রাজ্যের গরু পাচার চক্রের পাণ্ডা এনামুল হক । ফাইল চিত্র।
গরু পাচার চক্র গড়ার আগেও অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। সীমান্তবর্তী থানার একটি মাদক মামলায় তাঁর নামে চার্জশিটও দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়ী এনামুল হক তার পরেই গরু পাচারে নেমে পড়েন এবং দক্ষিণ শহরতলির এক মহিলা বিধায়কের হাত ধরে মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা সীমান্তে গরু পাচার চক্র গড়ে তোলেন বলে দাবি করছেন তদন্তকারীরা।
সিবিআই সূত্রের দাবি, গরু পাচার চক্রে ওই মহিলা বিধায়কই ছিলেন এনামুলের তুরুপের তাস। ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানায় এনামুলের বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় মাদক পাচারের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরে মাদক পাচার বন্ধ করে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর ২৪ পরগনার গরু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন এনামুল।
তদন্তকারীদের দাবি, কলকাতা বন্দর এলাকার এক গরু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ওই মহিলা বিধায়কের সঙ্গে পরিচয় হয় এনামুলের। তাঁকে নিয়ে রাজ্য পুলিশের এক বড় কর্তার কাছে যান ওই মহিলা। সেই বড় কর্তা মারফত মুর্শিদাবাদ ও মালদহ সীমান্তে রাজ্য পুলিশের অফিসারদের সঙ্গে যোগসাজশ গড়ে ওঠে এনামুলের। শাসক দলের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর আলাপ ওই মহিলার মাধ্যমেই। এবং প্রভাবশালী-যোগের সূত্রেই বিএসএফ এবং শুল্ক দফতরের কিছু অফিসারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন এনামুল। ‘‘রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি, পুলিশ এবং বিএসএফের একাংশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জোরেই এনামুল ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনায় গরু পাচার চক্র চালিয়ে যান,’’ বলেন এক তদন্তকারী অফিসার। এনামুল এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন।
সিবিআইয়ের দাবি, গরু পাচারে এনামুলের প্রায় সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন মধ্য কলকাতার বাসিন্দা ওই মহিলা বিধায়ক। গরু পাচারের টাকা বিনিয়োগ করা এবং হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। নানা ভাবে এনামুলকে সরকারি সহায়তা পাইয়ে দিয়েছেন তিনি। এনামুলও পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কাছে প্রণামি পৌঁছে দিতেন যথাসময়ে। গরু পাচারকে ঘিরে কয়েক হাজার কোটি টাকা এ-দিক ও-দিক হয়েছে।
এক সিবিআই-কর্তা জানান, কোচি সিবিআই ২০১৮ সালে গরু পাচার কাণ্ডে জিবু ম্যাথু নামে এক বিএসএফ কমান্ডার ও এনামুলকে গ্রেফতার করেছিল। হেফাজতে থাকাকালীন এনামুলের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে নতুন মামলায় ফের জেল হেফাজতে যেতে হয় তাঁকে।
সিবিআইয়ের ওই কর্তা জানান, গরু পাচার কাণ্ডের তদন্ত হচ্ছে মূলত তিন ভাগে। ১) এনামুলের সঙ্গে বিএসএফ এবং শুল্ক দফতরের কর্তা ও অফিসারদের যোগাযোগ যাচাই। ২) পাচার চক্রের সঙ্গে পুলিশের কর্তা ও অফিসারদের ঘনিষ্ঠতার গভীরতা মাপা। গরু পাচারের টাকা পুলিশ-প্রশাসনের কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, চলছে সেই অনুসন্ধানও। ৩) গরু পাচারে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কী ভাবে টাকার বিনিময়ে সরকারি সহায়তা পাইয়ে দিয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা।
এনামুলের গরু পাচার চক্রে রাজ্য পুলিশের কয়েক জন বড় কর্তা-সহ জনা চল্লিশ অফিসারের নাম তদন্তে উঠে এসেছে বলে দাবি এক তদন্তকারী অফিসারের। অভিযুক্ত বিএসএফ-কর্তাদের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ওই সব অফিসারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তদন্তকারীদের তিনটি দল আসানসোল জেলে গিয়ে নতুন মামলা নিয়ে এনামুলকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পরবর্তী পর্যায়ে রাজ্য পুলিশের অফিসারদের ডাকার প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজনে আদালতে আবেদন করা হবে। পাচার চক্রে যুক্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে সাংসদ, বিধায়ক, অন্য নেতারাও আছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের। তাই আদালতের অনুমোদন নিয়েই পুলিশ অফিসার ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy