Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
SSKM

ছক্কা হাঁকাতে জানি, ভয় কী!

আর হাসপাতালে এসে যখন জানলাম, আমিই প্রথম ভ্যাকসিনটা পাব এখানে, ভাবলাম ‘এর থেকে বড় গর্ব আর কী হতে পারে!’

এসএসকেএম হাসপাতালে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে রাজা চৌধুরীকে। পাশে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র

এসএসকেএম হাসপাতালে প্রতিষেধক দেওয়া হচ্ছে রাজা চৌধুরীকে। পাশে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:১৪
Share: Save:

শুক্রবার রাতে ফোনটা এসেছিল হাসপাতাল থেকে। বলা হল, ‘প্রথম দিন ভ্যাকসিন নেওয়ার তালিকায় আপনার নাম রয়েছে। সকালেই চলে আসবেন।’ সেই মতো, শনিবার ভোরেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। সাতসকালে তো মেট্রো চালু হয় না। তাই বাসে চেপেই শ্যামবাজারের বাড়ি থেকে চলে এসেছিলাম নিজের কর্মক্ষেত্র— এসএসকেএম হাসপাতালে। মনে মনে শুধু বলছিলাম, ‘‘কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে যেতেই হবে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমিও না হয় প্রথমেই এগিয়ে গেলাম।’’

আর হাসপাতালে এসে যখন জানলাম, আমিই প্রথম ভ্যাকসিনটা পাব এখানে, ভাবলাম ‘এর থেকে বড় গর্ব আর কী হতে পারে!’ হাসপাতালের ফোন পাওয়ার পরে খবরটা জানিয়েছিলাম বাবাকে। বাবা আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ‘খুব ভাল লাগছে, তুই প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন নিবি। দেখিস, তোর কিছু হবে না।’ আর হবেই বা কেন! দীর্ঘ সাত বছর ধরে এসএসকেএম হাসপাতালে কাজ করছি। শেষ চার বছর ধরে অধিকর্তা স্যারের ঘরে কাজ করছি। চিকিৎসক স্যারদের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রয়েছে। এত দিনে চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা তো হয়েছে। তার থেকেই বুঝে ছিলাম, ভ্যাকসিন নেওয়াটা জরুরি। তার উপর যখন প্রতিষেধক নেওয়ার তালিকায় নাম নথিভুক্ত হল, তার পর থেকে অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় স্যার এবং অন্যরা সব সময়ে উৎসাহ দিয়েছেন।

গত ২২ জুলাই আমার করোনা ধরা পড়েছিল। সেফ হোমে ছিলাম। তার পরে রাজ্য সরকারের এক লক্ষ টাকার বিমাও পেয়েছি। এক সময় ক্রিকেট খেলতাম। তাই জানি ছক্কা হাঁকাতে। মনের সেই জোর থেকেই সব সময় ভাবতাম, করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এগিয়ে যেতেই হবে। সকাল ১০ টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছে, অডিটোরিয়ামের ভ্যাকসিন কেন্দ্রে ঢোকার আগে, পরিচয়পত্র দেখালাম। আমার শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হল। হাত স্যানিটাই‌জ় করে ঢুকলাম ভিতরে। সেখানেও আবার নথি পরীক্ষার পরে, পৌঁছলাম প্রতীক্ষা কক্ষে। তারপরে ডাক পড়ল ভ্যাকসিন নেওয়ার ঘরে। সেখানে গিয়ে বসতেই এলেন, রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আমার হাত ধরে বললেন, ‘তুমি পারবেই।’ এর পরে বাঁ হাতের পেশিতে দেওয়া হল কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন।

আরও খবর: বউবাজারে বৃদ্ধ খুন, মাথায় বাড়ি প্রেসার কুকারের, গলায় ধারালো ছুরির কোপ

আরও খবর: পলাতক অভিযুক্তদের তালিকা চাইল নির্বাচন কমিশন

না, তেমন ব্যথা লাগেনি। সুচ ফোটালে যা হয়, তেমনই অনুভূতি হল। যিনি ভ্যাকসিন দিলেন, তিনি বুঝিয়ে দিলেন, তার পরে কী করতে হবে। এর পরে গেলাম পর্যবেক্ষণ কক্ষে। সেখানে আধ ঘণ্টা বসলাম। একটু জলও খেলাম। চিকিৎসকেরা বলে দিয়ে ছিলেন, খাওয়াদাওয়ায় বিধিনিষেধ নেই। তাই ওই ঘর থেকে বেরিয়ে কেক আর বিস্কুট খেলাম। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, ‘ঠিক আছি তো?’ মনের ভিতর থেকেই উত্তর এল, ‘দিব্য আছি তো। কোনও সমস্যা নেই।’ তার পরে চলে এলাম নিজের কাজের ঘরে। যে দিন প্রতিষেধকের ড্রাই রান হয়েছিল, সে দিনও আমাকে ডাকা হয়েছিল।

প্রথম দিনের তালিকায় নাম রয়েছে, জেনে অনেক পরিচিত-বন্ধু ফোন করছেন। কেউ জানতে চাইছেন, ‘কোন ভয় নেই তো। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই তো!’ কেউ আবার বলছেন, ‘ভাই, তুই তো হিরো।’

‘হিরো’ কি না জানি না। শুধু এ টুকু বলতে পারি, ‘‘আমাকে দেখে হয়তো আগামী দিনে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন।’’

দুপুরে অনলাইনে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা রাজ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া পর্যবেক্ষণ করছিলেন, তখন তাঁর শুভেচ্ছা পেয়েছি। এটাও আমার জীবনে বড় পাওনা। শরীরে কোনও অস্বস্তি নেই। কাজ সেরে দিব্য বাড়ি ফিরলাম। ২৮ দিন পরে দ্বিতীয় ডোজ় নেব। সব শেষে হাসি মুখে সকলকে বলতে চাই, ‘‘হাতে হাত মিলিয়ে লড়াইটা চলুক। করোনা মুক্ত হোক রাজ্য তথা বিশ্ব।’’

(লেখক: চতুর্থ শ্রেণির কর্মী)

(অনুলিখন: শান্তনু ঘোষ)

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM Corona vaccine
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy