Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নাগরিকত্ব আইন ঘিরে নানা প্রশ্ন মতুয়াদের

মতুয়াদের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে ছড়াচ্ছে নানা বিভ্রান্তি। এক দিকে যেমন রয়েছে উচ্ছ্বাস, পাশাপাশি রয়েছে সংশয়ও।

উচ্ছ্বাস: শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে আনন্দে মাতলেন মতুয়ারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

উচ্ছ্বাস: শান্তনু ঠাকুরকে নিয়ে আনন্দে মাতলেন মতুয়ারা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৩২
Share: Save:

এক পক্ষ প্রশ্ন বলছেন, তাঁদের দাবি ছিল নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। কিন্তু নতুন আইনে তার ব্যবস্থা হল কই। বলা তো হচ্ছে, পাঁচ বছর থাকার পরে আবেদন করতে হবে। অন্য পক্ষের আছে পাল্টা যুক্তি।

সব মিলিয়ে মতুয়াদের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে ছড়াচ্ছে নানা বিভ্রান্তি। এক দিকে যেমন রয়েছে উচ্ছ্বাস, পাশাপাশি রয়েছে সংশয়ও।

নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর থেকে প্রতীক্ষায় ছিলেন মতুয়া ভক্তদের অনেকে। কবে ঘরে ফিরবেন, বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। কারণ, মতুয়া ভক্তদের একাংশ মনে করছেন নতুন নাগরিকত্ব আইনে তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে শান্তনুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ শান্তন ঠাকুরনগরে মতুয়াদের পীঠস্থান ঠাকুরবাড়িতে ফিরেছেন দিল্লি থেকে। সেই খবর পেয়ে সকাল থেকে মতুয়া ভক্তেরা ঠাকুরবাড়িতে জড়ো হতে থাকেন। শান্তনুর নামে জয়ধ্বনি দেন। শনিবার সকালে শান্তনু ঘর থেকে বেরিয়ে হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে গিয়ে মালা দেন। মালা দেন ধর্মগুরু প্রথমরঞ্জন ঠাকুর ও বড়মা, বীণাপানি ঠাকুরের মূর্তিতে। পরে বলেন, ‘‘ঠাকুরবাড়ি হল ভারতের উদ্বাস্তু আন্দোলনের পীঠস্থান। ঠাকুরদা প্রমথরঞ্জন ঠাকুর উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তাই দিল্লি থেকে তাঁদের শ্রদ্ধা জানালাম।’’

অনেকে শান্তনুকে কাঁধে তুলে উল্লাসে মেতে ওঠেন। তাঁদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের প্রচারে শান্তনু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ভোটে জয়ী হলে তিনি উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্বের দাবি পূরণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বুঝিয়ে তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

যদিও নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে অনেক মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি মমতা ঠাকুর শনিবার ঠাকুরবাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করে নতুন নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা যাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিক এবং পূর্বপুরুষ ধরে বসবাস করছি, নতুন নাগরিকত্ব আইনে তাঁদের শরনার্থী বানানো হচ্ছে। যে সব নাগরিকের ভোটে জয়ী হয়ে যাঁরা দিল্লিতে আইনসভায় ওই আইন পাস করালেন, তাঁরা নাগরিক না হলে ভোটটা কী করে দিলেন?’’ মমতার প্রশ্ন, কেন্দ্রের তরফে বলা হচ্ছে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তা হলে এ দেশে যাঁরা ইতিমধ্যেই নাগরিক, তাঁদের কেন নতুন করে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে?

মতুয়া মহাসঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, ও পার বাংলা থেকে এ দেশে আসা উদ্বাস্তু মতুয়াদের সংখ্যা গোটা দেশে প্রায় ৬ কোটি। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন তিন কোটি মতুয়া। দেশ ভাগের পরে বিভিন্ন সময়ে ও পার বাংলা থেকে বহু মানুষ এ দেশে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেছেন। জমি কিনে বাড়ি কিনেছেন। সরকারি স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করছেন। সরকারি চাকরি করছেন। জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তাঁদের সন্তানেরা এ দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন। বেশির ভাগেরই এ দেশের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাঁরা বহু দিন ধরে ভোটও দিচ্ছেন। তা হলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাঁরা তো ইতিমধ্যেই এ দেশের নাগরিক। নতুন করে কেন নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের প্রশ্ন আসছে।

ও পার বাংলা থেকে মতুয়া উদ্বাস্তুদের একটা বড় অংশ বাগদা ব্লকে বসবাস করেন। অনেকেই জানালেন, এ দেশের নাগরিক হিসাবে নথিপত্র রয়েছে। বহু দিন ধরে ভোট দিচ্ছেন। তাঁদের মতে, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলে তো প্রমাণ হয়ে যাবে, তাঁরা উদ্বাস্তু ও বেআইনি ভাবে অনুপ্রবেশ করেছিলেন।

মমতা বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম, নিঃশর্ত নাগরিকত্ব। কিন্তু নতুন আইনে কোথাও বলা নেই, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে যাঁরা এসেছেন তাঁরা সকলে নাগরিক। বলা হয়েছে, পাঁচ বছর থাকার পরে আবেদন করতে হবে। তা হলে নিঃশর্ত নাগরিকত্বের কথা আসছে কোথা থেকে?’’

এ সব প্রশ্নের উত্তরে শান্তনু বলেন, ‘‘নতুন নাগরিকত্ব আইন সম্পূর্ণ নিঃশর্ত। কোনও নথিপত্র ছাড়াই উদ্বাস্তু মানুষেরা নাগরিকত্ব কার্ড পাবেন। কেন্দ্রের তরফে একটি ফর্ম দেওয়া হবে, সেখানে নাম, বাবার নাম, বয়স, জাতি এবং বাংলাদেশের কোন জেলা থেকে এসেছেন— এই তথ্যটুকু জানাতে হবে। তাঁদের আর কোনও নথিপত্র দিতে হবে না।’’ তাঁর আশ্বাস, এ সব মানুষের সম্পত্তি, চাকরি, সন্তানের লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য সব নিরাপদ থাকবে। শান্তনুর কথায়, ‘‘দেশভাগের পরে কারও বাবা এ দেশে এসেছেন। তিনি তো সিটিজেনশিপ কার্ড বা মাইগ্রেশন কার্ড নেননি। পরবর্তী সময়ে এ দেশে তাঁদের ছেলেপুলে, নাতি-নাতনি হয়েছে। তাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিক হতে পারেন। কিন্তু বাবাকে তো নাগরিকত্ব কার্ড বা মাইগ্রেশন কার্ড নিতে হবে। তা হলেই তো তিনি বৈধ নাগরিক বলে বিবেচিত হবেন।’’

কারণ, তাঁর মতে, সব কিছু ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড বাবার পরিচয়ে হয়। আর আবেদন করে শুধু সেলফ ডিক্লারেশন (নিজেই জানানো) দিতে হবে। কোনও নথিপত্র লাগবে না।

মমতার দাবি, নতুন আইনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি নেই। এ জন্য ২০০৩ সালে আন্দোলন শুরু করেছিলেন তাঁরা। মমতার কথায়, ‘‘মতুয়া ও উদ্বাস্তুদের জন্য এই আইন পরিপন্থী। না বুঝে অনেক মানুষ আইনটি সমর্থন করছেন। আমরা তাঁদের বোঝানোর কাজ শুরু করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Matua Citizenship Amendment Act CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy