বিপুল বরাদ্দের সমান্তরালে বাড়তে থাকা ধারের বোঝা, রাজকোষ এবং রাজস্ব ঘাটতিকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। মঙ্গলবার বিরোধীশূন্য বিধানসভা কক্ষে ঋণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা দায় চাপালেন বিগত বাম সরকারের উপর। মোদী সরকারের সঙ্গে তুলনা টেনে তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রের কারণেই ভুগতে হচ্ছে রাজ্যগুলিকে।
রাজ্যে আয়ের তুলনায় ব্যয় কিছুটা বেশি। এই অবস্থায় অনুদান প্রকল্প চালাতে রাজ্যের ঋণের বহর নিয়ে সরব বিরোধীরা। মমতার পাল্টা দাবি, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের (জিএসডিপি) নিরিখে ধারের হার যেখানে ৩৭.৯৮%, সেখানে দেশের এই হার ৫৬.১%। রাজ্যের ধারের পরিমাণ ৭ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকা। অথচ কেন্দ্রের তা ২০০ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা! তাঁর মন্তব্য, ‘‘উত্তর দেওয়ার জায়গা রয়েছে? তোমরা অর্থনীতিতে ধস নামালে রাজ্যগুলিকেও ভুগতে হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বাম সরকারের উপহার এই ধার। সেই ধার শোধ করতে এখন ৭৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। সব রাজ্যেই ধার রয়েছে।’’ তবে বিরোধীদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাম সরকারের শেষ আমলে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা ধার ছিল। এখন তা ৭ লক্ষ ৭১ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। অতিরিক্ত এই বিপুল ঋণের দায় কার, তা নিয়ে প্রশ্নতুলছেন তাঁরা।
সদ্য পেশ হওয়া বাজেটে ৪% ডিএ দিলেও বিরোধী কর্মচারী সংগঠনগুলি সমালোচনায় মুখর। মমতার দাবি, ‘‘২০১১ সাল থেকে ২০২৫-২৬ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে এই খাতে। তার পরেও দেনাশোধ, একশো দিনের কাজ আবাস, গ্রামীণ রাস্তা সব করছি।’’
কিছু দিন আগে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দুর্নীতির অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যের বিরুদ্ধে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘আবাস, গ্রামীণ রাস্তা, একশোদিনের কাজে পর পর পাঁচ বছর দেশে এক নম্বর জায়গা পেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। তাই হিংসুটেরা তা বন্ধ করেছে। নির্মলা ভুল কথা বলেছেন। আমরাই ভুয়ো জবকার্ড বাদ দিয়েছি। তার পরেও ১৫৩টা কেন্দ্রীয় দল এসেছিল রাজ্যে।’’
মমতার দাবি, রাজ্য তার বাজেটের ৪৮.২২% খরচ করে মহিলা খাতে, শিশু-খাতে তা ১৪%। সে জায়গায় কেন্দ্রের এই হার যথাক্রমে ৮.৮৬% এবং ২.২৯%।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)