Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Baishali Dalmiya

মোট ৩৪ দলবদলুর মধ্যে জয়ী মাত্র পাঁচ! বিধানসভা ভোট শিক্ষা দিয়ে গেল রাজনীতিকে

ভোটের আগে তৃণমূল বিধায়কদের দলে টানাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখেছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু স্বপ্নের ফানুস চুপসে যাওয়ার পরে ভাবাচ্ছে হিসাব।

জিতেন তিওয়ারি, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

জিতেন তিওয়ারি, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশালী ডালমিয়া এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০২১ ১৮:২৭
Share: Save:

মুকুল রায় বিজেপি-তে যোগদানের পর দাবি করেছিলেন, এর পর তৃণমূল ছেড়ে পদ্মে আসার লাইন পড়ে যাবে। তা হয়নি। লোকসভা নির্বাচনের আগে অন্য দলের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বিজেপি-তে যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন। সেই সংখ্যাটা খুব বড় ছিল না। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে আগে বিজেপি-তে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। আর তা মূলত শাসক দল তৃণমূল থেকেই। এঁদের মধ্যে দলের টিকিট না-পেয়ে অনেকে দলবদল করেন। রাতারাতি বিজেপি-র প্রার্থীও হয়ে যান। হিসেব বলছে, মোট ৩৪ জন শেষবেলায় দলবদল করে বিজেপি-র টিকিটে ভোট লড়েছিলেন। এর মধ্যে ২৮ জন তৃণমূলের, সিপিএম-এর পাঁচ আর কংগ্রেসের এক। জিতেছেন মাত্র পাঁচ জন। তৃণমূলের তিন এবং সিপিএমের দু’জন।

দলে দলে দলবদল নিয়ে বিজেপি-তে ভোটের আগে উৎসাহ দেখা গিয়েছিল। বিশেষত, তৃণমূল বিধায়কদের দলে টানাকে ‘বড় সাফল্য’ হিসেবে দেখেছিল গেরুয়া শিবির। কোনও কোনও ক্ষেত্রে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশ বিরোধিতা করলেও ‘যোগদান-মেলা’ নিয়ে উৎসবের মেজাজ ছিল। তবে প্রার্থিতালিকা ঘোষণার পরে জেলায় জেলায় তৈরি হওয়া ক্ষোভ আছড়ে পড়ে কলকাতায় দলের নির্বাচনী দফতরে। স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি মানা হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। কিন্তু নেতারা বলেছিলেন, দল বদলে যাঁরা এসেছেন তাঁদের জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। সেই বক্তব্যে সিলমোহর দিয়েছিলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব।

১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে অমিত শাহের সমাবেশে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি নন্দীগ্রাম থেকে জিতে বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা হয়েছেন। কিন্তু সেই দিন তাঁর সঙ্গে যোগ-দেওয়াদের মধ্যে জিতেছেন মাত্র এক জন। হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডল। তিনি এসেছিলেন সিপিএম থেকে।

যোগদান মেলায় উত্তরবঙ্গের মিহির গোস্বামী, দক্ষিণের দীপক হালদার, জিতেন্দ্র তিওয়ারি— একের পর এক তৃণমূল বিধায়ক যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। সিপিএমের শঙ্কর ঘোষও এসেছিলেন। শঙ্কর শিলিগুড়ি থেকে এবং মিহির নাটাবাড়ি থেকে জয়ী হয়েছেন। আর জিতেছেন পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। তিনি এখন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম আসন থেকে বিজেপি বিধায়ক। বাকি সকলেই হেরেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজীবের সঙ্গে তৃণমূলের প্রবীর ঘোষাল, বৈশালী ডালমিয়া এবং রথীন চক্রবর্তীকে ‘চার্টার্ড বিমানে’ দিল্লি উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে দলে যোগ দিইয়েছিল বিজেপি। তাঁরা কেউই জেতেননি। ২০১৬ সালে ডোমজুড় থেকে তৃণমূলের টিকিটে রাজীব জিতেছিলেন ১ লাখেরও বেশি ভোটে। এ বার বিজেপি-র টিকিটে হেরেছেন ৪২ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে।

হেরেছেন সিঙ্গুরের ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও। সিঙ্গুর থেকে চার বারের বিধায়ক ৮৯ বছর বয়সে দলবদল করেন। পরদিনই হয়ে যান বিজেপি-র প্রার্থী। কিন্তু ভোটে প্রাক্তন ছাত্র বেচারাম মান্নার কাছে ২৫ হাজারেরও বেশি ভোটে হারেন তিনি। দলবদলুদের এই হাল দেখে বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করেছেন, বাংলার রাজনীতিকে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট বড় শিক্ষা দিয়ে গেল। আর তৃণমূলের এক শীর্ষনেতার কথায়, ‘‘রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে দল বদল করলে মানুষ যে তা ভাল ভাবে নেন না, এই ফলাফলে তা স্পষ্ট।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy