অনলাইনে পুজোর নামে প্রতারণার ফাঁদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
করোনার জেরে ভক্তদের জন্য মন্দিরের দরজা বন্ধ। অথবা মন্দির খোলা থাকলেও করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে মন্দিরে যেতে পারছেন না ভক্ত? কুছ পরোয়া নেই। গুগল সার্চ করলেই মিলবে অনলাইনে পুজো দেওয়ার সুযোগ। নির্দিষ্ট অর্থ দিলেই ভক্ত মনোমতো অঙ্কের পুজো দিতে পারবেন। ২৫১ টাকা থেকে শুরু। ঊর্ধ্বে ৫ হাজার ১ টাকা থেকে ১ হাজার ১— নানা অঙ্কের পুজো।
অনলাইন পুজোর এই সুযোগ দেখে আহ্লাদিত হওয়ার আগে জেনে নিন, এটা প্রতারণার নয়া ফাঁদ নয় তো? কারণ তারাপীঠ-কালীঘাট বা দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি তাঁদের এ রকম কোনও অনলাইন পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। যাঁরা দাবি করছেন অনলাইন পুজো দেওয়ার কথা, তাঁরা একই সঙ্গে মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং ভক্তদের সঙ্গে প্রতারণাস করছেন।
তারাপীঠ ডট কম, তারাপীঠ টেম্পল ডট ইন— এ রকমই ওয়েবসাইট। সাইটে ক্লিক করলেই খুলে যাবে তারাপীঠের তারা মন্দিরের বিগ্রহের বিশাল ছবি। তলায় অনলাইন পুজো দেওয়ার নানা রেট। ১৮ অগস্ট কৌশিকী অমাবস্যা। তার রেট আলাদা।
অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে এমনই বিজ্ঞাপন।
আরও পড়ুন: ঢাকা-কলকাতা উড়ান ছাড়লেই প্রথম যাত্রী হব আমি: জয়া আহসান
ক’দিন আগে কলকাতার নামী কিছু রেস্তরাঁর অনলাইনে টাকা দিয়ে হোম ডেলিভারি পেতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছিলেন কলকাতার বেশ কিছু মানুষ। দেখা যায় ওই রেস্তরাঁগুলির অনলাইন অর্ডার বা হোম ডেলিভারির কোনও ব্যবস্থাই নেই। পরে জানা যায় গোটাটাই কুখ্যাত জামতাড়়া গ্যাংয়ের নয়া কারসাজি। শ্যামপুকুর থানার একটি মামলায় জামতাড়া গ্যাংয়ের দুই পান্ডাকে গ্রেফতার করার পর প্রকাশ্যে আসে জামতাড়া গ্যাংয়ের নয়া ফন্দি।
শুধু তারাপীঠ নয়, কালীঘাট এবং দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের নামেও চলছে অনলাইনে পুজো দেওয়া। প্রসাদ দেওয়ার রমরমা কারবারও চলছে। ই-পুজা, ই-প্রসাদ নামের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চলছে অনলাইন পুজো এবং ভক্তদের প্রসাদ দেওয়ার ব্যবসা। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার ফোনে বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণের জন্য আমরা সাধারণ ভক্তদের জন্য মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের এ রকম অনলাইন পুজো দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই।” তারাময়বাবু আরও জানান, তাঁরাও খবর পেয়েছেন, এ রকম কয়েকটি সাইটে অনলাইন পুজোর কথা বলা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মন্দিরের কমিটির মধ্যেই একটি অন্তর্তদন্ত শুরু করেছি। আগে দেখে নিচ্ছি মন্দির কমিটির কেউ এর সঙ্গে যুক্ত আছেন কি না। তার পর আমরা পুলিশকে জানাব।”
কালীঘাট মন্দির কমিটির সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘আমাদের এ রকম কোনও অনলাইন পুজোর ব্যবস্থা নেই। প্রতারণা চলছে মন্দিরের নাম করে। আমি পুলিশকে জানাচ্ছি উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।”
দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটির পক্ষে কুশল চৌধুরীও স্পষ্ট জানিয়ে দেন প্রতারণা চলছে মন্দিরের নাম ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও পুলিশকে কিছু জানাইনি। তবে কোনও ভক্ত যদি আমাদের অভিযোগ জানান, তা হলে আমরা পুলিশকে জানাব।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে ঘনীভূত নিম্নচাপ, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চলবে কালও
যে সাইটগুলি এ রকম অনলাইন পুজোর কথা বলছে তার মধ্যে একটি সাইট আবার জানিয়ে দিচ্ছে যে তাঁরা সরাসরি মন্দির কমিটির অংশ নন। তাঁদের ব্যাখ্যা ওই সংস্থা তাঁদের কর্মী দিয়ে মন্দিরে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই পুজোর প্রসাদ পাঠানো হয় ভক্তদের। অর্থাৎ খাতায় কলমে তাঁদের দাবি, তাঁরা প্রতারণা করছেন না। তারাময়বাবু যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের মন্দিরে নথিভুক্ত সেবায়েতদের মাধ্যমে পুজো দেওয়া হয়। বাইরের একটি সংস্থা কার মাধ্যমে কোথায় পুজো দিচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। আদৌ পুজো দিচ্ছে কি না তারও ঠিক নেই। পুরোটাই প্রতারণা।”
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের নজরেও বিষয়টি এসেছে। ওই বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘এখনও কেউ আমাদের অভিযোগ জানাননি।” এক আধিকারিক বলেন, ‘‘৫০০১ টাকার বিনিময়ে যদি ২০০ টাকার প্রসাদ দেওয়া হয়, তা হলে প্রতারকদেরও লাভ। অন্য দিকে ভক্ত বুঝতেও পারবেন না, তিনি প্রতারিত হয়েছেন।” লালবাজার সূত্রের খবর, পুলিশ খতিয়ে দেখছে এই সাইটগুলো কাদের তৈরি এবং পিছনে কারা আছে। তবে পুলিশের পরামর্শ, নিশ্চিত না হয়ে এ রকম অনলাইন পুজো না দেওয়াই ভাল। তাতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy