ফাইল চিত্র।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর উদ্যোগের প্রবল সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের পথ আরও প্রশস্ত হবে। শিক্ষায় নিয়োগে দুর্নীতি ঘিরে রাজ্য যখন সরগরম, সেই সময়ে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) বা বিলে সম্মতি দেওয়ার প্রশ্নে রাজভবনের সঙ্গে ফের নবান্নের সংঘাত বাধতে পারে এবং তার জেরে মানুষের নজর ঘোরানোর চেষ্টা হবে বলেও বিরোধীদের অভিযোগ।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষা কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। তাই রাজ্য এত সহজে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবে না।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্য ও একাধিক নিয়োগ কেলেঙ্কারি থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিজেদের স্বাধীন অঙ্গরাজ্য ভাবতে শুরু করেছে এই সরকার।’’
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এপাং ওপাং ঝপাং, নবান্ন থেকে উপাচার্যদের মাথায় ড্যাং ড্যাং! এই সিদ্ধান্ত হাস্যকর এবং দুর্ভাগ্যজনক। শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও কলুষিত করার উদ্যোগ, সীমাহীন চাটুকারিতার ফসল! রাজ্যপালকে নিয়ে সরকারের যদি সমস্যা হয়ে থাকে, তা হলে কোনও শিক্ষাবিদকে আচার্যের দায়িত্ব দেওয়া যেত। নিরলস সাহিত্য সাধনার জন্য বাংলা আকাডেমির পুরস্কার পাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজেকেই এখন সর্বোচ্চ শিক্ষাবিদ মনে করছেন?’’ তাঁর আরও কটাক্ষ, ‘‘যাঁর জাল ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে এত বিতর্ক ছিল, তাঁর হাত খেকেই এখন পড়ুয়াদের ডিগ্রির শংসাপত্র নিতে হবে!’’
কংগ্রেস সাংসদ তথা অধ্যাপক প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, ‘‘আচার্য হিসেবে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্যে এখন রাজ্যপালের হাতে কার্যত নেই। শিক্ষা দফতরের কথাই তাঁকে কার্যত মানতে হয়। আগেই এই বিষয়ে আইন সংশোধন হয়েছে। এ বার আচার্য পদেই মুখ্যমন্ত্রী বসতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী যে হেতু কোনও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, আচার্য হিসেবে তাঁর কোনও সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক স্বার্থের কথা উঠবে না?’’
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আচার্য হওয়ায় আপত্তি থাকলে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর আচার্য হওয়ার ক্ষেত্রেও একই রকম নীতিগত প্রশ্ন ওঠা উচিত। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বিশ্বভারতী ছাড়া আর কোথাও প্রধানমন্ত্রীর আচার্য থাকার উদাহরণ হাতের কাছে নেই। বিশ্বভারতীর ক্ষেত্রে কবিগুরুর সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর সম্পর্কের সূত্রে এমন একটা প্রথা চালু হয়। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা আচার্যের হাতে নেই। কার্যনির্বাহী কমিটির মত নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রপতির দফতর। রাষ্ট্রপতি সেখানে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকেন। বিশ্বভারতীর কমিটিতে থেকে আমি নিজেই বিষয়টা দেখেছি।’’ সিপিএম নেতা সুজনবাবুরও বক্তব্য একই।
তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায়ের প্রত্যুত্তর, ‘‘শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি, দলীয় রাজনীতির প্রভাব নিয়ে বাম, বিজেপির কথা বলার অধিকার নেই। বাম জমানায় দলীয় ক্যাডার নিয়োগ সর্বজনবিদিত। বিজেপিশাসিত রাজ্যে ব্যাপম কেলেঙ্কারি দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেইসঙ্গে শিক্ষায় গৈরিকীকরণ এ তো এখন প্রমাণিত সত্য সারা দেশে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy