Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
WB panchayat Election 2023

ভোট ঘোষণার পর সবচেয়ে বড় অশান্তি! ভাঙড়ে গুলি, বোমা, দিনহাটায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর যুদ্ধ

মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দিনভর উত্তপ্ত ভাঙড়। একে অন্যের দিকে আঙুল তুলল শাসক আর বিরোধী দল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ‘সক্রিয়’ পুলিশ। শাসকদলের ‘গোষ্ঠী কোন্দল’কে কেন্দ্র করে অশান্ত দিনহাটাও।

bhangar.

মনোনয়নের চতুর্থ দিনে অশান্ত ভাঙর। ছবি: পিটিআই

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২৩ ০৩:০৩
Share: Save:

পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে অশান্তির অভিযোগ উঠতে শুরু করে। কিন্তু ভাঙড়ে মঙ্গলবার সব কিছু ছাড়িয়ে গেল। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঙ্গলবারই ‘জনসংযোগ যাত্রা’ কর্মসূচি ছিল ভাঙড়ে। তার আগে দিনভর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) এবং তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হল সেখানে। ইটবৃষ্টির পাশাপাশি চলল বোমাবাজি। উঠল গুলি চলার অভিযোগও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করল পুলিশ। ছুড়ল কাঁদানে গ্যাস। শেষে দাবি করল, পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণে’। যদিও ঘটনায় আহত হয়ে চার জন ভর্তি হলেন কলকাতার হাসপাতালে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আহতেরা ভাঙড়ের বাসিন্দা। এই ঘটনায় তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলল আইএসএফ। দাবি করল, মনোনয়ন আটকাতেই এ সব করেছে শাসকদল। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, অভিষেকের কর্মসূচি ভেস্তে দিতেই এ সব করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ মানেননি আইএসএফ প্রধান নওশাদ সিদ্দিকি। এর মধ্যেই তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের ‘ঘনিষ্ঠ’ এক তৃণমূল নেতার গাড়ি থেকে বোমা মেলার অভিযোগ উঠল। আরাবুল তা নিয়ে আঙুল তুললেন সেই নওশাদের দিকেই। যদিও এ সবের মধ্যেই ভাঙড়ে মঙ্গলবার বিকেলে পৌঁছন অভিষেক।

ভাঙড়ে এই হিংসা অবশ্য নতুন নয়। ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকেই দফায় দফায় সেখা‌নে হিংসার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার ভাঙড়-২ ব্লকে আইএসএফ প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র দেওয়ায় এক সরকারি আধিকারিককে মারধরের অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ক্রমে সেই অশান্তি বেড়েছে। মঙ্গলবার তা চরম মাত্রায় পৌঁছয়। ভাঙড়ের এই ঘটনার পাশাপাশি শাসক দলের ‘গোষ্ঠী কোন্দলের’ অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের দিনহাটায়। এখানেও গুলি চলার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল যদিও তা মানতে চায়নি। তবে বিজেপির কটাক্ষ, ক্রমেই প্রকাশ্যে আসবে এ ধরনের ‘কোন্দল’।

বিক্ষিপ্ত অশান্তির দিনেই কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিল, রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। যদিও কমিশন জানায়, স্পর্শকাতর এলাকা এখনও চিহ্নিত করেনি তারা। পঞ্চায়েতে ভোট নিয়ে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে মঙ্গলবারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিরোধী দলগুলিও। মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে সর্বদল বৈঠকে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা। মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়ানোর দাবিও জানানো হয় বিরোধীদের তরফে। তারা ‘হিংসা’র অভিযোগের আঙুল তুলেছে শাসকদলের দিকে। যদিও তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ই এ সব করা হচ্ছে।

দিনভর অশান্তি ভাঙড়ে

মঙ্গলবার বিকেলে ভাঙড়ে পৌঁছেছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জনসংযোগ যাত্রা’। তার আগেই দিনভর অশান্ত ভাঙড়। দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় তৃণমূল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)। অভিযোগ, ইটবৃষ্টি, বোমাবাজির পাশাপাশি গুলিও চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। ছুড়েছে কাঁদানে গ্যাস। ভাঙড় বিধানসভায় দু’টি ব্লক— ভাঙড়-১ এবং ২। ভাঙড়-১-এ ছিল অভিষেকের কর্মসূচি। ভাঙড়-২ ব্লকের বিডিও অফিসে আগে থেকেই আইএসএফ এবং বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা ছিল। নেতৃত্বে আইএসএফ প্রধান নওশাদ সিদ্দিকি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ নওশাদের নেতৃত্বে মিছিল করে দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা ভাঙড়-২ বিডিও অফিসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ওই মিছিল বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকায় পৌঁছনো মাত্রই তৃণমূলের একদল কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে আইএসএফের ঝামেলা শুরু হয়। তৃণমূলের দাবি, আইএসএফ কর্মীরাই তাদের উপর প্রথম হামলা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সেই সময় বোমাবাজি হয়েছে। গুলির শব্দও শোনা গিয়েছে। তৃণমূলের দাবি, তাদের নেতা আরাবুল ইসলাম, হাকিমুল ইসলামের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বোমা। পাশাপাশি, ভাঙচুর করা হয় বহু গাড়ি ও বাইক। আরাবুল পরে জানান, ভাঙড়কে অশান্ত করতেই মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসেছিলেন নওশাদ। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘আজ প্রমাণিত, নওশাদ এক জন দুষ্কৃতী।’’ আইএসএফ যদিও দাবি করেছে, তৃণমূল ‘পরিকল্পিত ভাবে’ অশান্তি তৈরি করেছে। নওশাদ জানিয়েছেন, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন পেশ করতে না পারেন, তাই এ সব করা হয়েছে। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ মানেনি। নওশাদের দিকে আঙুল তুলে ক্যানিং (পূর্ব)-এর বিধায়ক তথা ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা শওকত মোল্লা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’ কর্মসূচি বাতিল করতেই সমাজবিরোধীদের একত্রিত করে পরিকল্পিত ভাবে মঙ্গলবার হামলা করেছে আইএসএফ। নওশাদ যদিও জানিয়েছেন, সে রকম করার হলে ভাঙড়-১ ব্লকেই মনোনয়ন জমা করতেন তাঁরা। কারণে, সেখানেই ছিল অভিষেকের কর্মসূচি।

ভাঙড়ের গুলিবিদ্ধ কলকাতায়

মঙ্গলবার ভাঙড়ের হিংসায় জখম হয়ে চার জন কলকাতার আরজি কর হাসপাতালেই ভর্তি। তাঁদের মধ্যে এক জনের গুলি লেগেছে। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, আহত চার জনই ভাঙড়ের বাসিন্দা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুলিবিদ্ধ যুবকের নাম বাহাউদ্দিন মোল্লা। মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি ভাঙড়ের দক্ষিণ বামুড়িয়ার বাসিন্দা। বাহাউদ্দিনকে ‘ট্রমা অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে’ ভর্তি করানো হয়েছে। বাহাউদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি ভাঙড় বাজারে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। অন্য দিকে, আজিবুর রহমান মোল্লা, ওহিদুল মোল্লা এবং মোস্তাফা মোল্লা নামে অন্য তিন জনকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, তাঁরা ভাঙড়ের শ্যামনগরের বাসিন্দা।

গাড়ির ড্যাশবোর্ডে বোমা

অশান্ত ভাঙড়ে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম-ঘনিষ্ঠ এক জনের গাড়িতে বোমা পাওয়া গিয়েছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে খবর, যে গাড়িতে বোমা মিলেছে, তার মালিকের নাম বাঁকি গাজি। তিনি তৃণমূল নেতা এবং এলাকায় আরাবুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অভিযোগ ওঠার পরেই আরাবুল দাবি করেছেন, এটা আইএসএফের কাজ। যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে আইএসএফ। তাদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা গাড়িতেই বোমা মজুত করেছিলেন। আরাবুলের অভিযোগ, এই কাজ ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকির বাহিনীর। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়ির ড্যাশবোর্ডে একটি বোমা রেখে কে যাতায়াত করে! বোমা থলে কিংবা ব্যাগে নিয়ে যাওয়া হয়।’’ এর পর তিনি পুরো ঘটনার জন্য আইএসএফকে দায়ী করেন।

দিনহাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল

কোচবিহারের পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থিতালিকা এখনও ঘোষণা করেনি তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে কে টিকিট পাবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠল দিনহাটার কুর্ষামারী এলাকায়। অভিযোগ, মনোনয়ন কে পাবেন, তা নিয়ে ঝামেলায় দলের এক গোষ্ঠীর লোকজনকে লক্ষ্য করে অন্য গোষ্ঠী গুলি চালায়। তৃণমূল অবশ্য এই ঝামেলার কথা স্বীকার করেনি। গুলি চলেনি বলেই দাবি করেছে তারা। যদিও পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, গুলি চলেছে। এই ঘটনায় এক জন আটক হয়েছেন বলেও খবর। স্থানীয় তৃণমূল অঞ্চল সভাপতি দীপক সেন বলেন, ‘‘এখানে সবাই তৃণমূল। আর কোনও দল নেই। তাই সবাই বলছে, ‘আমায় টিকিট দিন। আমায় টিকিট দিন।’ আমি অঞ্চল সভাপতি। আমার কাছেও অনেকে আবেদন করেছেন। এ নিয়ে গন্ডগোলের কিছু নেই।’’ বিজেপি যদিও পাল্টা আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। বিজেপির জেলা সভাপতি সুকুমার রায় জানিয়েছেন, যত দিন যাবে, মানুষের সামনে তৃণমূলের এই গোষ্ঠীকোন্দল আরও বেশি করে প্রকাশ পাবে।

কোর্ট-নির্দেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী

পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বার বার অভিযোগ করছে বিরোধীরা। তার মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিল, রাজ্যের স্পর্শকাতর এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আদালত তার নির্দেশে জানিয়েছে, ভয়মুক্ত পরিবেশে ভোট করানো উচিত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। অন্য রাজ্য থেকে পুলিশ আনার বদলে কমিশনের উচিত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা। আদালত তার নির্দেশে আরও জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশে কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন বলেই মনে করা হচ্ছে। হাই কোর্ট এ-ও জানিয়েছে, রাজ্য যা বাহিনী চাইবে, তা দেওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। কেন্দ্রীয় বাহিনীর খরচ রাজ্য দেবে না। দিতে হবে কেন্দ্রকেই। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা এখনও রাজ্যে স্পর্শকাতর এলাকা চিহ্নিত করেনি।

আর কী বলল কোর্ট

বিরোধীরা বার বার দাবি করেছে, মনোনয়ন পেশের সময়সীমা বাড়ানো হোক। তা নিয়ে যদিও হাই কোর্ট কোনও মতামত দেবে না বলে জানিয়েছে। তবে কোর্টের নির্দেশ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে করানোর ব্যবস্থা করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। আদালতের আরও নির্দেশ, চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং এনসিসি-র ছেলেদের চতুর্থ পোলিং অফিসারের পরবর্তী কোনও পদে কাজে লাগাতে পারে রাজ্য। আইন মোতাবেক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ব্যবহার করতে হবে। তার বাইরে ভোটের কাজে না-ব্যবহার করাই ভাল। যে সমস্ত বুথে সিসি ক্যামেরা লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন, তা বজায় রেখেছে আদালত। তবে জানিয়েছে, এলাকার রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও নজর রাখতে হবে। ভোটের জন্য আলাদা করে কোনও বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করার প্রয়োজন নেই বলেও জানিয়েছে কোর্ট। রাজ্য নির্বাচন কমিশনই ভোটের পর্যবেক্ষক নিয়োগ করে। সেখানে ডব্লুবিসিএস, আইএএস অফিসারদের নিয়োগ করা হয়। হাই কোর্ট তৃণমূল স্তরের ভোটকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে।

সর্বদল বৈঠক

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মঙ্গলবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে সর্বদল বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস যৌথ ভাবে দাবি করে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন পেশের সময়সীমা বাড়ানো হোক। তাদের অভিযোগ, শাসকদলের ‘হিংসা’র কারণে এখনও বহু প্রার্থী মনোনয়ন জমা করতে পারেননি। তাই এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নেতা কৌস্তুভ বাগচীর দাবি, মনোনয়ন পেশের সময়সীমা আরও অন্তত ১ দিন বৃদ্ধি করা উচিত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। কারণ, লক্ষাধিক মনোনয়ন পেশ বাকি রয়েছে বলে তাঁর দাবি। নির্বাচন কমিশন নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যও। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জানিয়েছি ৫০টি ব্লকে একটাও মনোনয়ন জমা পড়েনি। কমিশনার নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করতে পারলেন না।’’ রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এ সব অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা প্ররোচিত করছে। আমরা, শাসক দল চাই সকলেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। অবাধ এবং শান্তিতে ভোট হোক। কিছু রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে বাংলা এবং সরকারকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করছে।’’

ক্ষমাপ্রার্থী তৃণমূল বিধায়ক

পূর্ব বর্ধমানের বড়শুলে সোমবার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তি হয়। সিপিএম প্রার্থী এবং সমর্থকদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার এক দিন পর বর্ধমান উত্তরের তৃণমূল বিধায়ক নিশীথ মালিক জানালেন, এই ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত। জানান, সোমবার তিনি উপস্থিত থাকলে সংঘর্ষ হত না। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন তিনি। পাশাপাশি দাবি করেছেন, সিপিএম কর্মীরা তাঁর দলের কর্মীদের বাইক ভাঙচুর করেছেন। মঙ্গলবার বর্ধমান-২ বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় তিনি নিজেই উপস্থিত ছিলেন। বিধায়ক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটেছে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ। যদিও তার পরে তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে। দু’পক্ষের গোলমালে বেশ কয়েক জন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে আহত হয় পুলিশও। ওই সংঘর্ষের ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড় থানার পুলিশ। ধৃতদের বাড়ি বড়শুল উন্নয়নী, বৈকুণ্ঠপুর, আনন্দপল্লি এবং মেমারির দাদপুর এলাকায়। ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। কারও কারও বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মুর্শিদাবাদে আক্রান্ত তৃণমূল

বাড়ির সামনেই আক্রান্ত হলেন পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তথা মুর্শিদাবাদ তৃণমূল কংগ্রেসের এক অঞ্চল সভাপতি। অভিযোগ, কয়েক জন দুষ্কৃতী ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয়। আঘাতে মাথা ফাটে ওই তৃণমূল নেতার। আক্রান্ত তৃণমূল নেতার নাম আয়ুব হোসেন। তিনি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের তেঘড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে কংগ্রেসের দিকে। যদিও কংগ্রেস জানিয়েছে, এটা আক্রমণ নয়, প্রতিরোধ। অন্য দিকে, দলীয় ভাবে এখনও প্রার্থী ঘোষণা না হলেও মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে তৃণমূলের জোড়া ফুল প্রতীকে ১৩টি মনোনয়ন জমা পড়েছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক! নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছেন।

তির-ধনুক নিয়ে মনোনয়ন

তির ধনুক নিয়ে মনোনয়ন পেশ করতে যাওয়ার অভিযোগ উঠল সিপিএম কর্মীদের বিরুদ্ধে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের ঘটনা। অভিযোগ, আউশগ্রাম-১ ব্লকে মনোনয়ন দাখিল করতে যাওয়ার সময় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের হাতে ছিল মোটা মোটা লাঠি, তির-ধনুক-সহ অস্ত্রশস্ত্র। তৎপর ছিল প্রশাসনও। বিডিও অফিস চত্বর ও তার আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট দূরত্বে আটকে দেওয়া হয় অতিরিক্ত লোকজনদের। শুধুমাত্র প্রার্থী ও প্রস্তাবকদেরই মনোনয়ন জমা করার জন্য ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ

পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন দাখিল করায় এক সিপিএম প্রার্থীর পরিবারের সদস্যদের বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের বোলপুরের সাত্তর গ্রাম পঞ্চায়েতে। গ্রামের বাসিন্দা আসিয়া বিবি মঙ্গলবার সিপিএমের হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন। অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। বাড়িতে ঢুকে প্রথমে তাঁর স্বামীকে মারধর করা হয়। এমনকি, তাঁর মেয়ে এবং শাশুড়িকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সিপিএম প্রার্থীর দাবি, হামলাকারীরা তাঁকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করার নিদান দেন। তৃণমূল যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

রানিগঞ্জে অগ্নিমিত্রা বনাম পুলিশ

আসানসোলের রানিগঞ্জ ব্লকে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে মনোনয়ন জমা করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। মঙ্গলবার অগ্নিমিত্রার নেতৃত্বে বিশাল মিছিল করে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান। মনোনয়ন কেন্দ্রের বাইরে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। প্রার্থী ছাড়া বাকি কর্মীদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অগ্নিমিত্রাকে ব্লক অফিসে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও মনোনয়ন পেশের কক্ষে পুলিশ প্রবেশ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ। এর পর বিডিও অফিসেই অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন বিজেপি বিধায়ক। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় যে ভাবে বোমা, গুলি চলছে, অশান্তি হচ্ছে, মানুষ মারা যাচ্ছে, তাতে শান্তিতে পুলিশ দিয়ে ভোট করানো যাবে না।’’ তিনি এ-ও দাবি করেন যে, পশ্চিমবঙ্গে নারীদের সম্মান দিতে জানে না রাজ্য সরকার, তাই নিগ্রহ করা হয়েছে তাঁকে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি সৌরভ চৌধুরী যদিও গোলমালের অভিযোগ মানেননি। তিনি জানান, এই ধরনের কোনও অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি।

সিপিএম প্রার্থীর মৃত্যু

মনোনয়ন জমা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এক সিপিএম প্রার্থীর। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের শীতলখুচিতে। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার নাম আয়েশা বিবি। মঙ্গলবার শীতলখুচির খলিসামারি গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা তাঁর ছেলের স্কুটিতে চেপে বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আবার ছেলের স্কুটির পিছনের বসে বাড়ি ফিরছিলেন আয়েশা। বাউদিয়া বাজার এলাকায় একটি ডাম্পার দ্রুত গতিতে এসে তাঁদের স্কুটিতে ধাক্কা মারে বলে অভিযোগ। মা ও ছেলে দু’জনেই রাস্তার এক ধারে ছিটকে পড়েন। আয়েশা বিবির মাথায় আঘাত লেগে দুর্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহত তাঁর ছেলে।

অন্য বিষয়গুলি:

WB panchayat Election 2023 West Bengal Panchayat Election 2023 Bhangar TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy