আউশগ্রামে সিপিএমের মিছিল।
গত বিধানসভা ভোটের পরে পুলিশের ‘মদতে’ তৃণমূল দলীয় দফতরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন বাম নেতারা। এমনকী, লোকসভা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে প্রচারে গিয়ে বারেবারে বাধা পাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পাঁচ বছর পরে বৃহস্পতিবার পুলিশের পাহারাতে রায়নার সেহরাবাজারের ওই দলীয় কার্যালয়ের তালা খুললেন সিপিএম নেতারা।
আবার একসময়ের ঢোকা প্রায় নিষেধ হয়ে যাওয়া আউশগ্রামের বেরেন্ডা পঞ্চায়েতের ছয় গ্রামেও এ দিন লাল পতাকা নিয়ে প্রায় হাজার দেড়েক লোকের মিছিল দেখা যায়। নেতারা দাবি করেন, মিছিল যত এগিয়েছে তত লোকেরা স্বেচ্ছায় এসে যোগ দিয়েছেন। আউশগ্রামের সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে বলেন, ‘‘মানুষ ভয়কে সড়িয়ে রেখে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।”
জেলার দু’প্রান্তে এই দু’টি ঘটনার পিছনে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতা— অন্তত বিরোধীরা এমনটাই বলছেন। এ দিন সিপিএম নেতারা জানিয়েছেন, সর্বত্র যাতে বিরোধীরা প্রচার করতে পারে, তার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিশেষ নজর রয়েছে। শুধু তাই নয়, দলীয় দফতর যাতে খোলা যায়, সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে জানালে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। রায়নার সিপিএমের প্রার্থী বাসুদেব খান দফতর খোলার পরে সেখানেই বসে বলেন, “পুলিশের মদতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই দফতরে তালা মেরে দিয়েছিল। বারেবারে এই দফতর খোলার চেষ্টা হলে আক্রমণ নেমে এসেছে। তার মধ্যেও মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমে দলীয় দফতর খুলতে সাহায্য করেছেন।” তাঁর দাবি, সকালে সিপিএমের কয়েকজন ওই দফতরের সামনে গিয়ে দেখেন, দোতলার বারান্দার জানলার কাঁচ ভাঙা, দরজা-জানলাও তথৈবচ। দুপুরে চুপিসারে মূল গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন, পুরো দফতরটাই তছনছ করে রাখা আছে। এরপর দফতরটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে খোলা হয় সেটি।
রায়নায় পার্টি অফিস খোলার পরে দলের নেতা-কর্মীরা।
এ দিন বিকেলে রায়নার প্রার্থী বাসুদেব খান ও খণ্ডঘোষের প্রার্থী অসীমা রায় সেহেরাবাজারের শ্রীধরের ঢাল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে লোকাল কমিটির দফতরের দিকে মিছিল শুরু করেন। মিছিলের শুরু ও শেষে পুলিশের পাহারা ছিল। সিপিএমের অভিযোগ, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরেই সন্ধেয় তৃণমূলের কয়েক শো লোক দলীয় দফতরে হামলা চালায়। সে দিন বাইরে থেকে ভাঙচুর করার পর তালা মেরে দিয়ে চলে যায়। পরে দফায় দফায় ভিতরে ঢুকে দফতরটিকে লন্ডভন্ড করে দেয় তৃণমূল। শুধু তাই নয়, প্রায় সময় দলীয় দফতর খুলে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আড্ডা মারত। স্থানীয় সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন শিক্ষক বংশীবদন কুন্ডুর অভিযোগ, “নির্বাচন কমিশনের দাপট বাড়ায় সেহেরাবাজারে গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের অত্যাচার বন্ধ রয়েছে। তা না হলে বাজারের ভিতর সিপিএমের কোনও কর্মীকে দেখলেই মারধর করে ওরা।” বংশীবাবুকেও বেশ কয়েকবার এবং তাঁর ছেলেকেও তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। সিপিএমের আরও অভিযোগ, সেই সময় থেকে দলের শাখা সংগঠনের দুটি দফতর দখল করে নেয় তৃণমূল। এ দিন দফতরে পতাকা উত্তোলন করার পর সিপিএমের নেতারা দাবি করেন, এই সন্ত্রাসের আবহাওয়াতেও রায়না ও খণ্ডঘোষ সিপিএমের দখলে ছিল। পঞ্চায়েত ও লোকসভায় তৃণমূল ভোট লুঠ করেছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য তথা বিধানসভার প্রার্থী নেপাল ঘড়ুই। তাঁর কথায়, “রায়না মানেই সিপিএম বলে প্রচার ছিল। সেই রায়না এখন তৃণমূলের। সে জন্য সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করে চলেছে।”
আউশগ্রামের শিলুট-বসন্তপুর থেকে সিপিএমের প্রার্থী বাসুদেব মেটে মিছিল শুরু করেন। মিছিল যত এগিয়েছে লোক তত বাড়তে থাকে। মিছিলটি বিজয়পুর, কালীদহ, বেলুঠি হয়ে বেরেন্ডা ফুটবল মাঠে শেষ হয়। পাঁচ কিলোমিটার হাঁটার পর সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে বলেন, “অনেকেই ভয়ে আজ বের হতে পারেননি। এই মিছিল দেখে তাঁরা সাহস পাবেন।” সিপিএমের অভিযোগ, ২০১১ সালের পর বারবার ওই সব এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচী নেওয়া হলেও তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে তাঁদের পিছিয়ে আসতে হয়। সে কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো বটেই, লোকসভা নির্বাচনেও ওই সব গ্রামে সিপিএমের পা পড়েনি। এ দিন অবশ্য কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়েই যৌথ মিছিল হয়। দলের জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য মজুমদার বলেন, “যে প্রশাসন কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে থাকত, নির্বাচন কমিশনের দৌলতে সেই প্রশাসনকে টোকা মারতেই জেগেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy