শোকার্ত শিখা।
দু’মাসের ছেলের দেহ কাপড়ে জড়িয়ে মা যখন নামলেন গাড়ি থেকে, গ্রামের মহিলারা কেউ চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। রবিবার সন্ধের পরে ছোট্ট শিবার দেহ সমাহিত করা হল। সন্ধের অন্ধকারে মিশে গেল সন্তানহারা মায়ের হাহাকার।
শনিবার রাতে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে মারা গিয়েছে দু’মাসের শিবা। তার মা শিখা গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তাঁর তৃণমূল করাটা মেনে নিতে পারতেন না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তাঁরা সকলে কট্টর বিজেপি সমর্থক। নানা অছিলায় মারধর করা হত শিখাকে। শনিবার সকালে ছেলেকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। অভিযোগ, সে সময়ে ভাশুর-ননদরা মারধর শুরু করেন। বুকে জড়িয়ে রেখেও ছেলেকে রক্ষা করতে পারেননি মা। চোট লাগে দুধের শিশুটির। শনিবার রাতেই মারা যায় হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
রবিবারই থানায় ভাশুর সুশান্ত, ননদ শিপ্রা শর্মা-সহ ছ’জনের নামে অভিযোগ জানান শিখা। গ্রেফতার করা হয় বিজেপির স্থানীয় যুব মোর্চার সভাপতি সুশান্তকে। পাড়া-পড়শিরা জানিয়েছেন, রগচটা সুশান্তকে পাড়ার কেউ ভাল চোখে দেখতেন না। গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতে পাড়ার লোকের তেমন যাতায়াতও ছিল না কারও। এক মহিলার কথায়, ‘‘শিপ্রার বিয়ে হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। সেখান থেকে যখন আসত, তখন নানা অজুহাতে সে-ও মারধর করত শিখাকে।’’ আর এক পড়শি মহিলার কথায়, ‘‘শিখা আর তাঁর স্বামী রবি তৃণমূল করেন। বাড়ির বাকিরা বিজেপি কর্মী। এই নিয়ে ওঁদের মধ্যে অশান্তি হত বলে শুনেছি।’’
পাঁচ বছরের মেয়ে মিঠিকে নিয়ে সোমবার ভোরেই হুগলির কোন্নগরে বাপের বাড়ি চলে যান শিখা। ফোনও বন্ধ। সদ্যোজাত ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে রবি ফিরছেন কেরল থেকে। মোবাইলে মৃত ছেলেকে শেষ বারের মতো দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পাড়া-পড়শিরা কেউ মত দেননি। রবি ফোনে বললেন, ‘‘আমি তৃণমূলের সঙ্গে মেলামেশা করি। দাদা বিজেপি করে। আমাকেও বিজেপি করতে বলত। এই নিয়ে অশান্তি ছিল পরিবারে।’’ ছেলের মৃত্যুর পরে শিখাও দাবি করেছেন, পারিবারিক বিবাদ যা-ই থাক না কেন, তাঁকে মারধরের পিছনে রাজনৈতিক আক্রোশও ছিল শ্বশুরবাড়ির লোকের।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এ দিনও দাবি করেন, পারিবারিক বিবাদের মাসুল গুণতে হয়েছে শিবাকে। তার মাকে মারধরের ঘটনায় রাজনীতির রং নেই বলেই দাবি বিজেপির জেলা নেত্রী ভাস্বতী সোমের। রবিবার শিবার মৃত্যুর খবর ছড়াতে এলাকায় যান স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। থানার সামনে জড়ো দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তোলেন। সোমবার তাঁদের কাউকে এলাকায় দেখা যায়নি। অনেকেই নবান্নে দলের বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন দলের একটি সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy