারের এমন বিবেকহীন আচরণ কেন?
পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোট মেটার পর থেকে লাগাতার দামি হচ্ছে তেল। ৪ মে থেকে বুধবার পর্যন্ত পেট্রল বেড়েছে মোট ৩৬ দিন। আর ডিজেল ৩৪ দিন। সে দিন থেকে কলকাতায় পেট্রল লিটারপিছু দামি হয়েছে মোট ৯.৬১ টাকা। আর গত এক বছরে ১৮.১৩ টাকা। ৩৪ দিনে ডিজেলের দামে বৃদ্ধি ৮.৮৯ টাকা, এক বছরে ১৭.৮৬ টাকা।
একে তো পরিবহণ জ্বালানির দাম বাড়ায় বাজারে জিনিসের দরে আগুন। তার উপরে ৯০০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। তেলের চড়া দরের জন্য সাত বছরে উৎপাদন শুল্ক বিপুল হারে বাড়ার পরিসংখ্যান দেখিয়ে বিরোধীরা বিঁধছেন মোদী সরকারকে।
সংশ্লিষ্ট মহল এই প্রশ্নও তুলছে, যে নেপাল, ভুটানের মতো পড়শি রাষ্ট্র ভারত থেকে তেল আমদানি করে, তারা তা হলে ক্রেতাদের এ দেশের তুলনায় কম দামে জ্বালানি কেনার সুবিধা দেয় কী করে? মোদী সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য বার বারই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চড়া দামকে কাঠগড়ায় তোলার পাশাপাশি যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট কমানোর কথা বলে পেট্রল-ডিজেলের দামে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার বল ঠেলছেন রাজ্যের কোর্টে।
ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অতিমারিতে এমনিতেই বিক্রি কম। উপরন্তু এত চড়া হারে দাম বৃদ্ধির জন্য আমাদের তেল কিনতেও অনেক বেশি খরচ হচ্ছে। কিন্তু কমিশন বাবদ আয় এক। সব মিলিয়ে ব্যবসা চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্তা প্রসেনজিৎ সেন জানিয়েছেন, পেট্রলের দরের এই সেঞ্চুরির প্রতিবাদে আজ পাম্পে কালো ব্যাজ পরে কাজ করবেন তাঁরা। পাশাপাশি জেলার মতো সেখানেও সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আলো নেভানো থাকবে। পাম্প মালিকরা বলছেন, তেলের দাম বাড়লে ভ্যাটের হার একই থাকলেও, রাজ্যের কর বাবদ আয়ও বাড়ে অনেকটা। তাই কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের কাছেই কর ছাঁটার আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। গত ফেব্রুয়ারিতে অবশ্য এ রাজ্যে পেট্রল-ডিজেলের ১ টাকা করছাড় কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু পাশাপাশি তেল সংস্থাও দাম বাড়ানোয় সেই সুফল তেমন ভাবে পাননি রাজ্যবাসী।
তবে দেশ পেট্রলের ১০০ টাকা ছাড়ানো দর দেখেছে আগেই। প্রথম বার সেই ১৭ ফেব্রুয়ারি। সে দিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর। সেখানেই তেল সব থেকে দামি। প্রথম মেট্রো শহর হিসেবে মুম্বইয়ে পেট্রল ১০০ টাকা পার করে গত ২৯ মে। কিছু জায়গায় ইতিমধ্যেই ১০০ টাকা পার ডিজেল। তেলের দাম অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হতে পারে বলে অর্থনীতিবিদ, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তারাও শুল্ক ছাঁটার বার্তা দিয়েছেন একাধিক বার। কিন্তু মোদী সরকারের হেলদোল দেখা যায়নি। উল্টে তেলে কর ছাঁটা হোক বা এটিকে জিএসটি-র আওতায় আনা, দায় তারা রাজ্যের ঘাড়েই চাপাতে ব্যস্ত।
প্রসঙ্গত, দুই জ্বালানির দর সরকার আর নিয়ন্ত্রণ করে না। বিভিন্ন সংস্থা তাদের খরচ এবং লাভের হিসেবে সেই দর স্থির করে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও বাজারে প্রতিযোগিতা করে বলে দরে কয়েক পয়সার হেরফের হয়। তবে সাধারণ ভাবে ইন্ডিয়ান অয়েলের দর বাজারের মাপকাঠি হিসেবে প্রাধান্য পায়। আবার একই সংস্থার কাছাকাছি দু’টি পাম্প যদি নিজেদের চিহ্নিত দু’টি আলাদা ‘জ়োনে’ পড়ে, দরের তফাৎ হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy