Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

দূষণ-দৈত্যের থাবা নাক, কান ও গলায়

শীত স্বাভাবিক নিয়মে সময়সীমা মেনে দাপট দেখালে শরীরের অনেক সমস্যা এড়ানো যায়। আবার শীত বিশেষ জারিজুরি দেখানোর সুযোগ না-পেলে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা বাড়ে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৯
Share: Save:

শীত স্বাভাবিক নিয়মে সময়সীমা মেনে দাপট দেখালে শরীরের অনেক সমস্যা এড়ানো যায়। আবার শীত বিশেষ জারিজুরি দেখানোর সুযোগ না-পেলে স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যা বাড়ে। যেমন নাক-কান-গলার (ইএনটি) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, নাক, কান ও গলার সমস্যায় যাঁরা ভোগেন, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি— এই চার মাস তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। অর্থাৎ শীতের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত ওই তিন প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় বিশেষ ভাবে নজর রাখা দরকার।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, বছরের এই চার মাসে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ নাক-কান-গলার সংক্রমণে ভোগেন। কলকাতার বিশেষজ্ঞেরাও এই বিষয়ে একমত। তাঁরা জানাচ্ছেন, দিওয়ালির পরে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে দূষণের মাত্রাও বাড়ে। এই বায়ুদূষণের জেরে নাক, কান আর গলার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন বহু মানুষ।

বৃহস্পতিবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে অ্যাসোসিয়েশন অব ওটোল্যারিঙ্গলজিস্ট অব ইন্ডিয়া বা এওআই আয়োজিত সম্মেলনে এই বিষয়ে একাধিক গবেষণাপত্র পেশ করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ইএনটি বিশেষজ্ঞেরা। কলকাতার বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, শিশুদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যাচ্ছে, শীত কাল জুড়ে তাদের অনেকেই সর্দি-কাশিতে ভুগছে। সর্দির জেরে তাদের শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। বড়দের ক্ষেত্রে হঠাৎ হঠাৎ জ্বর হচ্ছে এবং তার পরেই দেখা দিচ্ছে নিঃশ্বাসের সমস্যা। ছোট এবং বড়, উভয়ের এত শ্বাস-সমস্যা দেখা দিচ্ছে পরিবেশ দূষণের জেরেই।

চিকিৎসক শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ, পাঁচ বছরের কম বয়সি যে-সব শিশু ফি-মরসুমে নাকের সংক্রামক রোগে ভোগে, পরবর্তী কালে তাদের হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দু’দশক আগেও শীত কালে নাক-কান-গলার সমস্যায় ভুগতেন বয়স্কদের একাংশ। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদেরও ওই তিন

প্রত্যঙ্গের সংক্রমণে ভুগতে দেখা যাচ্ছে। ওই চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা, দীর্ঘদিন নাকের সংক্রমণে ভুগলে ফুসফুসে জটিল রোগ হতে পারে। চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘নাক-গলার সমস্যা নিয়ে যাঁরা আসেন, তাঁদের ৭০ শতাংশই পরিবেশ দূষণের জেরে সংক্রামক রোগে ভুগছেন।’’

সব বয়সেই সংক্রমণ

• তিন থেকে তিরাশি, আক্রান্ত সকলেই

• নাক-গলার সমস্যায় ভুক্তভোগীর ৭০% ভুগছেন দূষণের জেরে

• ফি-মরসুমে হাঁপানির সমস্যায় ভুগছে ৬০% শিশু

• প্রতি বছর প্রায় ৫৫% ভুক্তভোগী নতুন করে ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা বা সিওপিডিতে আক্রান্ত হচ্ছেন

• শৈশবে নাকের সংক্রমণ পরে হাঁপানিকে ডেকে আনে

• শ্রবণশক্তি হরণ করছে শব্দদূষণ

• বাঁচতে হলে বাঁচাতে হবে পরিবেশ

দূষণের দাপটে নাক আর গলার সঙ্গে সঙ্গে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে কানেরও। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বিশেষত শব্দদূষণের জেরে মানুষের শ্রবণযন্ত্রে বিশ্রামের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। পরিণামে অচিরেই কমে যাচ্ছে শ্রবণশক্তি। অনেকেই নিতান্ত অল্প বয়সে শ্রবণক্ষমতা হারাচ্ছেন।

পরিবেশের দূষণ নাক-কান-গলায় কতটা কী কুপ্রভাব ফেলছে, সেই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে বলে এ দিন জানান ইএনটি বিশেষজ্ঞেরা। এওআই-এর সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইএনটি বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসক দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পরিবেশ দূষণের জেরে নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে সারা বিশ্বেই। কলকাতা তার বাইরে নয়। মানুষের সুস্থ থাকার জন্য পরিবেশের ভাল থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। কয়েক বছর ধরে দেখছি, শিশুরাও নাক-কান-গলার বিভিন্ন সংক্রামক রোগে ভুগছে। সাধারণ মানুষ সচেতন না-হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।’’

ভাল থাকতে হলে সচেতন হতেই হবে, সতর্ক করে দিচ্ছেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের প্রধান উৎপল জানা। সচেতনতা বলতে তিনি বিশেষ ভাবে পরিবেশ বাঁচানোর দিকে ইঙ্গিত করছেন। ‘‘পরিবেশ ভাল না-থাকলে আমরাও ভাল থাকব না। সংক্রমণ রুখতে দরকার সুস্থ আবহাওয়া। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমাদেরও এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার পদ্ধতি সম্পর্কে আরও জানতে হবে,’’ নিজেদের দায়দায়িত্বটাও এ ভাবে মনে করিয়ে দিচ্ছেন উৎপলবাবু।

অন্য বিষয়গুলি:

Cold and Cough Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy