জল-চিত্র: পুরসভার গাড়ি থেকে পানীয় জল ভরে নিচ্ছেন সমাবেশে আসা সমর্থকেরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
ছোট দলে ভাগ হয়ে মিছিলটা চলছিল। জলের গাড়ির কাছে এসেই গতি কমল মিছিলের। সঙ্গে আনা প্লাস্টিকের বোতলে জল ভরতে শুরু করে দিলেন সকলে। তার মধ্যেই কেউ এক জন দু’আঁজলা ভরে মুখে-ঘাড়ে জল দিচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গেই চিৎকার করে উঠলেন ভরত পাসোয়ান। ‘‘মুখ ধোনে কা পানি নেহি হ্যায়! ইয়ে পিনে কা পানি হ্যায়।’’ হঠাৎ চিৎকার শুনে যিনি চোখে-মুখে জল দিচ্ছিলেন, কোনও মতে এলাকা ছেড়ে পালালেন। ভরত গজগজ করতে করতে বললেন, ‘‘এই জলে মুখ ধুচ্ছে!’’
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের উপরে দাঁড়ানো কলকাতা পুরসভার জলের গাড়ি। সেই জলের গাড়ির পাশেই সকাল থেকে বসে আছেন ভরত। কে, কী ভাবে পুরসভার গাড়ি থেকে জল নিচ্ছে, তার উপরে নজরদারি করছেন। ভরত জানালেন, শাসকদলের স্থানীয় এক নেতা তাঁকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন। ভরত বলছিলেন, ‘‘ভ্যান চালাই। ফুটপাতেই থাকি। পাড়ার এক দাদা বলল, জলের গাড়ির পাশে থাকতে হবে। তাই সকাল থেকে এখানে বসে।’’
ভরত যেখানে বসে কথাগুলো বলছিলেন, তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জয়দেব দে। শাসকদলের ২১ জুলাই সমাবেশে যোগ দিতে বর্ধমান থেকে এসেছেন জয়দেববাবু। মিছিল করে সমাবেশে যাওয়ার পথে জলের গাড়ি দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ভরতকে সমর্থন করে বললেন, ‘‘একদম ঠিক। জল কোনও ভাবে নষ্ট করা যাবে না!’’ জয়দেববাবুর সঙ্গী অতুল প্রামাণিক বললেন, ‘‘জল নিয়ে এত আলোচনা চলছে। তার মধ্যে জল কেউ নষ্ট করে!’’ মিছিলে যোগদানকারী মিতা দে বললেন, ‘‘মিছিলে এসেছি বলে জল নষ্ট করতে হবে না কি! আমরাও তো হাঁটছি অনেক ক্ষণ। কিন্তু খাওয়ার জল চোখে-মুখে দেব কেন!’’
ভরত, জয়দেব, অতুল, মিতাদেবীরা যা বললেন, রবিবার ২১ জুলাই সমাবেশের জল-চিত্রের নির্যাস সেটাই। যেখানে শহরে জল অপচয়ের চিত্রটা ধারাবাহিক, সেখানে এ দিন কিছুটা ব্যতিক্রমী ভাবেই ‘জল-সচেতন’ শহর! অন্তত মিছিলে যোগদানকারী মানুষের একাংশ!
এমনিতে কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে শিয়ালদহ, মৌলালি, মহম্মদ আলি পার্ক-সহ বিভিন্ন জায়গায় এ দিন আটটি জলের গাড়ি ছিল। গাড়িগুলির সঙ্গে লাগানো কল খুলে মিছিলে যোগ দিতে আসা মানুষ জল নিয়েছেন। নিয়ম মেনে তা বন্ধও করেছেন। কোনও কোনও জায়গায় পুরসভার জলের গাড়ির চালকই জল নেওয়ার বিষয়টি দেখভাল করেছেন, কোথাও আবার স্থানীয় শাসকদলের তরফে লোক ছিল। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘পুরসভার তরফে এ দিন সব মিলিয়ে ৩২ হাজার লিটারের মতো পানীয় জল সরবরাহ করা হয়েছিল। প্রতিদিন শহর জুড়ে পুরসভা যে পরিমাণ জল সরবরাহ করে, তার কাছে এটা কিছুই না! এই পরিমাণকে তুচ্ছ বললেও কম বলা হয়। মানুষ যে সচেতন হচ্ছেন, সেটাই আশার।’’
ধারাবাহিক ভাবে জলসঙ্কট নিয়ে আলোচনা কোথাও যেন ছাপ ফেলেছে মিছিলে যোগদানকারী মানুষের একাংশের মধ্যে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরাও। হয়তো সচেতন হওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম, তবুও যেন সেটাই ক্রমাগত জল অপচয়ের মানচিত্রে একক আলোর বিন্দু! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক পঙ্কজকুমার রায় বলছিলেন, ‘‘আসলে ক্রমাগত জলসঙ্কট নিয়ে আলোচনা চলছে। তাতে খুব অল্প সংখ্যায় হলেও মানুষ সচেতন হয়েছেন। এটা একটা ইতিবাচক দিক ঠিকই। কিন্তু এই মানসিকতাকেই ধরে রাখতে হবে।’’
সেই মানসিকতা বজায় থাকবে কি না, তা সময় বলবে। তবে ‘মিছিলে এসেছি বলে কি জল নষ্ট করব?’, এই মানসিকতা নিয়েই এ দিন পথ চলেছে শহর!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy