Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Sahebnagar

জলঙ্গিতে মৃতদেহ আঁকড়ে রাস্তায় বসল মানুষ

এ দিন সকাল থেকে মৃত দুই গ্রামবাসীর দেহ সামনে রেখে নিয়ে শুরু হয়েছিল অবরোধ। ভরোর কয়েকশো গ্রামবাসী বেলা বাড়তেই হাজার ছুঁয়ে যায়।

নিহতদের দেহ নিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

নিহতদের দেহ নিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভ। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

চাপা অসন্তোষ যে রয়েছে, বুধবার রাত থেকেই তার আঁচ ছড়িয়েছিল এলাকায়। বৃহস্পতিবার ভোর ভাঙতেই দুই গ্রামবাসীর দেহ জলঙ্গি-সাহেবনগর রাজ্য সড়কের উপরে রেখেই শুরু হয় দ্বিতীয় দফার প্রতিবাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে উত্তাপ। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই কয়েক হাজার গ্রামবাসীর অবরোধ, স্লোগানে চড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ।

বুধবার, সীমান্তের ওই গ্রামে গুলিতে নিহত হয়েছিলেন দুই গ্রামবাসী। আহতের সংখ্যা ছিল অন্তত তিন। পুড়েছিল পুলিশের গাড়ি। এ দিন সকাল থেকে মৃত দুই গ্রামবাসীর দেহ সামনে রেখে নিয়ে শুরু হয়েছিল অবরোধ। ভরোর কয়েকশো গ্রামবাসী বেলা বাড়তেই হাজার ছুঁয়ে যায়। তাঁদের দাবি— মূল অভিযুক্তদের রাজনীতির রং না দেখেই গ্রেফতার করতে হবে। সেই সঙ্গে, মুক্তি দিতে হবে গ্রেফতার হওয়া ‘নিরীহ তিন গ্রামবাসীকে।’ মৃতদের পরিবার পিছু অবিলম্বে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও দাবি করে বসেন সাহেবনগরের গ্রামবাসীরা। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি ‘সামাল দিতে না-পারা’ স্থানীয় থানার ওসি’রও অপসরণ চেয়ে বসেন তাঁরা।

পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পুলিশ সুপার অজিত সিংহ যাদব তলব করেন সদ্য জলঙ্গি থানা থেকে বদলি হয়ে যাওয়া ওসি বিপ্লব কর্মকারকে। ডেকে পাঠানো হয় জেলার অন্য দুই পুলিশ অফিসার বেলডাঙা থানার ওসি মহম্মদ জামালউদ্দিন এবং সুব্রত ঘোষকেও। সীমান্তের ওই এলাকায় দীর্ঘ দিন কাজ করার সুবাদে এলাকার মানুষের সঙ্গে তাঁদের জনসংযোগ ভাল হওয়ায় ওই পুলিশ কর্তারা গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার আলোচনায় শেষ পর্যন্ত সব দাবিই ‘সহানুভূতি’র সঙ্গে দেখার আশ্বাস পেয়ে অবরোধ ওঠে। ততক্ষণে ওই রাজ্য সড়কে থমকে গিয়েছে কয়েকশো গাড়ি।

বুধবার সকালে জলঙ্গির সাহেবনগরে ‘নাগরিক মঞ্চ’ নামে একটি স্থানীয় সংগঠন নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বন‌্ধের ডাক দিয়েছিল। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের একাংশ জোর করে সেই বন‌্ধ তুলতে গেলে বচসা থেকে হাতাহাতি এবং তারই পরিণতিতে শুরু হয় বোমা-গুলির লড়াই। সেই গুলিতে মারা যান দু’জন স্থানীয় গ্রামবাসী।

গুলি চালানোর ওই ঘটনায় গ্রামবাসীদের অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূলের জলঙ্গি ব্লক সভাপতি তহিরুদ্দিন মণ্ডলের দিকে। তবে, গুলিতে আহত হন তহিরুদ্দিনের ভাই মন্টুও। সেই সূত্রে, পুলিশের দাবি ছিল গুলি ছুটেছিল দু’তরফেই।

তবে, ওই ঘটনায় হত, স্থানীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন আনারুল বিশ্বাসের ভাইপো ইনজামামুল দাবি করেন, ‘‘জলঙ্গির ওসি উৎপল দাসের প্রত্যক্ষ মদতেই তহিরুদ্দিন মণ্ডলের প্রতিপত্তি। বুধবার, পুলিশের চোখের সামনেই পিস্তল উঁচিয়ে বেপরোয়া ভাবে গুলি চালিয়েছে তহিরুদ্দিন ও তার দলবল।’’ জলঙ্গির ওসি উৎপল দাস অবশ্য সে কথা মানতে চাননি।

তবে, তৃণমূলের তরফে দলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পুলিশ নিজের মতো তদন্ত করছে। কারা বন‌্ধ ডেকেছিল তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। গন্ডগোলের পিছনে কারা ছিল খতিয়ে দেখা হবে তা-ও। মনে রাখবেন আইন আইনের পথেই চলবে।’’

এ দিন মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে এসেছিলেন কংগ্রেস সিপিএম এবং তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। সকলেই দাবি তুলেছেন অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির। জলঙ্গির সিপিএম নেতা ইউনুস সরকার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই পুলিশের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। তার দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুলিশের সামনে ঘুরল কী করে!’’ কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার গলাতেও সেই একই সুর, ‘‘ঘটনার প্রকৃত তদন্ত এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার না হলে কংগ্রেসও এই ঘটনা নিয়ে পথে নামবে।’’ এলাকার পঞ্চায়েত

সমিতির সদস্য তৃণমূলের মোরসালিন ইসলাম বলেন, ‘‘নয়া আইনের বিরোধিতা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ফলে নাগরিক মঞ্চের নামে সাধারণ মানুষ যখন তার বিরোধিতা করছে তাদের পাশে দাঁড়াতে কোনও অসুবিধা নেই। অভিযুক্ত আমার দলের হলেও উপযুক্ত শাস্তি পাক সেটাই চাইছি।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘অভিযুক্ত যেই হোক, আমার দলের যে পদেই থাকুক না কেন, যদি দোষ করে থাকে সে উপযুক্ত শাস্তি পাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sahebnagar Protest Road Block
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy