অক্টোবরেই ছাত্র সংসদের নির্বাচন এক দফা স্থগিত রাখা হয়েছিল। সোমবার সেই ভোট আরও এক বার পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিকাশ ভবনে এক সাংবাদিক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ছাত্র সংসদের নির্বাচন করতে হবে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে।’’ অর্থাৎ দু’দফায় পিছোতে পিছোতে পাক্কা এক বছর মুলতুবি হয়ে গেল ছাত্রভোট। তার থেকেও বড় কথা, ভোট দেওয়ার সুযোগ হারালেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত বর্ষের পড়ুয়ারা। কারণ, মন্ত্রী যখন ভোট করার কথা বলছেন, তত দিনে তাঁরা শেষ পরীক্ষা দিয়ে ‘বিদায়ী’ হয়ে যাবেন!
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়ে কেন এই টানাপড়েন, প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে শিক্ষা শিবিরে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠন এর বিরুদ্ধে সরব তো হয়েছেই। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও প্রশ্ন তুলছেন, দফায় দফায় ভোট পিছোনোর কারণটা কী? আর এক বছর নির্বাচন না-হওয়ায় যে-সব বিদায়ী ছাত্রছাত্রী ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ হারাচ্ছেন, তাঁদের প্রশ্ন, আমাদের কী অপরাধ?
সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। কিছু দিন আগেই পার্থবাবু জানিয়েছিলেন, এ বার কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলেই ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়া তো অগস্টের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তা হলে নভেম্বরে ভোট কেন?
‘‘গন্ডগোল এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি,’’ জবাব শিক্ষামন্ত্রীর।
বিধানসভা নির্বাচন শেষ। দ্বিতীয় দফায় তৃণমূল কংগ্রেসই সরকার গঠন করেছে। এর মধ্যে কোন গন্ডগোলের আশঙ্কা করছেন শিক্ষামন্ত্রী?
সেটা আর খোলসা করেননি পার্থবাবু। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র রাজ্য সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য, কলেজে কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়ায় যেন কোনও রকম বিঘ্ন না-ঘটে। জুন-জুলাইয়ে ভোট হলে তার প্রভাব ভর্তি প্রক্রিয়ায় পড়ত।’’
কিন্তু এই বছর যাঁরা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা যে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তার কী হবে?
স্পষ্ট জবাব নেই শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেত্রীর কাছে। খানিক ধোঁয়াশা কাটানোর চেষ্টা করেছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব বিবেক কুমার। তিনি জানান, অগস্টের মধ্যে স্নাতক প্রথম বর্ষের পড়ুয়ারা ভর্তি হয়ে গেলেও তাঁদের রেজিস্ট্রেশনের কাজ সারতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। অক্টোবরে পুজো। সব দিক ভেবেই নভেম্বরে ভোটের কথা ভাবা হয়েছে।
সাধারণ ভাবে প্রতি বছরই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ছাত্র সংসদের নির্বাচন সেরে ফেলা হয়। ২০১৬ সালেও ওই দু’মাসে ভোট হবে বলেই আশা করেছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু জলঘোলা শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে। পার্থবাবু তখন সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, ছাত্রভোট পিছিয়ে দেওয়া হবে। কারণ হিসেবে বলেছিলেন বিধানসভা নির্বাচন আর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কথা। ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, জুন-জুলাইয়ে ছাত্রভোট হতে পারে। গত ২৬ নভেম্বর উচ্চশিক্ষা দফতর ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে ছাত্রভোট স্থগিত রাখা হচ্ছে।
তার পরেই ঠিক সময়ে নির্বাচনের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। এই দাবিতে গত ৯ জানুয়ারি থেকে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে ৫৪ ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন পড়ুয়াদের একাংশ। শেষ পর্যন্ত আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর হস্তক্ষেপে ঘেরাও ওঠে। ছাত্রছাত্রীদের আশা ছিল, জুন বা জুলাইয়েই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জেলা-ভিত্তিক ছাত্রভোট সেরে ফেলা হবে। কিন্তু এ দিন বিকাশ ভবনে সব উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়ে দেন, জুন-জুলাইয়ে নির্বাচনের কোনও সম্ভাবনা নেই। সমস্ত দিক বিবেচনা করেই নভেম্বর-জানুয়ারিতে ছাত্রভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেই ছেড়ে দিয়েছেন পার্থবাবু।
কলকাতা ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ ছাত্রভোট হয়েছিল ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে। আর প্রেসিডেন্সিতে শেষ নির্বাচন হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। ২০১৪-’১৫ সালের সেই নির্বাচনের পরে ২০১৫-র শেষ থেকে ’১৬-র প্রথম দু’মাসের মধ্যে আবার ভোট হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষা দফতরের সিদ্ধান্তে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটিই প্রায় এক বছর পিছিয়ে গেল। যার জেরে ভোটদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বহু ছাত্রছাত্রী।
সময়ে ছাত্রভোট চেয়ে উপাচার্য ঘেরাওয়ের পথে নেমেছিলেন যাদবপুরের বেশ কিছু পড়ুয়া। এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত শুনে যাদবপুরের ছাত্র সংগঠন ফেটসু-র তরফে স্বর্ণেন্দু বর্মন বলেন, ‘‘নিজেদের ছাত্র সংগঠনকে সামলাতে না-পেরে সামগ্রিক ভোটাধিকারেই হস্তক্ষেপ করছে সরকার। এটা চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। আমরা এই বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলব।’’
এসএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেনরায়ের মন্তব্য, প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের কথা ভাবতে গিয়ে মন্ত্রী শেষ বর্ষের পড়ুয়াদের ভোটাধিকার কেড়ে নিলেন। ‘‘এটা মেনে নেওয়া যায় না। নিজেদের ছাত্র সংগঠনকে সংযত করতে না-পেরে ভোটটাই পিছিয়ে দিয়ে সরকার আসলে নিজেদের অপদার্থতাই প্রমাণ করছে,’’ বলেন ওই ছাত্রনেত্রী।
ছাত্রভোট নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে এ দিনই রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান (রুসা) এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটের সূচনা করা হয়। উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রম নিয়ে নতুন কমিটি গড়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, অনেক পড়ুয়াই একসঙ্গে দু’তিনটি কলেজে ভর্তি হয়ে যান। কিন্তু পরে দেখা যায়, তাঁরা নিজের পছন্দের কলেজেই ক্লাস করছেন। আগে ভর্তি হওয়া কলেজ থেকে তাঁদের টাকা ফেরতের উপরেও জোর দিচ্ছে শিক্ষা দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy