কবিরাগ পোদ্দার
সচরাচর এমনটা ঘটে না।
হালে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা অপরাধের কালিমামুক্ত হওয়ার পরে যৌন সংখ্যালঘুদের প্রতি পেশাগত পরিসরে খানিক সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। কিন্তু রূপান্তরকামী কোনও পুরুষ বা মেয়েকে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করতে দেখার ছবিটা এখনও দুর্লভ। সেই পরম্পরা এ বার ভাঙতে চলেছে।
২৮ বছরের অনুচ্চ যুবক কবিরাগ পোদ্দার কিছু দিন আগেও কেতকী নামেই পরিচিত ছিলেন। মানসিকতায় পুরুষ হলেও শরীরে এখনও তিনি নারীসুলভ। রূপান্তরকামী সেই পুরুষ এ বার সল্টলেকের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরিতে ঢুকেছেন। বছর চারেকের পুরনো সংস্থাটি প্রযুক্তির মাধ্যমে জনসংযোগ তথা ব্র্যান্ড নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিমেষ গোস্বামী জানান, তাঁর এগ্জিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে অফিসের প্রশাসনিক দিক এবং কাজকর্ম— দু’টোই দেখতে হবে কবিরাগকে। ‘‘বিরাট কিছু করিনি। কবিরাগকে তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতেই নেওয়া হয়েছে,’’ বলেন অনিমেষবাবু।
কবিরাগের হরমোনের চিকিৎসা চলছে। আগামী বছরে লিঙ্গ রূপান্তরের অস্ত্রোপচার করাতে চান তিনি। পেশাগত পরিসরের মূল স্রোতে সবে রূপান্তরকামীরা আসতে শুরু করেছেন। এখন সকলকেই কিছুটা ইতিবাচক মন নিয়ে এগোতে হবে বলে মনে করেন অনিমেষবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে কবিরাগের সঙ্গে আলাদা করে কিছু ক্ষণ কথা বলেছি। ভাল লেগেছে।’’ তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যৌন সংখ্যালঘু বা এলজিবিটি-ফ্রেন্ডলি কাজের পরিবেশ গড়ে তুলতে সর্বভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংগঠন ন্যাসকম-ও সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে। ন্যাসকমের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা নিরুপম চৌধুরী বললেন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত রূপান্তরকামী মানুষ খুবই কম। ‘ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুসিভিটি’ শাখা গড়ে তুলে সকলের প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রাখার উপরে জোর দিচ্ছি আমরা।’’
অনেক রূপান্তরকামী নিজেদের শরীরগত লিঙ্গ-পরিচয় নিয়েই চাকরিতে ঢোকেন। সরকারি চাকরির তেমন কিছু নমুনা আছে এ রাজ্যে। একদা শিলিগুড়ির কেতকী কিন্তু কাজে ঢুকেছেন কবিরাগ পরিচয়েই। স্কুলের উঁচু ক্লাসে শাড়ি পরতে হবে বলে বা ছেলেদের শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে— এই আশঙ্কায় রূপান্তরকামী অনেক ছেলে বা মেয়েই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। বাড়িতেও নানা ধরনের পীড়নের শিকার হয় তারা। সেখানে কবিরাগের উত্থান তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। বুধবার, চাকরির প্রথম দিনে রূপান্তরকামী যুবক হাসছেন, ‘‘আর পাঁচ জন পেশাদারের মতো মন দিয়ে কাজটাই করে যেতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy