Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Plasma Therapy

করোনা চিকিৎসায় প্লাজ়মা দিতে কাটছে না সংশয়

করোনা চিকিৎসার নিয়ম বলছে, সেই ব্যক্তিরই প্লাজ়মা দিতে হবে, সুস্থ হওয়ার এক মাসের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হননি।

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পরে যাঁদের অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে উঠছে, চিকিৎসার অঙ্গ হিসেবে তাঁদের প্লাজ়মা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে প্লাজ়মার চাহিদা ও জোগানে ফাঁক থেকে যাওয়ায়। যত রোগীর এই মুহূর্তে প্লাজ়মা থেরাপি প্রয়োজন, তার তুলনায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠে প্লাজ়মা দিতে এগিয়ে আসছেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক কম।

এর কারণ কী? রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী দীপঙ্কর মিত্রের বক্তব্য, এমনিতেই রক্ত দিতে অনেকে সঙ্কোচ বোধ করেন। কারও কারও মনে ভয়ও কাজ করে। অতিমারির বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ভয় এবং সংশয়, দুই-ই বেড়েছে। অনেকেই ভাবছেন, রক্ত দিলে তিনি আক্রান্ত হবেন না তো? আবার কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসার পরে তিনি এবং তাঁর পরিজনেরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। সেটাও প্লাজ়মা দিতে এগিয়ে না আসার একটা কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

করোনা চিকিৎসার নিয়ম বলছে, সেই ব্যক্তিরই প্লাজ়মা দিতে হবে, সুস্থ হওয়ার এক মাসের মধ্যে যিনি দ্বিতীয় বার সংক্রমিত হননি। সে ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার অন্তত ২৮ দিন পরে তিনি প্লাজ়মা দিলে তা করোনা আক্রান্ত অন্য কাউকে দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুন: আমপানে পাঁচিল ভেঙে বন্ধ পথ তিন মাসেও খোলেনি

দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘বহু মানুষ ব্লাড ব্যাঙ্কগুলিতে হন্যে হয়ে প্লাজ়মার জন্য ঘুরছেন। তাঁদের নিকটাত্মীয় করোনায় আক্রান্ত। মুশকিল হচ্ছে, আমাদের কাছে রক্তদাতাদের তালিকা থাকে। কিন্তু কারা করোনা চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন, সেই তালিকা তো নেই।’’ এ ব্যাপারে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে মনে করেন তিনি। দীপঙ্করবাবুর পরামর্শ, সুস্থ হয়ে উঠে বাড়ি ফিরছেন যে রোগীরা, তাঁদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বরের তালিকা তৈরি করা হোক। কারও প্লাজ়মা লাগলে প্রয়োজনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে।

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আর এক কর্মী প্রণব বেদিও বলছেন, ‘‘যাঁরা সুস্থ হয়ে ফিরছেন, তাঁরা প্লাজ়মা দিতে চাইছেন না। আবার যাঁরা দিতে চাইছেন, তাঁদের হয় করোনা হয়নি অথবা তাঁরা এখনও চিকিৎসাধীন।’’

আরও পড়ুন: মমতার ঘোষণায় শুরু তৎপরতা, তবু অনিশ্চিত কর্ড ব্লাড থেরাপি

তবে যোগাযোগ করলেই যে কেউ স্বেচ্ছায় প্লাজ়মা দিতে এগিয়ে আসবেন, এমনও ঘটছে না বলে জানাচ্ছেন শহরের একটি ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর তানিয়া দাস। তাঁর কথায়, ‘‘রক্তের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রয়োজনে যাঁরা সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন, অন্যের প্রয়োজনে সেই মানুষগুলিকেই মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখেছি।’’ এ ব্যাপারে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তিনি। তানিয়ারই সহকর্মী ভাস্কর মুখোপাধ্যায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ জুন হাসপাতালে ভর্তি হন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ৪ জুলাই। অগস্টের মাঝামাঝি বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি এক চিকিৎসকের জন্য প্লাজ়মা দিয়েছেন ভাস্কর। জানিয়েছেন, সুস্থ হয়ে আসার পরে অ্যান্টিবডি আইজিজি পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর শরীরে সেটির মাত্রা ৫২। কারও দেহে এই অ্যান্টিবডির মাত্রা কুড়ির উপরে থাকলে তবেই তাঁর প্লাজ়মা নেওয়া হচ্ছে।

মেডিসিনের চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যাঁরা কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন, যাঁদের রক্তে আইজিজি অ্যান্টিবডি যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয়েছে, তাঁরা নির্দ্বিধায় প্লাজ়মা দিতে এগিয়ে আসুন। এই সাহায্য একটি পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Plasma Therapy Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy