—প্রতীকী চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য যে সময় ধার্য করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়। শুক্রবার যে ৫ দফা দাবি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস, তার মধ্যে এটি একটি। কলকাতা হাই কোর্টেরও পর্যবেক্ষণ, মাত্র ৫ দিন সময় যথেষ্ট নয়। তাই মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন বাড়ানো যায় কি না, এ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বলে খবর। অন্য দিকে, শুক্রবার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার থেকে বাঁকুড়ার ইন্দাস, বিভিন্ন জায়গায় বিডিও অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে যে অশান্তি এবং অভিযোগ উঠে এসেছে তাতে এই প্রশ্ন উঠছে যে প্রশাসনও প্রস্তুত কি না।
আগামী ৮ জুলাই রাজ্যে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে মনোনয়ন প্রক্রিয়া। চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে রবিবার সরকারি দফতরে ছুটি। ফলে মনোনয়ন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে। কিন্তু ভোট ঘোষণার পর দিন থেকেই মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ায় মহাফাঁপরে ব্লক প্রশাসনের একাংশ। এত কম সময়ের মধ্যে মনোনয়ন গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। যেমন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবার। শুক্রবার ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের মনোনয়ন জমা দিতে যান বিজেপি, সিপিএম এবং আইএসএফ প্রার্থীরা। তাঁদের অভিযোগ, মনোনয়ন জমাই নেওয়া হয়নি! তাঁদের এ-ও অভিযোগ, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাইছে শাসকদল। সে বারের মতো বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারে, সেই চেষ্টা করছে শাসকদল। যাতে বেশির ভাগ কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা যায়, তারই কৌশল করছে তৃণমূল। যদিও শাসক শিবির সেই অভিযোগ নস্যাৎ করেছে।
অন্য দিকে, প্রশাসনের যুক্তি, তারা একেবারেই প্রস্তুত হওয়ার সময় পায়নি। মনোনয়নপত্র জমা না নেওয়া নিয়ে ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকের বিডিও সুবীর দাস বলেন, ‘‘গতকালই (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনের নোটিস দেওয়া হয়েছে। সব কিছু ব্যবস্থা করতে একটু তো সময় দরকার।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। যত তা়ড়়াতাড়ি সম্ভব মনোনয়নপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
অন্য দিকে, শুক্রবার সকাল থেকেই বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় পঞ্চায়েত প্রার্থীদের দেখা গিয়েছে প্রবল দাবদাহ উপেক্ষা করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু প্রশাসনের ‘গাফিলতি’তে তাঁরা মনোনয়ন জমা করতে না পারায় হতাশ বলে জানান। মনোনয়নের কাগজ না পৌঁছানোয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে, এই খবর পৌঁছতেই বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র ছুটে যান ইন্দাস বিডিও অফিসে। সেখানে বিক্ষোভ দেখিয়ে রাস্তায় বসে পড়েন তিনি। সৌমিত্র বলেন, ‘‘প্রশাসনিক গাফিলাতির কারণেই আমাদের দলের প্রার্থীরা আজ (শুক্রবার) মনোনয়ন জমা করতে পারেননি। পরিকাঠামো এবং আগাম প্রস্তুতি না থাকলে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন ঘোষণার কী প্রয়োজন ছিল? উঠল বাই তো মক্কা যাই, এই ভাবনায় বিশ্বাসী রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের শাসকদল বিরোধীদের ঠেকানোর যত চেষ্টাই করুক না কেন, কোনও ভাবেই ঠেকাতে পারবে না। আমরা সব দিক থেকে প্রস্তুত।’’ তবে এই ঘটনার পুরো দায় প্রশাসনের দিকে ঠেলে শাসকদলের দাবি, মনোনয়ন ফর্ম সংক্রান্ত বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত। তা নিয়ে রাজনৈতিক দলের কিছু বলার নেই।
এর মধ্যে আদালতের পর্যবেক্ষণের পর রাজ্য নির্বাচন কমিশন মনোনয়ন জমা দেওয়ার তারিখ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বসেছে বলে খবর। তবে এখনই এ নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ।
মনোনয়ন নিয়ে আদালতে বিরোধীদের আর্জি:
আদালতে বিজেপির আর্জি ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য যে ৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে, তা বাড়িয়ে অন্তত ১২ দিন করা হোক। অবাধ, স্বচ্ছ, শান্তিতে ভোট করার লক্ষ্যে নজরদারির জন্য অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতি বা বিশেষ অফিসার বা বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হোক। কমিশনের সদর দফতরে অথবা অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নির্বিঘ্নে ভোট পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন।
বিজেপির এ-ও আর্জি, সমস্ত বুথেই সিসিটিভি নজরদারি থাকতে হবে। বিশেষ অফিসারের তত্ত্বাবধানে গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের ভোট গণনা করার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এই ভোটের কাজে রাজ্য সরাকারের চুক্তিভিত্তিক কর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ারকে দূরে রাখতে হবে। এ ছাড়াও বিচারাধীন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত এমন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের ভোটের কাজ থেকে দূরে রাখা হোক। গণনা কেন্দ্র থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিক আদালত।
অন্য দিকে, নির্বাচন কমিশনের ভোটের বিজ্ঞপ্তিরই খারিজ চেয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিন থেকে ভোট গণনা পর্যন্ত তারা কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের অফিস অথবা জেলাশাসকের দফতরে মনোনয়ন গ্রহণ করা নিয়ে কমিশনকে নির্দেশ দিক আদালত। শুক্রবার হলফনামায় এমনই দাবি ছিল হাত শিবিরের।
মনোনয়ন নিয়ে হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ:
দু’টি জনস্বার্থ মামলায় নির্বাচন স্থগিত বা নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর বাধা দেওয়ার আর্জি করা হয়নি। মামলকারীরা তাঁদের আইনি অধিকার নিয়ে আদালতে এসেছেন। তাঁরা অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন। তাই মনোনয়ন, ভোটগ্রহণ এবং গণনা পর্যন্ত শান্তি যাতে বজায় থাকে আদালত নিশ্চিত করবে। প্রাথমিক ভাবে আদালতের মনে হয়েছে, মনোনয়নের জন্য কমিশন যে সময় বেঁধে দিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। এই কম সময়ে তড়িঘড়ি মনোনয়নের সিদ্ধান্ত কমিশনের বিবেচনা করে দেখা উচিত। এ নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘‘অগস্টের শেষ পর্যন্ত এই পঞ্চায়েতের মেয়াদ রয়েছে। তাই হাতে সময় থাকছে। কমিশনের উচিত, দেখেশুনে মনোনয়নের জন্য আরও কিছুটা সময় দেওয়ার। কারণ, সশরীরে মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন হয়।’’ তবে সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানি রয়েছে আগামী সোমবার।
মনোনয়নের প্রথম দিনেই অশান্তি:
যাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে যাবেন, আদালত তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তিত। শুক্রবার যে ছবি দেখা গিয়েছে, তা চিন্তারই বটে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিনে মুর্শিদাবাদের রানিনগরে ঝামেলা হয়েছে। বামেদের অভিযোগ, তাদের মনোনয়ন দিতে দেয়নি তৃণমূল। এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রথম দিনেই অশান্তির অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানে। কাঠগড়ায় শাসকদল। শুক্রবার জেলার রায়না ১ নম্বর ব্লকে বিজেপি প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
মনোনয়নের প্রথম দিনে খুন:
পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নের প্রথম দিনেই রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগ মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে। গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক কংগ্রেস কর্মীর। আহত হয়েছেন ৩ জন। স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যায় খড়গ্রামের রতনপুর নলদীপ গ্রামে খুন হয়েছেন ফুলচাঁদ শেখ (৪২)। তিনি স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী হিসাবেই পরিচিত। সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে কোলে থাকা ছেলেকে আছড়ে ফেলে পর পর ৬ রাউন্ড গুলি করা হয় কংগ্রেস কর্মীকে। আঙুল উঠেছে তৃণমূলের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy