—প্রতীকী ছবি।
আর জি কর-কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাই স্পষ্ট হল বলে মনে করছে বিরোধীরা। তাদের দাবি, এর পরে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী এবং কলকাতা পুলিশের নগরপালের আর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য প্রাথমিক ভাবে ‘সতর্ক’ অবস্থান নিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে তারা চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারেরও ফের আবেদন করেছে।
চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার কয়েক দিন পরে আর জি কর হাসপাতালে রাতে তাণ্ডবের পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লাকে চিঠি দিয়ে ওই হাসপাতালে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের আর্জি জানিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের মঙ্গলবারের নির্দেশের পরে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাকে স্বাগত না জানানোর মতো কিছু নেই। আমার ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়, আর একটাও আর জি কর যাতে না ঘটে, সেই বিষয় মাথায় রেখে অন্তর্বর্তীকালীন পর্যবেক্ষণ রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বলব, ৯ ও ১৪ অগস্ট মধ্যরাতের ঘটনার জন্য আরও কঠিন, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ আমি আশা করছি। করে। গত ১৪ অগস্ট মধ্যরাতে ফিরহাদ হাকিম ও অতীন ঘোষেরা গুন্ডাদের সংগঠিত করে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছেন।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘রাজ্যের পুলিশের উপরে যে সুপ্রিম কোর্টেরও কোনও ভরসা নেই, এই রায় প্রকারান্তরে তা স্পষ্ট করল। এর পরে রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর পদে থাকার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। আমরা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাই। তার আগে কলকাতার নগরপালকে পদত্যাগ করতে হবে।’’ এরই পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর দাবি, ‘‘সন্দীপ ঘোষের (আর জি করের অপসারিত অধ্যক্ষ) গ্রেফতার চাই। ওঁর পলিগ্রাফ হোক। ফোন ঘাঁটলেই দেখা যাবে, কাকে কত বার ফোন করেছেন। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাও কেন এসেছিলেন ওই সময়ে?’’ তৃণমূল কংগ্রেসের পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ এবং নিহত চিকিৎসকের বাড়ির এলাকার স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি মিঠু মজুমদারকেও গ্রেফতার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী নেতা। তাঁর অভিযোগ, সংবাদামাধ্যমের সামনে সরকারের পক্ষে বলার জন্য নির্যাতিতার বাবাকে ‘প্রম্পট’ করেছিলেন তাঁরা, তার পরে পরিবারের কাছে ওকালতনামায় সই করাতে যাওয়া হয়েছিল আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের নাম করে!
সর্বোচ্চ আদালতের বক্তব্য সামনে আসার পরে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষ প্রাথমিক ভাবে বলেছেন, ‘‘রায় বিজ্ঞানসম্মত, ইতিবাচক। সারা দেশে এই ধরনের অপরাধের কথা বলা হয়েছে ও তার প্রেক্ষিতে নির্দেশ হয়েছে। রায় সারা দেশের জন্যই স্বাগত। এই প্রথম ধর্ষণ করে খুনকে মানসিক বিকারের রোগ বলা হয়েছে। রায়ে বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ আছে।’’ রায়ের প্রেক্ষিতে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘কারা কর্মবিরতি চালিয়ে যেতে চাইছেন? এটা কি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের মত, সাহস থাকলে তা প্রমাণ করুন। কতিপয় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নেতা বিপথে চালিত করছেন চিকিৎসকদের। সামগ্রিক ভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ? কীসের প্রতিবাদ?’’ পুলিশ ও স্বাস্থ্য প্রশাসন সম্পর্কিত যে সব প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে, সেই প্রসঙ্গে কুণাল বলেছেন, ‘‘সিবিআই তদন্ত করছে। কলকাতা পুলিশ তদন্তে সব রকম সাহায্য করেছে। এর পরে সরকারি তরফে যা বলার, তা সুপ্রিম কোর্টে সংশ্লিষ্টেরা বলবেন। এ ব্যাপারে আর দলের কিছু বলার নেই।’’
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সরব বাকি বিরোধীরাও। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে তুলোধেনা করা হয়েছে রাজ্যকে। রাজ্যের মান-মর্যাদা কিছু রাখল না অপদার্থ রাজ্য সরকার! শান্তিপূর্ণ মিছিল দমন-পীড়ন চলছিল, প্রতিবাদীদের মধ্যে যাঁদের তলব করছিল পুলিশ, তাঁদের সকলের কাছে এখন ক্ষমা চাওয়া উচিত পুলিশ-প্রশাসনের।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেছেন, ‘‘আমিও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়েছি। এই রকম চিঠি অন্যেরাও করে থাকতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট পুরো বিষয়টির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এই তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হলে সেটা একটা বিরাট জয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy