ভিক্ষা মা-বাবার সঙ্গে অর্ণব। নিজস্ব চিত্র নিজস্ব চিত্র
সম্প্রীতির অনন্য নজির গড়লেন রামপুরহাটের দুই ধর্মে বিশ্বাসী দু’টি পরিবার। ধর্মের বেড়া ভেঙে বন্ধুর ছেলের উপনয়নে ভিক্ষা মা, বাবা হলেন এক মুসলমান দম্পতি। তারাপীঠ-সহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন মন্দিরে পুজোও দিলেন নতুন করে পাওয়া সন্তানের মঙ্গল কামনায়।
ঘটনাটি রামপুরহাট পুর এলাকার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের। বাসিন্দারা জানান, স্থানীয় অভিজিৎ মজুমদারের ছেলে অর্ণবের উপনয়ন ছিল গত বৃহস্পতিবার। নিয়ম অনুযায়ী, তিন দিন সূর্যের মুখ না দেখে রবিবার ভোরে সূর্যার্ঘ্য নিবেদনের পরে মা বা মায়ের মতো কারও কাছ থেকে ভিক্ষা গ্রহণ করার কথা। প্রতিবেশীরা জানান, অর্ণবের মা আলাদা থাকেন। ছেলের উপনয়নে তিনি আসেননি। অভিজিতবাবুর বন্ধু স্থানীয় ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুর রেকিব এবং ওয়াহিদা রহমান নিজেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন সামাজিক এই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই তাঁরা অর্ণবকে সন্তান হিসাবে স্বীকৃতি দেবেন।
রবিবারের সকালটা দুই পরিবারের কাছেই অন্য রকম ছিল। দ্বিজ (শাস্ত্র মতে ব্রাহ্মণ) হওয়ার পরে অর্ণবকে প্রথম ভিক্ষা দিলেন ওয়াহিদা রহমান। আনন্দে আবেগে বুকে জড়িয়ে ধরলেন নতুন সন্তানকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘‘আজ থেকে আমিই কিন্তু তোর মা, আজীবন।’’ খুশি আব্দুর রেকিবও। তিনি বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচ বছর বয়সে অর্ণবের মা ও বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। একরত্তি ছেলেটা খালি মাকে খুঁজত। ওর বাবা সামলাতে পারতেন না, ভেঙে পড়েছিলেন একেবারে। ব্রাহ্মণ সন্তানের উপনয়ন মানে তো পুনর্জন্ম বলা হয়। আমরা ওর এই বিশেষ দিন থেকে নতুন ‘বাবা – মা’ হলাম।’’
ভিন্ ধর্মে বিশ্বাসী বন্ধুর এ হেন ভূমিকায় আপ্লুত অভিজিৎবাবু।
তিনি বলেন, ‘‘আমার খারাপ সময়ে ওঁরা পাশে ছিলেন। দুই পরিবার ধর্মের বাঁধন সরিয়ে অনেক আগেই মিশে গিয়েছিল। আজ একটা সম্পর্ক স্বীকৃতি পেল। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।’’ অর্ণবও খুশি নতুন বাবা-মাকে পেয়ে।
রামপুরহাট শহরে এ রকম সম্প্রীতির নজির এর আগেও দেখা গিয়েছে। বছর দুই আগে এই শহরেই রাম নবমীর মিছিলে রামের রথের সারথী হয়েছিলেন এক মুসলিম ঘোড় সওয়ার। এ ক্ষেত্রেও এক মুসলমান দম্পতি নিজ ধর্মে থেকে হিন্দু ধর্মের সমস্ত বিধি, উপাচার মেনে ভিক্ষা মা, বাবা হওয়াকে সম্প্রীতির এক অনন্য নজির হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy