আতঙ্কিত পোষ্য। —নিজস্ব চিত্র।
ঘরের মধ্যে ছোটাছুটি করে লুকোনোর জায়গা খুঁজছিল টবি। কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছে না বেচারা। বাইরে থেকে ছিটকে আসছে শব্দবাজির কানফাটানো শব্দ, আর অস্থির হয়ে আড়াল খুঁজছে টবি।
যন্ত্রণাটা তিন বছরের ল্যাব্রাডর টবির একা নয়। বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে কলকাতা, শহরতলি, এমনকী জেলাগুলিতে শব্দ দানবের এমন নির্বিচার তাণ্ডবে কষ্টে হাঁসফাস করেছে রসগোল্লা, পগাই, এলসা, রকি, মাসু-রা।
ওরা প্রত্যেকেই বাড়ির লোকেদের বড় আদরের। টবি-র অভিভাবক শুভ্রশ্রী চক্রবর্তী থাকেন যাদবপুরের ইস্টার্ন পার্কে। অন্য দিন মাটিতেই শোয় টবি। বৃহস্পতিবার ওই এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই বাজি ফাটার শব্দে আতঙ্কিত টবি তার মনিব শুভ্রশ্রীবাবুর সঙ্গে বিছানাতেই শুয়েছে। গল্ফ গার্ডেনের বাসিন্দা মধুবনী চট্টোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতা, ‘‘শব্দের ওই দাপট শুনে আমার পগাই (তিন বছরের পাগ)-এর চোখটা যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছিল। প্রচন্ড আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কাঁপতে থাকে। খাবার, এমনকী জল খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি সারাক্ষণ কোলে নিয়ে বসেছিলাম।’’
আরও পড়ুন: টুইটারে রাহুলের দাপট দেখে চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া শিবিরের
চিকিৎসক সুবীর ভট্টাচার্য-র কথায়, এই ধরণের বিকট শব্দ পোষ্যদের কানে গিয়ে ভয়ঙ্কর জোরে আঘাত করে। সেই আঘাত থেকে শ্বাসপ্রক্রিয়া ও হৃদস্পন্দনে সমস্যা তৈরি হয়। তাঁর কথায়, ‘‘এ বারেও কালিপুজোর দিন আমি সন্ধ্যার পর থেকে এমন ২০-২৫টি কল পেয়েছি, যেখানে শুধু শব্দ শুনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে কুকুর।’’ অনেক ক্ষেত্রে আগে থেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় কুকুরকে। প্রচণ্ড আতঙ্কে হৃদস্পন্দন বাড়তে বাড়তে তা বিকল হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ খেলে আতঙ্ক কিছুটা কমে।
বাগুইআটির সোমা চক্রবর্তীর পরিবারের সঙ্গে রসগোল্লা ঘর করছে কয়েক বছর। তার লাসার জন্য বিকেলের পরেই দরজা-জানলা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন সোমাদেবী। তাতেও আটকানো যায়নি রসগোল্লার আতঙ্ক। সোমাদেবীর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম, এ বার হয়তো শব্দের অত্যাচার কম হবে। কোনও লক্ষণ দেখলাম না।’’ ই এম বাইপাসের বাসিন্দা সুচন্দনা চট্টোপাধ্যায়ও জানান, তাঁর এলাকায় শব্দবাজির দাপট এ বারেও কমেনি। তাঁর তিন বছরের বিগল, এলসা এমনিতেই ভিতু। বৃহস্পতিবার গুটিসুটি মেরে পায়ের কাছে বসেছিল। সুচন্দনাদেবী বলেন, ‘‘আমার বাড়ির উল্টোদিকে একটি ঝিল রয়েছে। তার পাশ থেকেই যেন বেশি বাজি ফাটছিল।’’
লেক টেরেসের বাসিন্দা অরিজিৎ দত্ত সাত বছরের ল্যাব্রাডর মাসু-র জন্য বাধ্য হয়ে ফোন করেন চিকিৎসককে। দুম দুম করে বাজির শব্দে মাসু কাঁপছিল, তার মুখ থেকে ক্রমাগত লালা ঝরছিল। গড়িয়ার ব্রহ্মপুরের বাসিন্দা দীপঙ্কর দে নিজে ল্যাব্রাডর, ডোবারম্যান পুষলেও রাস্তার কুকুরদের প্রতি তাঁর অসীম যত্ন। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ির পোষ্যদের তাও দরজা জানলা বন্ধ করে, খাটের উপরে তুলে, আদর করে কোলের মধ্যে চেপে ধরে রাখা হয়। রাস্তার কুকুরেরা চাইলেও পালাতে পারে না। নির্মীয়মান বাড়ি, উঁচু দোকানের তলাই একমাত্র ভরসা। এ গলি থেকে ও গলি ছোটাছুটি করতে থাকে।’’
সুবীরবাবুর কথায়, শুধু তো কুকুর নয়, শব্দ দানবের এই দাপটে সমস্যা হয় বেড়াল, পাখি, খরগোশদেরও। এই সময়ে ওষুধের চেয়ে মনিবের পাশে থাকাটা আরও জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy