এই পেনের জন্যই বেঁচে গিয়েছেন প্রদীপ সিংহ। নিজস্ব চিত্র
হিন্দি ছবি ‘দিওয়ার’-এ ‘৭৮৬’ লেখা একটি পিতলের চাকতি পুলিশের বুলেট থেকে বার বার বাঁচিয়ে দিচ্ছিল অন্যতম নায়ক অমিতাভ বচ্চনকে। সেটা রুপোলি পর্দার গল্প। কঠিন বাস্তবে সোমবার দুর্বৃত্তদের গুলি থেকে বিরিয়ানির দোকানের কর্মী প্রদীপ সিংহকে বাঁচিয়ে দিয়েছে একটি মার্কার পেন।
সোমবার দুপুরে ব্যারাকপুরে বিরিয়ানির দোকানে লাইনবন্দি ক্রেতাদের হাতে বিরিয়ানির বাক্স তুলে দিচ্ছিলেন প্রদীপ। আর সেই কাজেই তাঁর সব সময়ের সঙ্গী ওই মার্কার পেন। ওই পেন দিয়েই কাগজের বাক্সের উপরে কোনওটায় লিখে দিতে হয় ‘মাটন’, কোনওটায় ‘চিকেন’।
ছবিতে পিতলের চাকতিটা থাকত বচ্চনের জামার বুকপকেটে। সোমবার প্রদীপেরও জামার বাঁ দিকের বুকপকেটে গোঁজা ছিল পেনটি। দোকানের সামনে এসে মোটরবাইকে বসা অবস্থাতেই এলোপাথাড়ি গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। চিকিৎসকেরা জানান, প্রদীপের বুকের বাঁ দিক ফুঁড়ে দিতে পারত একটি বুলেট। কিন্তু সেই বুলেট এসে ধাক্কা খায় তাঁর মোটা মার্কার পেনে। তার পরে দিক বদলে পাঁজর থেকে কিছুটা মাংস ও চামড়া ছিঁড়ে নিয়ে বুলেটটি ছিটকে বেরিয়ে যায়। প্রদীপ মঙ্গলবার বললেন, ‘‘পেনটাই আমাকে বাঁচিয়ে দিল, একটু উনিশ-বিশ হলে আর এখন কথা বলার অবস্থায় থাকতাম না।’’ প্রদীপ আপাতত ভাল আছেন। আজ, বুধবারের মধ্যেই নার্সিংহোম থেকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা।
বিরিয়ানির দোকানের মালিক বাপি দাস এ দিন ড্রয়ার থেকে ওই ভাঙা নীল মার্কার পেন বার করে বলেন, ‘‘এই কলমের জোরেই একটা প্রাণ বেঁচে গিয়েছে। কাল আমার কর্মচারী প্রদীপের বুকপকেটে ছিল কলমটি। বুলেট এতে লেগে ওর শরীর ছোঁয়। কলমটা অনেক মোটা হওয়ায় ওর আঘাত তেমন গুরুতর হয়নি।’’
অন্যান্য দিনের তুলনায় এ দিন দোকানে ক্রেতার ভিড় কম। দিনভর ব্যারাকপুর-বারাসত রোডের ধারে বিরিয়ানির দোকানে ইউটিউবার আর ব্লগারদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে খেই হারিয়ে ফেলছিলেন দোকান-মালিক বাপিবাবু। সোমবার দুপুরে গুলি চলেছে তাঁর দোকানে। এক ক্রেতা এবং এক কর্মী জখম হয়েছেন। তার পর থেকেই দোকান ঘিরে সংবাদমাধ্যম ও পুলিশের ভিড়। কিন্তু ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। মুখে কুলুপ এঁটেছেন ডিসি (সেন্ট্রাল)-সহ সংশ্লিষ্ট জ়োনের পুলিশকর্তারাও।
এ দিনেও পুলিশ পিকেট ছিল ওই বিরিয়ানির দোকানের সামনে। তা ছাড়াও যানবহুল পথের মাঝখানে বসানো হয়েছে দু’টি গার্ডরেল। নিত্যযাত্রী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এ ভাবে দিনেদুপুরে দুষ্কৃতীরা যদি পুলিশের নাকের ডগায় গুলি চালিয়ে অনায়াসে পালিয়ে যেতে পারে, তার পরে রাস্তায় গার্ডরেল বসিয়ে অযথা যানজট সৃষ্টি করা কেন? অর্ণব দাস নামে বিরিয়ানি কিনতে আসা এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমনিতেই এই রাস্তায় গাড়ির চাপ বেশি। পুলিশ সব সময় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গার্ডরেল বসিয়ে অযথা যানজট না-করলেই হত।’’
গুলি চালানোর ঘটনার তদন্ত করছেন স্থানীয় মোহনপুর থানার ওসি উত্তমকুমার সরকার। ঘটনার পর থেকেই বেশ কয়েক দফায় বিরিয়ানির দোকানটির মালিক থেকে তাঁর পরিবারের লোকজন, কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন তিনি। দোকানের যে-ফোনে হুমকি মেসেজ ও ফোন এসেছিল, তদন্তের স্বার্থে সেটি নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
ব্যবসায়িক রেষারেষি না পারিবারিক শত্রুতা— এই ঘটনার পিছনে ঠিক কী আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে তদন্তকারীরা জানান। কমিশনারেটের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হুমকি, মেসেজ, এগুলো গত শনিবার এবং তারও আগে এসেছে। তখনই অভিযোগ করা উচিত ছিল।’’ বাপিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোনও শত্রু নেই। কিন্তু কার মনে কী আছে, বুঝব কী করে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy