Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: পার্থকে বহিষ্কারের দাবি তুলে দিলেন কুণাল! তৃণমূলের অন্দরের চাপ এ বার প্রকাশ্যে এল

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব ও তৃণমূলের সমস্ত পদ থেকে সরানো হোক, টুইট করে এমন দাবিও জানালেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ১০:১৮
Share: Save:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্ব এবং দলীয় পদ থেকে সরানোর দাবি তুললেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। বস্তুত, কুণাল সরাসরি পার্থকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন। বৃহস্পতিবার সকালে কুণাল টুইট করে ওই দাবি তোলার পাশাপাশিই বলেছেন, তিনি যদি ‘ভুল’ কোনও দাবি করে থাকেন, তা হলে তাঁকে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। তিনি তৃণমূলের একজন ‘সৈনিক’ হিসেবে দলের কাজ করবেন।

টুইটারে কুণাল লিখেছেন, ‘মন্ত্রিত্ব ও দলের সমস্ত পদ থেকে অবিলম্বে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরানো হোক। ওঁকে বহিষ্কার করা হোক। আমার এই বিবৃতি যদি ভুল মনে হয়, তা হলে সমস্ত পদ থেকে আমায় সরানোর অধিকার রয়েছে দলের। তৃণমূলের সৈনিক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাব।’

কুণালের এই ‘চরমপন্থী’ বক্তব্য তৃণমূলের অন্দরের সমীকরণে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কারণ, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থাভাজন হওয়ার পাশাপাশি কুণাল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত। পার্থ সম্পর্কে উপর্যুপরি তাঁর আক্রমণ দেখে দলের একাংশ মনে করছে, অভিষেক দলের অন্দরে একটি ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরি করতে চাইছেন। যারা দলের ভিতরেই বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের সরাতে চাপ দেবে। প্রসঙ্গত, অভিষেক গত ২১ জুলাইয়ের সভায় প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘এটা অন্য তৃণমূল।’’ সেই ‘অন্য’ তৃণমূল গঠনের লক্ষ্যে অভিষেকের প্রথম লক্ষ্য দুর্নীতিহীন নেতাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসা।

ঘটনাচক্রে, মমতা নিজে এখনও পার্থ-কাণ্ডে আইন এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা রেখেছেন। বুধবারেও হিন্দমোটরে একটি কর্মসূচিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘দোষী হলে অ্যাকশন হবে। কিন্তু আইনের চোখে দোষী প্রমাণিত হতে হবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘একটা বড় প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে কিছু ভুল হতেই পারে।’’

কুণালের বৃহস্পতিবারের বিবৃতি থেকে স্পষ্ট, তিনি বিষয়টিকে অতটা ‘লঘু’ করে দেখছেন না। দলের একাংশের দাবি, কুণালের ওই বক্তব্য দলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশের মনোভাবেরই পরিচায়ক।

গত শুক্রবার বর্তমান শিল্পমন্ত্রী তথা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থর নাকতলার বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। প্রায় ২৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শনিবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। আপাতত ১০ দিনের ইডি হেফাজতে রয়েছেন পার্থ। বুধবার তাঁকে অপসারিত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি তথা তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়েছে বলে ইডির একটি সূত্রের দাবি। প্রসঙ্গত, এসএসসি দুর্নীতি মামলায় মানিকের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে। ইডি তাঁকে একাধিক বার ডেকে পাঠিয়ে জেরা করেছে। বুধবার তাঁকে টানা প্রায় ১৪ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে।

পার্থকে গ্রেফতারের পরে পরেই কুণাল, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে পার্থর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল ও সরকার। তাঁকে মন্ত্রিত্ব ও তৃণমূলের পদ থেকে যে সরানো হচ্ছে না বলেই বার্তা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু রবিবারেই কুণাল পার্থর বিরুদ্ধে সুর চড়া করতে শুরু করেন। তিনি বলেন, অভিযুক্ত যিনিই হোন, তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তকারী সংস্থা (ইডি) ন্যূনতম তথ্যপ্রমাণ আদালতে জমা দিলে তার ভিত্তিতেই কঠোর ব্যবস্থা নেবে দল।

কিন্তু তার পরেও দলনেত্রীর কণ্ঠে তাঁর পুরনো সহকর্মী পার্থ সম্পর্কে খানিকটা সহানুভূতির সুরই শোনা গিয়েছে। অন্যদিকে, পার্থ মন্ত্রিত্ব ছাড়ার প্রশ্নে সটান বলেছেন, ‘‘কী কারণে?’’ যা থেকে স্পষ্ট যে, তিনি নিজে মন্ত্রিত্ব ছাড়ার কথা ভাবছেন না।

পরিুস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে পার্থর ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ২৮ কোটি নগদ টাকা এবং ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা মূল্যের সোনা উদ্ধার হওয়ায়। ওই ঘটনার পরেই কুণাল বলেছিলেন, ‘‘লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা!’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘অত্যন্ত উদ্বেগজনক ছবি। আবার বলছি, যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এটাকে কোনওমতেই আড়াল করার চেষ্টা আমি করব না। এ একেবারেই কাম্য নয়। এটা মাথা হেঁট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা। এত টাকা এক জায়গায় জমিয়ে রাখা আলিবাবার গল্পে দেখা গিয়েছিল! এই ছবি আমাদের পক্ষে গর্বের নয়, কলঙ্কের। গোটা পরিস্থিতিটাই অস্বাভাবিক।’’

তার আগে গত সোমবার অবশ্য নজরুল মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে মমতা বলেছিলেন, ‘‘এমন কাজ কেউ করতে পারে বলে আমি নিজেও বিশ্বাস করি না। ঘটনা না রটনা— সেটার বিচার হবে। বিচারে আইন যা রায় দেবে, আমাদের দল মেনে নেবে। বিচারে যত চরমই শাস্তি হোক, আমরা কোনও হস্তক্ষেপ করব না। মিনিস্টার, এমপি, এমএলএ— তৃণমূল কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না! যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও আই ডোন্ট মাইন্ড!’’ মমতার বক্তব্যে তখন এটা স্পষ্ট ছিল যে, তিনি তাড়াহুড়ো করে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন না।

কিন্তু তার পরেই ঘটনা দ্রুত গড়াতে থাকে। বিপুল টাকা উদ্ধার হতে থাকায় চাপে পড়ে যান তৃণমূলের শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ। সেই চাপই তাঁরা দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দিতে চাইছেন বলে দলের একাংশের বক্তব্য। তাঁরা চাইছেন, পার্থকে যথাসম্ভব দ্রুত মন্ত্রিসভা, দলীয় পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হোক। এমনকি, দল থেকে বহিষ্কারও করা যেতে পারে। তাতে জনমানসে একটা বার্তা যাবে যে, তৃণমূল দুর্নীতির সঙ্গে কোনও আপস করে না। সেই সূত্রেই কুণালের আক্রমণাত্মক টুইট। এখন দেখার, তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্ব এর জবাবে কী বলেন। কী করেন।

যদিও এই টুইটের কিছু সময় পর অন্য একটি টুইটে কুণাল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় তৃণমূল ভবনে দলীয় বৈঠকে ডেকেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকেও সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Kunal Ghosh SSC ED TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE