শিল্পের জন্য দেওয়া জমিতে ‘হয় শিল্প, নয় জমি ফেরত’-এর স্লোগান উঠল বীরভূমে। বুধবার বোলপুরের শিবপুর মৌজায় ওই বিক্ষোভে সরকার অধিগৃহীত জমিতে আবাসন প্রকল্প নয়, শিল্প গড়ার দাবি তুলেছেন জমিদাতাদের একাংশ। ঘটনাচক্রে, এ দিন জেলার অন্য প্রান্ত থেকেও উঠেছে শিল্পের দাবি। দুবরাজপুরের লোবার ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’ এলাকায় কয়লা খনি শুরু করার আর্জি জানিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়েছে।
শিল্প গড়ার জন্য ২০০১-এ শিবপুরে প্রায় তিনশো একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্য৷ তার মধ্যে ২০৬ একরে শিল্প হবে বলে ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। তখন অনেকে জমি দিলেও, জমির দাম নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক নেননি শ’খানেক চাষি৷ রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ওই জমিতে কেউ শিল্প গড়েনি৷
শিল্প না-হওয়ায় ক্ষতিপূরণের দাবিতে ২০০৮-এ আন্দোলনে নামেন জমিদাতাদের একাংশ৷ অধিগৃহীত জমির সীমানা-খুঁটি উপড়ে চাষ শুরু করেন অনেকে। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে, ২০১২-র জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে গিয়ে সেই অধিগৃহীত জমিতে তথ্য-প্রযুক্তি বা আইটি হাবের শিলান্যাস করেন। বর্তমানে ওই জমির একাংশে আইটি হাবের ভবন গড়ে উঠছে। গত বছরের শেষে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন— শিবপুরের জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়বে সরকার। প্রশাসন জানিয়েছে, ১৩১ একর জমিতে ‘স্মার্ট সিটি’ (গীতবিতান), ৫০ একরে ‘বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার’ (কুটির শিল্পের জন্য), ১০ একরে আইটি-হাব গড়া হবে। চলতি মাসের গোড়ায় ‘গীতবিতান’-এর জন্য চিহ্নিত জমি ঘুরে দেখে ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মুখ্য সচিব দেবাশিস সেন।
শিবপুর মৌজার কাশীপুর, সুপুর, ডাঙাপাড়া এলাকার জনা তিরিশ জমিদাতা, কিছু খেতমজুর ও বর্গাদার এ দিন সকালে প্রস্তাবিত ‘গীতবিতান’ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে অধিগৃহীত জমিতে শিল্প করারই দাবি তোলেন। বিক্ষোভে সামিল হাসিবুদ্দিন খান, রায়হান শেখ, কল্পনা সাহা, ভৈরব ভাণ্ডারিদের বক্তব্য, এলাকায় শিল্প এলে তাতে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ পাবেন। কাজ মিলতে পারে অনুসারী শিল্পেও। সেই সঙ্গে দোকানপাট হবে। রাস্তা ভাল হবে। সব মিলিয়ে শিল্প হলে প্রত্যাশার ঝুলি ভরে যাবে এলাকাবাসীর। কিন্তু আবাসন প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দারা খুব বেশি কাজ পাবেন বলে তাঁরা মনে করেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘এখানে স্মার্ট সিটি হলে দু’-এক জন ড্রাইভার, পাহারাদারের কাজ পাবে। বাকিরা বুড়ো আঙুল চুষবে। তাই আমাদের দাবি, শিল্পের জন্য দেওয়া জমিতে শিল্পই আসুক। না হলে সিঙ্গুরের মতো ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি ফেরত দেওয়া হোক।’’ তাঁদের হুঁশিয়ারি, দাবি মানা না হলে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়বে।
শিল্পের পক্ষে সওয়াল করেছেন লোবার জমিদাতারাও। সেখানে প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনির জন্য বেসরকারি সংস্থার জমি কেনার পদ্ধতিকে ঘিরে বিতর্ক শুরু। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা না করে জমি কিনে খোঁড়াখুড়ি চলছে এই অভিযোগে আন্দোলন দানা বাঁধে। ২০১২-র ৬ নভেম্বর লোবায় পুলিশি-অভিযান চলে। কিন্তু শিল্প আর হয়নি। প্রস্তাবিত খনির জন্য ৩,২০০ একরের মধ্যে ৭০০ একর জমি কিনে হাত গুটিয়ে নেয় সংস্থা। এখন ডিভিসি একক ভাবে সেখানে কয়লা তোলার বরাত পেয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমিদাতাদের আবেদন, ‘ন্যায্য ক্ষতিপূরণ’ দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সেখানে কয়লা খনি শুরু করা যায়, তত ভাল। তেমন কিছু কি আদৌ হবে? লোবা-প্রসঙ্গে মন্তব্য করেননি প্রশাসনিক কর্তারা। আর শিবপুর-প্রসঙ্গে রাজ্য শিল্প দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওখানে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’’ জেলার বাসিন্দা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহেরও বক্তব্য, ‘‘শিবপুরের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যা ভেবেছেন, তাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ জমিদাতার সায় আছে। সেইমতো ওখানে উন্নয়নের কাজ চলবে। এ দিন যা হয়েছে, তা মুষ্টিমেয় লোক কারও প্ররোচনায় করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy