ছবি রয়টার্স।
বছর দশেক আগেকার ঘূর্ণিঝড় আয়লার ধাক্কা পুরোপুরি সামলে উঠতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল সুন্দরবনের। চলতি মাসের ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ধাক্কা কাটিয়ে সুন্দরবন কবে ছন্দে ফিরবে? ঝড়-বিধ্বস্ত বাদাবনে মূল প্রশ্ন এখন এটাই। ঝড়ে লন্ডভন্ড অরণ্যের ক্ষতিপূরণ কবে হবে, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে। ফলে আয়লার পরে সুন্দরবনের যে-পরিস্থিতি হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি হবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন কেউ কেউ।
ঘূর্ণিঝড়ের হামলা ঠেকাতে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য কলকাতা-সহ গোটা বঙ্গীয় উপকূলের ঢাল হিসেবে কাজ করে। বুলবুলের হামলায় অনেক জায়গায় সেই ঢালই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বন দফতরের খবর। সুন্দরবন সংরক্ষিত জীবমণ্ডলের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক বনকর্তা জানান, ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক একটি রিপোর্ট তাঁরা ইতিমধ্যেই পেশ করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির সবিস্তার হিসেবনিকেশের কাজও চলছে। ‘‘তিনটি চিতল হরিণ মারা গিয়েছে বকখালিতে। এ বারের ঝড়ে আর কোনও বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর এখনও নেই। তবে সুন্দরবনের জঙ্গলে প্রচুর গাছ পড়ে গিয়েছে। জঙ্গলের লাগোয়া বন দফতরের অফিস ও পর্যটন কেন্দ্রের বাড়ি, সোলার প্যানেল, পাইপলাইন ভেঙে গিয়েছে,’’ বলেন ওই বনকর্তা। ঝড়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাকদ্বীপে গিয়ে বন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করতে বলেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকে। ওই বনকর্তা জানান, জেলাশাসক এবং জেলা বনাধিকারিক (ডিএফও) সমন্বয়ের ভিত্তিতেই কাজ করছেন। কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।
আয়লার দাপটে স্বাভাবিক জীবিকা হারানোয় জঙ্গল ও নদীর সম্পদের উপরে বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন অনেক বাসিন্দা। তার প্রভাব পড়েছিল সুন্দরবনের পরিবেশের উপরেও। গত কয়েক বছরে বিকল্প জীবিকা ও পর্যটনকে কেন্দ্র করে আয় বাড়িয়ে পরিবেশ রক্ষা করার প্রকল্প চালু হয়েছিল। প্রশাসনের খবর, জঙ্গলের লাগোয়া দ্বীপগুলিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে হোম স্টে বা লজ তৈরি করে পর্যটন ব্যবসা বাড়ছিল। তার বেশির ভাগই গুঁড়িয়ে দিয়েছে বুলবুল। এমনকি বহু বড় মাপের রিসর্টও তছনছ হয়ে গিয়েছে। দয়াপুরের এমনই একটি রিসর্টের কর্তা বলছেন, ‘‘আয়লার পরে এক বার সব সামলে নিয়েছিলাম। এই ঝড়ে আমাদের কার্যত কোমর ভেঙে গিয়েছে! কবে, কী ভাবে সামলে উঠতে পারব, জানি না।’’ হোম স্টে, ছোট-বড় রিসর্টের উপরে
নানা ভাবে নির্ভরশীল ছিল বহু স্থানীয় মানুষের জীবন ও জীবিকা। আসন্ন শীতকালীন পর্যটন-মরসুমে রিসর্ট ও লজ বন্ধ থাকলে তার সঙ্গে যুক্ত অনেকের জীবিকা নির্বাহের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই পেটের তাগিদে ফের জঙ্গলের গাছ কাটা বা নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ধরার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বন দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, দ্রুত পরিকাঠামো মেরামতের পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রুটিরুজি নিশ্চিত করার পরিকল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy