—প্রতীকী ছবি।
মালদহের কাছে সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদের কাছে সহৃদয় ডাক্তার সহযাত্রিণীর মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও শেষরক্ষা হল না। দিন কয়েক আগেই পদাতিক এক্সপ্রেসের ভিড়ে ঠাসা লোকাল ট্রেনের কামরায় সুস্থ শিশুকন্যার জন্ম দেন কোচবিহারের বাবলি বিবি। কিন্তু রাতের হিমগিরি এক্সপ্রেসে আধা সামরিক বাহিনীর কনস্টেবল ইন্দু দেবীর প্রথম সন্তানকে প্রসবের পরে বাঁচানো গেল না।
এই চেষ্টায় তবু জড়িয়ে গিয়েছে কলকাতায় এমডি পাঠরত তরুণী হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসকের সহৃদয়তা। শনিবার গভীর রাতে অসহ্য প্রসব বেদনয় ইন্দু তাঁর পাশে পান রুবিনা বশির নামের মহিলাকে। শিশুটি নির্দিষ্ট সময়ের দু’মাস আগে জন্মায়। নবজাতককে মোরাদাবাদ স্টেশনে নামানো হলেও তাকে অক্সিজেন দিতে দেরি হয়েছিল বলে মনে করছেন শিশুর বাবা ললিত কুমার। তাঁর অভিযোগ, ‘‘সরকারি হাসপাতালেও অক্সিজেন না-থাকায় আমাদের বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। আর একটু আগে বাচ্চাটাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া গেলে সে হয়তো বেঁচে যেত।’’ ইন্দু ও ললিতের বাড়ি জম্মুতে। মোরাবাদাবাদের হাসপাতালে প্রথম সন্তানকে হারানোর পরে এ দিন বিকেলে গাড়িতেই তাঁরা জম্মু রওনা হয়ে যান।
নবজাতককে নিয়ে দম্পতি মোরাদাবাদে নেমে গেলেও রুবিনা ফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি কাশ্মীরের তাঙ্গমার্গের মেয়ে। কলকাতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিয়োপ্যাথিতে এমডি করছেন। বারামুলার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত। কিন্তু চাকরির ফাঁকে কলকাতায় স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ নিচ্ছেন। ইদ উপলক্ষে হিমগিরিতেই
বাড়ি ফিরছিলেন রুবিনা। সঙ্গে তাঁরও চার বছরের ছোট্ট ছেলে। রুবিনা বলছিলেন, ‘‘রোজার উপোসে একটু ক্লান্ত ছিলাম। ওই রাতে আমার সামান্য বমি হয়। তারপর এগারোটা নাগাদ ঘুমিয়ে পড়ি। এর পরেই কয়েক জনের ঠেলাঠেলিতে বুঝি কিছু একটা করতেই হবে।’’ সম্ভবত রুবিনার নামের আগে ডাক্তার দেখেই তাঁকে ঠেলে তোলেন কয়েক জন সহযাত্রী।
প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় গজ, কাপড়, গরম জল বা অন্য সরঞ্জাম কিছুই ছিল না রুবিনার সঙ্গে। তবু পরিষ্কার কাপড় পেতে আসন্নপ্রসবার শোয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। রুবিনা বলছিলেন, ‘‘ওঁরা আমায় বলেন বাচ্চার প্রসবের সময়ে দু’মাস এগিয়ে এসেছে, বোঝেনইনি। ট্রেনের টিটিই বলছিলেন, ট্রেন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, থামানো যাবে না। আমি দেখি, বাচ্চার মাথা নীচের দিকে। গর্ভবতী মহিলার পাশে থেকে যা করার করি। নাড়ির অংশটিও কাপড়ে জড়িয়ে দিই। বাচ্চার জন্মের পরে মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ ছিল। বাচ্চাকে মা দুধও খাওয়ান। কিন্তু প্রি-ম্যাচিয়োর বেবি বলেই ভয় ছিল। আমি বাচ্চাটিকে মোটা কাপড়ে জড়াই। ট্রেনের এসিও বন্ধ করতে বলি। তা অবশ্য করা যায়নি।’’ রুবিনা বলছেন, চেন টানাটানিতে ট্রেন থেকে কাছাকাছির বড় স্টেশন মোরাদাবাদে পৌঁছতে দেরিও হয়েছিল।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলছেন, ‘‘ট্রেনে এই ধরনের প্রয়োজনে ১৩৯ নম্বরে ফোন করতে হয়। রেল মদত বলে একটি অ্যাপও আছে। এ সব ক্ষেত্রে স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার মজুতও রাখা থাকে। এ ক্ষেত্রে শিশুটির না-বাঁচা দুর্ভাগ্যজনক।’’
রুবিনার কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক গৌতম পালের মতে, ‘‘ট্রেনে এক জন ডাক্তার থাকা এই জন্যই জরুরি।’’ রুবিনা রবিবার বিকেলে কাশ্মীরে যাওয়ার পথে বলছিলেন, ‘‘বার বার বাচ্চাটির বাবার সঙ্গে কথা ফোনে কথা হয়েছে। আমার মন ওখানেই মনে পড়ে।’’ তবে উৎকণ্ঠার আবহে ওই দম্পতির নাম পর্যন্ত জানা হয়নি তাঁর। ডেলিভারি পেশেন্ট এই নামেই ফোনে তাঁদের নম্বর ‘সেভ’ করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy