নিরাপত্তারক্ষী আর দলের নেতা-কর্মী ছাড়া দেবের চারপাশে এ দিন ভিড় ছিল না। কেশপুরের শ্যামচাঁদপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
দ্বিতীয়বার সাংসদ হওয়ার পরে তালুকে প্রথম পা রাখলেন তারকা-রাজনীতিক। তাঁর আসার আগে বন্ধ কার্যালয় খুলল, সাফসুতরো হল, তবে উচ্ছ্বাস-ভিড়ের চেনা ছবিটা ফিরল না। কেশপুর ঘুরে ঘাটাল পৌঁছে তৃণমূল সাংসদ দেব নিজেই কবুল করলেন, ‘‘মানুষের মনই তো ভেঙে গিয়েছে। ভাঙা পার্টি অফিস সারানো যাবে। কিন্তু তার আগে মানুষের মন পেতে হবে।”
ঘাটাল লোকসভা থেকে জেতার পরে সোমবারই প্রথম এলাকায় এলেন দেব। যে কেশপুর ৯০ হাজারেরও বেশি লিড দিয়ে তাঁকে জিতিয়েছে, দেশের বাড়ির সেই এলাকাতেই তিনি এ দিন প্রথম যান। তবে নায়ককে ঘিরে ভিড়, ছুঁয়ে দেখার হিড়িক— কিছুই ছিল না এ দিন। কেশপুরের শ্যামচাঁদপুরে যখন তারকা-সাংসদ পৌঁছন, তাঁকে ঘিরে স্থানীয়দের কোনও ভিড়ই ছিল না। ভোটের ফলপ্রকাশের পর থেকে বন্ধ ছিল শ্যামচাঁদপুরের তৃণমূল কার্যালয়। দেব আসবেন। তাই এ দিন দুপুরে কার্যালয় খুলে সাফসুতরো করা হয়। আশপাশ অবশ্য ছেয়ে গিয়েছে পদ্ম-পতাকা।
আপনাকে ঘিরে তো সেই চেনা ভিড় নেই?
শ্যামচাঁদপুরের কার্যালয়ে বসে দেবের জবাব, ‘‘সত্যি বলতে কি, আজকে আমি এসেছি বলে সে ভাবে কাউকে জানাইওনি। প্রচারের সময়ও রাস্তায় লোকজন দাঁড়িয়ে থাকতেন। আজকে সেটা ছিল না। না জানিয়ে এসেছি বলেই ছিল না।’’ পরে দেব পৌঁছন ঘাটালে। সাকুল্যে মিনিট দশেক ছিলেন টাউন হলের কর্মিসভায়। সেখানেই তাঁর স্বীকারোক্তি, “আমাদের কোথাও ভুল-ত্রুটি ছিল, যা আমরা টের পায়নি। এতটাই আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমজনতার ঘরে আমরা পৌঁছনোর প্রয়োজন মনে করিনি। ভেবেছিলাম জেলা পরিষদ থেকে পঞ্চায়েত সবই আমাদের। কখন যে পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছে তা বুঝতে পারিনি।”
এ দিন কেশপুরে দেবের সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি, দলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পান। অজিত অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপির লোকেরা ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে।’’ সঞ্জয়ও বলেন, ‘‘এই দলীয় কার্যালয়েও ওরা ভোটের পরে হামলা করেছে।’’ দেবকে কাছে পেয়ে ‘যন্ত্রণা’র কথা বলেছেন দলের কর্মীরা। তৃণমূলের এক কর্মী দেবের উদ্দেশে সরাসরিই বলেছেন, ‘‘কেশপুর আপনাকে বাঁচিয়েছে। ৯২ হাজার ভোটের লিড দিয়েছে বলেই আপনি আজকে সাংসদ। এ বার আপনি কেশপুরকে বাঁচান!’’ জবাবে দেবের আশ্বাস, ‘‘দু’সপ্তাহ হয়েছে ভোট গিয়েছে। তার মধ্যেই তো কেশপুরে এলাম। কেশপুর থেকেই শুরু করলাম। মাঝেমধ্যেই আসব।’’
লোকসভা ভোটের বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর বার্তাও এ দিন দিয়েছেন দেব। ঘাটালের কর্মিসভায় তিনি বলেন, “ফেসবুক-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় মজে ছিলাম। সরকার যে এত উন্নয়ন করেছে, সেই বার্তা ভোটারদের কাছে যায়নি। ভোটের ফল তাই খারাপ হয়েছে। এটা প্রয়োজন ছিল। এ বার ফের তেড়েফুঁড়ে লাগতে হবে।”
এলাকায় শান্তি বজায় রেখে মিলেমিশে কাজ করার বার্তাও দেন দেব। দেবের কথায়, ‘‘ভোট হয়ে গিয়েছে। এ বার আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে, মিলেমিশে উন্নয়নের কাজ করতে হবে। তবেই আমরা শান্তিতে থাকতে পারব।’’ দেবকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘‘যে জেতার জিতেছে। কেউ কেন্দ্রে জিতেছে, কেউ রাজ্যে জিতেছে। এ বার সবাই মিলে উন্নয়নের কাজটা করতে হবে।’’
শৈশবের সময়টা বাদ দিলে, তারকা-দেব ২০১৪ থেকে নিয়মিত কেশপুরে আসছেন। এই প্রথম সেখানে তিনি দেখলেন মানুষজনের তাঁকে ঘিরে উৎসাহ নেই। শ্যামচাঁদপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের পাশে, রাস্তার ধারের ট্যাপকলে জল নিতে এসেছিল শিবম পাল। দেবকে দেখলি? সপ্তম শ্রেণির শিবম বলছিল, ‘‘গাড়ি থেকে নামার সময়ে একটু দেখেছি। আবার বেরোনোর সময়ে একটু দেখে নেব। পার্টি অফিসে যাব না!’’
‘নিঃসঙ্গ’ দেবকে নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিজেপি। ঘাটালে দেবের বিরুদ্ধে যিনি বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন, সেই ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘কেশপুরে বোমা ছুঁড়ে, পাথর ছুঁড়ে ছাপ্পা ভোট করেছে তৃণমূল। মানুষ এ সব বরদাস্ত করেন না। আজকের ছবিটা থেকেই তা পরিষ্কার।’’
তৃণমূলের দাবি, কেশপুরে জনসংযোগ কর্মসূচিতে এসেছিলেন দেব। জনসংযোগ কি আদৌ হল, দিনের শেষে সেই প্রশ্ন চরকিপাক খেয়েছে শাসক দলের অন্দরেই।
শ্যামচাঁদপুরে তৃণমূল কার্যালয়ের কাছেই বিজেপির জমায়েত ছিল। দেব কেশপুর ছাড়তেই বিজেপির জমায়েত থেকে স্লোগান ওঠে, ‘জয় শ্রীরাম’। তৃণমূলের লোকজনও পাল্টা স্লোগান তোলেন, ‘জয় হিন্দ’। দু’পক্ষের উত্তেজনায় সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে পুলিশ এ দিন দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy