Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Petrol Diesel Price Hike

কলকাতায় সেঞ্চুরিমুখী তেলের দর, ক্ষোভে সরব বিরোধীরা

জ্বালানির দর এ ভাবে নাগাড়ে বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বিশেষত কোভিড এবং লকডাউনে অনেকেরই যেখানে কাজ গিয়েছে কিংবা কমেছে রোজগার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় ‘সেঞ্চুরি হাঁকানো’ সারা ইতিমধ্যেই। এ বার কলকাতাতেও ‘শতরানের দোরগোড়ায়’ এসে দাঁড়াল পেট্রল।

সোমবার কলকাতায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আইওসি-র পাম্পে প্রতি লিটার পেট্রলের দর আরও ৩৯ পয়সা বেড়ে হচ্ছে ৯৯.৮৪ টাকা। পিছিয়ে নেই ডিজেলও (৯২.২৭ টাকা)। যদিও রবিবারের তুলনায় তার দাম এ দিন আর বাড়েনি। পরিবহণ জ্বালানির পাশাপাশি গত কয়েক মাসে লাফিয়ে দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাসেরও।

জ্বালানির দর এ ভাবে নাগাড়ে বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। বিশেষত কোভিড এবং লকডাউনে অনেকেরই যেখানে কাজ গিয়েছে কিংবা কমেছে রোজগার। এ বিষয়ে প্রায় প্রতিদিন সরব হচ্ছেন বিরোধীরা। কিন্তু তাতে কান দেওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি এখনও। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা যেমন দাম বৃদ্ধিতে রাশ টানেনি, তেমনই উৎপাদন শুল্ক ছেঁটে অন্তত সামান্য স্বস্তি দেওয়ার পথে হাঁটেনি কেন্দ্রও। বরং উল্টে কর (যুক্তমূল্য কর বা ভ্যাট) কমানোর দায় রাজ্যগুলির উপরে চাপিয়ে দিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, অবিলম্বে কর না-কমালে, চলতি সপ্তাহেই হয়তো পেট্রলের ‘সেঞ্চুরি’ দেখার দুর্ভাগ্য হবে শহরবাসীর। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, ঝাড়গ্রাম শুক্রবারই যা দেখে ফেলেছে।

জ্বালানির এই বেড়ে চলা দামের বিরুদ্ধে রবিবার ফের সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট, ‘‘জ্বালানির দাম ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে! বিজেপি সরকারকে দেখে মনে হচ্ছে, তারা সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিতে বাড়তি পরিশ্রম করছে!’’ টুইটে তৃণমূল ‘মোদীবাবু, পেট্রল বেকাবু’ ট্যাগ ব্যবহার করে কেন্দ্রবিরোধী প্রচারে নেমেছে। জেলায় পেট্রলের দর সেঞ্চুরি পেরনোয় কোথাও কেক কেটে, কোথাও সাইকেল মিছিল করে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র মানুষকে শুষছে! তাঁদের সমস্যা, দুর্দশা নিয়ে কোনও ভাবনা সরকারের নেই। কোনও দেশের মানুষকে এত কর দিতে হয় না। বিধানসভায় দাবি করেছিলাম, জ্বালানি তেলকে জিএসটির আওতায় আনা হোক। তাতে কিছুটা সুরাহা মিলত।’’ এক দিকে লোকাল ট্রেন বন্ধ এবং অন্য দিকে পেট্রল, ডিজেলের অস্বাভাবিক দাম। এই দু’য়ের ধাক্কায় বাজারে জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যাচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তবে একই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, পেট্রল-ডিজেল থেকে রাজ্যেরও আয় হয়। কিন্তু রাজ্য করছাড় দিচ্ছে না। বরং, তেলের দামের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দু’দিন আগেই পুলিশের হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে বাম নেতা-কর্মীদের।

এর আগে মোদী সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনরা টুইট করেছেন ১৯৭৩ সালে তেলের দাম কয়েক পয়সা বৃদ্ধির প্রতিবাদে অটলবিহারী বাজপেয়ীর গরুর গাড়িতে চেপে সংসদে আসার ভিডিয়ো। কটাক্ষ, এখন প্রায় প্রতিদিন তেলের দাম বাড়ছে, কিন্তু কেন্দ্রের হেলদোল নেই!

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য জ্বালানির মূল্য নিয়ে হইচইকে নস্যাৎ করে বলেছেন, ‘‘রোজই দাম বাড়ে-কমে। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে ৭৫ ডলারের বেশি হয়ে গিয়েছে। পুরোটাই বিশ্ব বাজারে দাম বাড়া-কমার উপরে নির্ভর করে। সাধারণ মানুষ ব্যবহার করছেন, দামও দিচ্ছেন।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আনাজের দাম তো মোদী সরকার বাড়ায়নি। তার উত্তর দেবে কে?’’ বিরোধীরা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ব্যারেলে ১২০ ডলারের উপরে থাকাকালীন পেট্রল ৮০ টাকা ছাড়ানোতেই এক সময়ে মনমোহন সিংহের সরকারকে নাগাড়ে আক্রমণ করেছেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!

সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ডিজেল দামি হওয়ায় পরিবহণ খরচ বাড়ছে। ফলে বাজারে পণ্যের দরও আগুন হচ্ছে। বাড়ছে যাতায়াতের খরচ। করোনা সঙ্কটের আবহে তাতে আখেরে ভুগছেন মানুষ। বিরোধীদের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমার সময়ে এ দেশে পেট্রল-ডিজেলের দাম কমেনি। কারণ, তখন একাধিক বার উৎপাদন শুল্ক বসিয়ে রাজকোষ ভরার বন্দোবস্ত করেছে মোদী সরকার। অথচ জ্বালানির দর নাগাড়ে বাড়তে থাকার সময়ে ওই কর ছেঁটে সুরাহা দেওয়ার কথা আর মুখে আনেনি তারা।

অন্য বিষয়গুলি:

Petrol Diesel Price Hike
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy