Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kolkata Doctor Rape-Murder Case

কোথাও বহির্বিভাগ সচল রাখার চেষ্টা, কোথাও ভোগান্তি রোগীদের, জেলায় জেলায় হাসপাতাল-চিত্র কেমন

চিকিৎসক সংগঠনের আট ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাকে প্রভাব পড়ল জেলায় জেলায়। কোথাও সম্পূর্ণ বন্ধ বহির্বিভাগ, কোথাও আংশিক। কোথাও আবার ওপিডির ধাঁচেই দেখা গেল বিকল্প পরিষেবার চেষ্টা।

আরজি কর-কাণ্ডে জেলায় জেলায় চিকিৎসকদের প্রতিবাদ।

আরজি কর-কাণ্ডে জেলায় জেলায় চিকিৎসকদের প্রতিবাদ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২৪ ১৪:৫৯
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে পরিষেবা বন্ধ রাখার ডাক দিয়েছে চিকিৎসক সংগঠন ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’। আট ঘণ্টার কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে তারা, যদিও জরুরি পরিষেবাকে কর্মবিরতির আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই তার ছাপ পড়তে দেখা গিয়েছে বিভিন্ন জেলার সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর। বেশ কিছু জায়গায় প্রভাব পড়েছে বেসরকারি হাসপাতালেও। জেলায় জেলায় রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভোগান্তির ছবিও উঠে এসেছে। যদিও কোনও কোনও জায়গায় বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও, বিকল্প ব্যবস্থায় রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

যেমন হুগলির চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ বহির্বিভাগের পরিষেবা। জুনিয়র চিকিৎসকদের কারও দেখা মেলেনি বলে অভিযোগ। সিনিয়র চিকিৎসকেরা কয়েক জন হাসপাতালের লিফ্‌টের সামনে রোগী পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা করছেন। তবে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকায় তার প্রভাব পড়েছে রোগী পরিষেবার উপর। সকাল থেকে অনেক রোগীই অপেক্ষা করতে করতে ফিরে গিয়েছেন হাসপাতাল থেকে। চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। এক রোগীর দাবি, দু’তিন বার গাড়ি বদলে সকাল ৭টার সময় তিনি হাসপাতালে পৌঁছন, কিন্তু ডাক্তার দেখাতে পারেননি। এ রকম অভিযোগ আরও রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও ডাক্তারের দেখা মিলছে না। কখন ডাক্তারের দেখা মিলবে, সে কথাও কেউ বলতে পারছেন না বলে দাবি রোগীর পরিজনদের।

দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের বহির্বিভাগেও সকাল থেকে পরিষেবা সকাল থেকে বন্ধ। পরে বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার খুললেও পরিষেবা পেতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে রোগীদের। যাঁরা বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন, তাঁরা এখন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যদিও হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক ধীমান মণ্ডলের, “বহির্বিভাগ বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগ চালু রয়েছে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীদের জরুরি বিভাগেই চিকিৎসা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।”

আসানসোল জেলা হাসপাতালে আবার বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের দেখা না মিললেও, হাসপাতালের একটি ফাঁকা বারান্দায় রোগী পরিষেবা চালু রেখেছেন চিকিৎসকরা। যদিও জরুরি বিভাগের উপরে একটি ঘরে বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে রোগীদের জন্য। আসানসোল জেলা হাসপাতালের সুপার জানিয়েছেন, সেখানে পরিষেবা চালু রয়েছে।

বুধবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের জন্য টিকিট কাউন্টার খোলা ছিল। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন রোগীরাও। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ হয়ে গেলেও, হাতে গোনা কয়েক জন ডাক্তারের দেখা মিলেছে।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেও বহির্বিভাগ সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। আরজি করে যে ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতিবাদে সাদা অ্যাপ্রনের উপরে কালো ব্যাজ লাগিয়ে পরিষেবা চালু রেখেছেন তাঁরা।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও বুধবার ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীদের। সকাল থেকে বিঘ্নিত হয়েছে বহির্বিভাগের রোগী পরিষেবা। বহির্বিভাগ খোলা থাকলেও, সব ক’টি বিভাগ সচল নেই। চর্মরোগ বিভাগ ও শিশুরোগ বিভাগের বহির্বিভাগ খোলা, কিন্তু বাকি সবগুলিই বন্ধ। হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক সঞ্জয় মল্লিক জানিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিকই রয়েছে। তিনি কর্মবিরতির জেরে বহির্বিভাগের পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে, সে কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। সুপার জানিয়েছেন, বহির্বিভাগের সবগুলি খোলেনি। শিশুরোগ ও চর্মরোগ বিভাগ খুলেছে।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেও সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর প্রভাব পড়েছে। বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে বহির্বিভাগ আংশিক সচল রয়েছে। মেডিসিন বিভাগ খোলা থাকলেও, সবগুলি বিভাগ খোলা নেই। হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দুবিকাশ বাগ জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল পরিষেবা চালু রাখার জন্য। কেউ শুনেছেন, কেউ শোনেননি।

বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, এই চিত্র গোটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতেই। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বংশীহারির বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এর প্রভাব পড়েছে। কর্মবিরতিতে শামিল হয়েছেন চিকিৎসকদের একাংশ।

তবে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলিতে নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও প্রভাব পড়েছে কর্মবিরতির। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার পথে নামলেন হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন তাঁরা। ওই বেসরকারি হাসপাতালেও বুধবার বন্ধ রাখা হয়েছে বহির্বিভাগের পরিষেবা। যদিও জরুরি বিভাগ ও ইনডোর পরিষেবা সচল রয়েছে।

বুধবার সকাল থেকে রাজ্যের উত্তর থেকে শুরু করে দক্ষিণ, একাধিক জেলায় এমনই বিভিন্ন খণ্ডচিত্র উঠে এল। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে কর্মবিরতিতে শামিল হলেও, কোথাও কোথাও পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা দেখা গেল চিকিৎসক মহলে। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়, তাই কোথাও আংশিক সচল রইল বহির্বিভাগ, কোথাও আবার বহির্বিভাগ বন্ধ রাখলেও, ওপিডির ধাঁচেই বিকল্প ব্যবস্থা চালু রাখার চেষ্টা হল। কিন্তু তার পরেও রোগীদের ভোগান্তি কমল না। জেলায় জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলিতে বুধবার সকাল থেকে দেখা গেল রোগী ও তাঁদের পরিজনদের ভোগান্তির ছবি। কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও মিলল না ডাক্তারের দেখা। কোথাও আবার ডাক্তার আসবেন— সে আশ্বাস মিললেও, কখন আসবেন সে বিষয়ে কোনও সদুত্তর পেলেন না বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীরা। দূর-দূরান্ত থেকে ডাক্তার দেখাতে এসে, সকাল থেকে ঠায় অপেক্ষার পর অনেকেরই ধৈর্য্যের বাধ ভাঙল। ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরলেন বাড়ি।

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Medical College And Hospital Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy