Advertisement
E-Paper

হারমোনিয়াম দিয়ে দলের বেসুর ধরালেন ডাক্তার সূর্য

আক্ষরিক অর্থে নয় অবশ্য। হারমোনিয়ামের গল্প প্রতিনিধিদের শুনিয়ে রোগ সারানোর ‘প্রেসক্রিপশন’ পেশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর দাওয়াই, হারমোনিয়ামের একগাদা রিড একসঙ্গে চেপে ধরলে সুর বেরোয় না।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে পর্যবেক্ষণমূলক বক্তৃতা দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের। ডানকুনিতে।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে পর্যবেক্ষণমূলক বক্তৃতা দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের। ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৪
Share
Save

আদতে তিনি চিকিৎসক। সুকুমার সেনগুপ্ত, প্রমোদ দাশগুপ্তদের ডাকে ডাক্তারি ছেড়ে চলে এসেছিলেন পার্টির কাজ করতে। এ বার দলের রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে হারমোনিয়াম নিয়ে এলেন চিকিৎসক-নেতা!

আক্ষরিক অর্থে নয় অবশ্য। হারমোনিয়ামের গল্প প্রতিনিধিদের শুনিয়ে রোগ সারানোর ‘প্রেসক্রিপশন’ পেশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর দাওয়াই, হারমোনিয়ামের একগাদা রিড একসঙ্গে চেপে ধরলে সুর বেরোয় না। বেসুরো আওয়াজ হয় শুধু। সিপিএমের সংগঠনের হাল এখন অনেকটা সেই রকম। সরগম হচ্ছে না। তার জন্য সুর-তাল ঠিক করতে হবে। পাড়ায় পাড়ায় ফিরে যেতে হবে শ্রণিভিত্তিক কাজে।

সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে পর্যবেক্ষণমূলক বক্তৃতা করেছেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানেই হারমোনিয়ামের গল্প বলে শ্রেণি-বিন্যাস ঠিক করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশিই বলেছেন, আগামী এপ্রিলে কৃষক, শ্রমিক ও খেতমজুর সংগঠনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ করতে চলেছে সিপিএম। শ্রেণিভিত্তিক সংগঠনকে সামনে রেখে এই উদ্যোগ উপযুক্ত, এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। স্থানীয় স্তরে খেটে খাওয়া শ্রেণির কাছে দলের কর্মীদের ফিরে যেতে হবে, তাঁদের আস্থা অর্জন করতে হবে। সূর্যকান্ত এখন আর দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বা রাজ্য কমিটির সদস্য নন। আগামী এপ্রিলে মাদুরাই পার্টি কংগ্রেস থেকে তাঁর পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকেও অব্যাহতি নেওয়ার কথা। সেই অর্থে দলের পদ ছাড়ার আগে দলের বড় মঞ্চে এটাই তাঁর বার্তা।

ডানকুনিতে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনের প্রতিবেদনের উপরে প্রতিনিধিদের (সম্মেলনে মোট প্রতিনিধি ৫৫৫, মহিলা ১০১) আলোচনা শেষ হয়ে গিয়েছে সোমবারই। তাঁদের বক্তব্যেও এসেছে শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গির কথা, গ্রামীণ গরিব জনতার দিকে নজর দেওয়ার কথা। সূত্রের খবর, মহিলা, ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের প্রতিনিধিরা প্রস্তাব দিয়েছেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শুধু সমালোচনায় আবদ্ধ না-থেকে বামেরা বিকল্পের কথা ভাল করে বলুক। ‘ইতিবাচক ভাষ্য’ নির্মাণ হোক। সম্মেলনের অবসরে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতা তো হচ্ছেই। বিজেপির বিপদ মোকাবিলায় আমাদের আরও কী করণীয়, তা-ও আলোচনা হচ্ছে।’’

সন্ধ্যায় সম্মেলনের মধ্যেই ছিল বিশেষ অধিবেশন। সেখানে কিছু তথ্য-পরিসংখ্যান ধরে রাজ্যে সাম্প্রতিক নানা নির্বাচনে ভোটের ধরন এবং বামেদের বিপর্যয়ের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, রাজ্যে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে এলাকা ধরে ধরে নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে এগোবে সিপিএম। আলোচনায় এসেছে, এখন তৃণমূল ও বিজেপির কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনায় অতীতের সিপিএমের কথা আসে মানুষের চর্চায়। এই ‘অতীত’ থেকে দলকে ‘বর্তমানে’ ফেরাতে হবে। মাঝপথে হাল ছেড়ে না-দিয়ে আন্দোলন ও কর্মসূচিকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা ঠিক করেছি, ‘প্রোজেক্ট বেস্‌ড, মিশন মোডে’ আন্দোলনকে নিয়ে যাব। নাছোড়বান্দা মনোভাবের কথা প্রতিনি‌ধিরাও বলেছেন।’’

গরিব, খেটে খাওয়া শ্রেণির দিকে অভিমুখ রাখার পাশাপাশি দলের সক্রিয়তা বাড়ানোও যে এই সম্মেলনের মূল বার্তা, তার ইঙ্গিতও মিলছে। রাজ্য সম্পাদক সেলিম যেমন উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘‘এত দিন বলতাম প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা। এখন বিজেপি ও তৃণমূল পরিপূরক সাম্প্রদায়িকতায় চলে যাচ্ছে! বোঝা যাচ্ছে, বিভাজনের রাজনীতির জেরে হিংসা রুখতে সরকার কিছু করবে না। আগে কোথাও হিংসা হলে আমরা শান্তিমিছিল করতাম। এর পর থেকে হিংসা তৈরির পরিস্থিতি হলেই আমাদের রাস্তায় নামতে হবে।’’

সম্মেলনের শেষ দিনে আজ, মঙ্গলবার হবে রাজ্য সম্পাদকের জবাবি ভাষণ। তার পরে নতুন রাজ্য কমিটি গঠন এবং শেষে সমাবেশ।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPM

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}